<p>ভোলার লালমোহন উপজেলার ৯টি ও তজুমদ্দিন উপজেলার ৫টিসহ মোট ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে ভোলা ৩ সংসদীয় আসন। লালমোহন পৌরসভা ও ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪৮৩ জন ভোটার একশত ১৫টি ভোট কেন্দ্রে একাদশ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।</p> <p>এ আসনটি ১৯৭৩ সালে মোতাহার হোসেন মাস্টার ও ১৯৭৯ সালে নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী বিজয়ী হন। তারপর থেকেই তা চলে যায় বিএনপির মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের হাতে। তিনি জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্র হয়ে সব সময় ছিলেন সবার সাথে। তবে তার অবসান হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে। নির্বাচনে আ’লীগ মনোনিত মেজর (অব) জসিম উদ্দিনের কাছে বিএনপির মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ পরাজিত হন। এর পরে এই এলাকা সন্ত্রাসের ঘাঁটি থেকে ফিরে আসতে থাকে শান্তির জনপদ হিসেবে। তবে কিছু আইনি জটিলতার কারণে দুই বছরের মাথায় আসনটি শূন্য হয়ে যায়।</p> <p>পরে ২০১০ সালের উপনির্বাচনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন আ’লীগের মনোনিত প্রার্থী নূরনবী চৌধুরী শাওন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই লালমোহন ও তজুমদিনের উন্নয়নের পথে হাঁটেন এ সাংসদ। সন্ত্রাসের জনপদে রচনা করেন এক শান্তির ইতিহাস। এক সময় সন্ত্রাসের জনপদে আ’লীগের নেতাকর্মীদের জন্য বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভোলা ৩ আসনের সাংসদ নূরনবী চৌধুরী শাওন। তার সাংগঠনিক দক্ষতায় ঝিমিয়ে পড়া লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগকে উপহার দেন এক শক্তিশালী আওয়ামী লীগ।</p> <p>আবারো তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থীকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর আবারো জোরালোভাবে দীর্ঘ দিনের অনুন্নত এলাকার উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেন। তার সাংসদ আমলে লালমোহন ও তজুমদ্দিনের নদী ভাঙন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রায় সাড়ে ১১শত কোটি টাকার সিসি ব্লোকের কাজ করান। এলাকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলে তিনি বিদ্যুতায়ন করেন ও সজিব ওয়াজেদ ডিজিটাল পার্ক স্থাপন করেন। এ ছাড়াও ফায়ার স্টেশন, স্কুল কলেজের নতুন ভবন, অসংখ্য পুল কালভার্ট, উপজেলা কমপ্লেক্সসহ আরো অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেন।</p> <p>দুই উপজেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের সাথে নির্বাচনের মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন শাওন। বিএনপির যে কোনো প্রার্থীকে মোকাবেলায় শাওনকে মনোনয়ন দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প ভাবছেন না এলাকার মানুষ। তবে আওয়ামী লীগের হয়ে বর্তমান সংসদ নূরনবী চৌধুরী শাওন ও সাবেক আ’লীগের সাংসদ মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন, বিশিষ্টি ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার মোবাশ্বের আলী স্বপন, কালমা ইউনিয়নের চ্যেয়ারম্যান মো. আকতার হোসেনসহ নয়জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।</p> <p>এদিকে '৮৬ ও '৮৮ সালের মতো পাঁচ বার নির্বাচিত হওয়া মেজর হাফিজ শেষে হয়ে যান বেসামাল। দাম্ভিকতার জোরে কাউকেই পরোয়া করেননি তিনি। তার বেসামাল অত্যাচার চরম আকারে শুরু হয় ২০০১ সালে যখন পঞ্চম বারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। স্থানীয় বিএনপির অত্যাচারে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদেরকে ঘরে ঘুমাতে দেওয়া হয়নি বছরের পর বছর- এমন অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের।