<p>নিজ স্কুলের সামনেই বেপরোয়া পিকআপের চাপায় পিষ্ট হলো মিফতাউল জান্নাত নিপার (১১) ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। যশোরের নাভারণের বুরুজবাগান পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ট শ্রেণির ছাত্রী সে। প্রথম শ্রেণি থেকেই প্রতি ক্লাসে প্রথম হয়ে সে এগিয়ে যাচ্ছিল উপরের শ্রেণিতে। নিজে হাতে অসুস্থ মানুষের সেবা করতে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চেয়েছিল।</p> <p>পিকআপের চাপায় ডান পা হারিয়ে ডান হাত ভেঙে হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ বেধে এখন সে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের ২ নং বেডে। মেধাবী এই শিশুটির জীবন বাঁচাতে জরুরিভাবে অপারেশন করে ডান পা হাটুর নিচ থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>আজ বুধবার সকালে যশোর-বেনাপোল সড়কের নাভারণে দ্রুতগামী পিকআপ চাপায় পিষ্ট হয়ে এক পা হারিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নিপার স্বপ্ন পুরণের আশা। সে শার্শা উপজেলার দক্ষিণ বুরুজবাগান এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে।</p> <p>হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়। বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতর নিপা। দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। ডান হাতে ব্যান্ডেজ। বামহাতে লাগানো রক্ত দেওয়ার পাইপ। পরনের নীল ইউনিফর্মে ছোপ ছোপ লাল রক্তের দাগ। শিশুটির মুখের কাছে ঝুঁকে আছেন হতবিহবল বাবা রফিকুল ইসলাম। তার এক হাতে তালপাতার হাতপাখা। অপর হাতে পরম মমতায় মুছে দিচ্ছেন প্রিয় কন্যার চোখের জল। সেই সাথে যেন মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন মেয়ের পা হারানোর বেদনা। মেয়ের যন্ত্রনা কমাতে কি করবেন বুঝতে পারছেন না তিনি।</p> <p>কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি কালের কণ্ঠকে বললেন, সকালে কোন রকম খেয়ে ৭ টা ৩৫ মিনিটে আমার মেয়ে স্কুলে রওনা হয়। বাড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে স্কুল। ভ্যানে করেই সে প্রতিদিন স্কুলে যায়। আজ যে আমার কপালে কি যে হলো। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েটি বড়। ছোট বেলা থেকেই সে খুব মেধাবী। পড়াশোনার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। প্রতি ক্লাসেই সে ফার্স্ট হয়। মেয়েটি আমার ডাক্তার হতে চেয়েছিল। আমার মেয়ের সে স্বপ্ন অনিশ্চিত হয়ে গেল।</p> <p>তিনি আরো বললেন, এমন ঘটনার সাথে যে ড্রাইভার দায়ি তার যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়। যেন তা দেখে অন্যরা এমন বেপরোয়া গাড়ি চালাতে ভয় পায়।</p> <p>বুধবার সকালে যশোর-বেনাপোল সড়কের নাভারণে বুরুজবাগান পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত আরো তিন ছাত্রীকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। </p> <p>দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একই এলাকার সবুজ কুঁড়ি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিপাসহ চার শিক্ষার্থী একটি রিক্সা-ভ্যানে করে তাদের স্কুলের সামনে পৌঁছামাত্রই দ্রুতগামী একটি পিকআপ শিক্ষার্থীদের রিক্সাভ্যানটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে নিপা গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার পরপরই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পিকআপটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় ও যশোর-বেনাপোল সড়ক এক ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখে।</p> <p>যশোর জেনারেল হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগের ডাক্তার আব্দুর রউফ জানান, অপারেশনের মাধ্যমে নিপার ডান পা হাঁটুর নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। সে এখন আশঙ্কামুক্ত। খবর পেয়ে হাসপাতালে নিপাকে দেখতে যান যশোরের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল। তিনি বলেন, নিপার সব ধরণের চিকিৎসার ভার জেলা প্রশাসন বহণ করবে।</p>