<p>কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনের তৃতীয় তলার ছাদ ধসে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল শনিবার একাধিক তদন্তদল অনুসন্ধান করেছে। এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের শুরু থেকেই পরতে পরতে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। প্রভাবশালী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে টাকার বিনিময়ে এ কাজ বাগিয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর প্রকৌশলীর বদলে রাজমিস্ত্রিকে দিয়ে ওই ভবন নির্মাণের তদারকি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।</p> <p>কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মূল ভবন নির্মাণে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ভবন নির্মাণের ঠিকাদার জহুরুল ইসলামের এত বড় কাজ করার সক্ষমতা আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, এই কাজ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ঠিকাদারকে ভারী কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এমনকি ঠিকাদারি প্রতিঠানের কোনো প্রকৌশলীকেও কখনো দেখা যায়নি। শুধু রাজমিস্ত্রি দিয়ে এই বিশাল কাজ চালানো হচ্ছিল। আর গণপূর্তের কর্মকর্তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সব ধরনের অনিয়মে সহায়তা করছিলেন বলেও অভিযোগ করেছে কয়েকজন। সাক্ষ্যদানকারীরা এসব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা।</p> <p>গতকাল দিনভর তদন্ত শেষে ঢাকায় ফিরে গেছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইমরুল চৌধুরী। তিনি মন্ত্রণালয়ের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান। মন্ত্রণালয়ের ডিজাইন ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও পাবনা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ সাহা এ কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন।</p> <p>গতকাল দুপুরে ইমরুল চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাদ ধসে পড়ার কারণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু অনিয়ম ও এই কাজ তদারকি প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তার গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হবে।’</p> <p>অন্যদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পিপিসি) খায়রুল ইসলামসহ দুজন কর্মকর্তাও গতকাল সরেজমিনে তদন্ত করেছেন।</p> <p>প্রকল্প পরিচালক ডা. আশরাফুল ইসলাম দারা বলেন, ‘প্রফেসর নাজমুল ইসলামকে প্রধান করে আমরাও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তাদের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, যে পদ্ধতিতে এই স্থাপনার ছাদ ঢালাই হচ্ছিল, তা দেখে তদন্তকারীরা বিস্মিত হয়েছেন। স্টিলের খুঁটি ও পাত দিয়ে সেন্টারিং করে এ ধরনের ছাদ ঢালাই দেওয়ার নিয়ম থাকলেও জোড়াতালি দেওয়া দুর্বল বাঁশ ও কাঠ দিয়ে কয়েক মাস আগে সেই কাজ সারা হচ্ছিল। হাসপাতালের নির্মাণাধীন অন্যান্য ভবনেও একই ধরনের নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করে কাজ করা হচ্ছে, সেটিও তদন্তকারীরা প্রত্যক্ষ করেছেন।</p> <p>গণপূর্ত সার্কেল কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী এ জে এম শফিউল হান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যা ঘটার তা তো ঘটেই গেছে। এখন নতুন করে কোনো কিছু না হলেই ভালো। সব বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমাদের না জানিয়ে ঢালাই দেওয়ার জন্য আমরাও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’</p>