</p> <p>মাছ, গাছ লুটপাট ও ধর্ষণের নিরাপদ জনপদে রূপান্তর করা হয় লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলাকে। আতংকের আরেক নাম হয় মৌমাছি বাহিনীর মতো ডজন খানেক বাহিনী। তাদের ভয়ে তটস্থ হয়ে পরে এলাকার মানুষ, পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে অনেক ইউনিয়ন। ধর্ষণের জন্য পত্রিকার পাতাগুলোতে প্রকাশ পেত বড় বড় শিরোনাম।</p> <p>ভোলা জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ভোলা-৩ আসনের দুই উপজেলায় বিএনপি ২০০১ সালে নির্বাচিত হওয়ার এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫১ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী ধর্ষীত হয়। এতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ।</p> <p>অপরদিকে বিএনপির মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ২০১০ সালের উপনির্বাচনে শাওনের কাছে হেরে যাওয়ার পর আট বছর ধরে লালমোহন ও তজুমদ্দিনে আসেন না তিনি। সাবেক দুই উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান মিয়াকে ও আখতারুজ্জামান টিটবকে বহিস্থকার করে কিছু আত্মীয় স্বজনের দিয়ে নামে মাত্র কিছু কমিটি দিয়ে দল চালাচ্ছেন এমন অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির। উপনির্বাচনের পর থেকেই তিন-ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে ভোলা-৩ আসনের বিএনপি। একদল মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কমিটি অন্য দুটি সাবেক ত্যাগী বিএনপি উপজেলা নেতৃবৃন্দ।</p> <p>নতুন কমিটি থেকেও তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও লালমোহন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিছুল হক মিয়া, আখতারুজ্জামান টিটব, জসিম উদ্দিন, আবুল বশার সেলিম, আবদুল হাই চেয়ারম্যান, আবু ইউছুপ, মাহমুদুল হক চেয়ারম্যান, জাকির চেয়ারম্যান, মোতাহার মৃধা, নাছির উদ্দিন ভুট্টু, জাহাঙ্গীর আলম, অলী হাওলাদার, আলাউদ্দিন চেয়ারম্যান, নওয়াব মেম্বারের মতো অসংখ্য ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানা যায়। তবে সাবেক এ সাংসদ এখন তিনি বিএনপির মূলধারার রাজনীতি থেকে অনেকটা বিচ্যুত হয়ে পড়েছেন এমনটাই দাবি বিএনপির দু'অংশের নেতাকর্মীদের। বিএনপি এখন উপজেলা থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছেন চরভূতা ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক লালমোহন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান টিটব। তবে হাফিজ ইব্রাহিম , আখতারুজ্জামান টিটব, মোস্তাফিজ মিয়া ও রুহুল আমিন বাবলু বিএনপি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বলে জানা যায়।</p> <p>নির্বাচন প্রসঙ্গে তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফখরুল আলম জাহাঙ্গীর কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা মাঠে আছি। কারণ আগে আমাদের নৌকাকে জিতাতে হবে। তা না হলে ২০০১ এর মতো বিভীষিকাময় অবস্থা হবে। ইতোমধ্যে এ আসনের মনোনয়নের বিষয়ে শাওনের পক্ষে একটি মেসেজ পেয়েছি। আগামীকালের মধ্যে লিখিত তথ্য পেয়ে যাব। তবে নৌকার উন্নয়নের জন্য আমরা ভিন্ন কৌশল হিসেবে নারী ভোটারকে প্রধান্য দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। আমাদের এ আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে বিজয় উপহার দিতে পারবো।</p> <p>লালমোহন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান টিটব বলেন, ভোলা ৩ আসনে ২০১০ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আজ আট বছর ভোলাতে আসেন না সে বিএনপির জন্য কি করবেন তা লালমোহন ও তজুমদ্দিনের মানুষ জেনে গেছে। আজ আস্থার জায়গা হিসেবে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে আছি। দুটি মন্ত্রী পদে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ থাকার পরও এ জনপদে তেমন কোনো উন্নয়ন করেননি। এ ছাড়াও তিনি মাইনাস টু ফর্মুলাকারীদের মধ্যে একজন সংস্কারপন্থী। ওনার প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের আস্থা নেই, এজন্য বিএনপি নতুন প্রার্থী চায়।</p> <p>তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।  </p>