<p>স্বামী হারানোর এক যুগ ধরে ষাটোর্ধ্ব বিধবা কুলসুম বেগম দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে অনাহারে অর্ধাহারে জীবন যাপন করছিলেন মান সম্মানের সাথে। নিজের ভিটেমাটি নেই বলে সরকারের দেওয়া আশ্রয়ন প্রকল্পে ঠাঁই নিতে হয়েছে স্বপরিবারে। সমাজে হেয় হবার ভয়ে কারো কাছে হাত পাতার মানসিকতা সাই দেয়নি তাকে। একমাত্র ছেলের সংসারে আশ্রয় নিলেও দু’বেলা খাবার জুটাতে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পথ ছাড়তে পারেনি তিনি। কিন্তু জামায়াত নেতা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম কুতুব উদ্দিনের কলমের খোচায় পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে পেশ করা তালিকায় আত্মসমর্পণকারী মাদক বিক্রেতা হিসেবে দেখানো হয়েছে ওই বৃদ্ধাকে। সেলাই মেশিন দেওয়া কথা বলে প্রতারণা করা হয়েছে তার সাথে। ওই অপবাদ থেকে মুক্তি এবং সুনাম ক্ষুণ্ণকারী চেয়ারমানের শাস্তির দাবি করছেন স্থানীয়রা।</p> <p>বীরগঞ্জের বলদিয়াপাড়া আশ্রায়ন প্রকল্পের উত্তর দিঘী কমিটির সভাপতি আইন উদ্দিন জানান, আশ্রায়ণে বসতি গড়েন কুলসুমের স্বামী আব্দুল মালেক।  হাড়িপাতিল ফেরিয়ালা সংসার চালাতেন তারা। ১১বছর আগ থেকে বিধবা হয়েছে কুলসুম। ৬ মেয়ে সবাই স্বামীর সংসারে চলে গেলে পেশায় দর্জি একমাত্র ছেলে ইব্রাহিমের অভাব অনটনের সংসারে বসে বসে খেতে চায়নি বৃদ্ধা কুলসুম। কৃষিকাজসহ হাড়ভাঙা পরিশ্রমের জীবন জীবিকার পথ আগলে চলছিল বৃদ্ধা বিধবার দিন।  পুরো পরিবার মাঝে মধ্যে অনাহারে কাটালেও খাবারের জন্য কারো কাছে হাত পাতেনি। অবৈধ কাজে জড়ায়নি পরিবারটি। ওদের সম্পর্কে কারো কোন অভিযোগ নেই, বিচার শালিসেও বসতে হয়নি, থানা পুলিশেও রেকর্ড নেই। মাদকতো দূরের কথা বিড়ি সিগারেট পর্যন্ত মুখে দেননি তারা।</p> <p>কুলসুম বেগম জানান, গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থীর কাছে (চাউলের) কার্ডের আবদার করতেন তিনি। কিন্ত ভোট শেষ হলেও তার হাতে বিধবা ভাতার কার্ড তুলে দেননি চেয়ারম্যান মেম্বার। গত মাসের শেষ সপ্তাহে স্থানীয় ঝাড়বাড়ীবাজারে চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিনের সাথে কথা হয় তার। একটা সেলাই মেশিন দেওয়া হবে বলে ২৬ জানুয়ারি গাড়িতে তুলে তাকে দিনাজপুর শহরের বড় মাঠে আনেন ( ইউপি সদস্য) শাহিনা মেম্বার। সেলাই মেশিন তো দেয়নি তাকে মাঠে রেখে ফিরে গেছেন চেয়ারম্যান এবং ওই নারী মেম্বার। অন্যদের সাথে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা তার।</p> <p>জানা গেছে, ২৬ জানুয়ারি ওই মাঠে কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশের আয়োজন করে জেলা পুলিশিং কমিটি। পূর্ণবাসনের জন্য  আত্মসমর্পণকারীর ১৫৭ জন মাদক বিক্রেতা এবং সেবীর বিক্রেতার তালিকা মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) কেএম শহীদুল হকের কাছে তুলে দেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। বীরগঞ্জ উপজেলার তালিকায় ৩ নম্বর সিরিয়ালে দেখতে পাওয়া যায় কুলসুম বেওয়ার নাম। ওই সূত্র ধরে কুলসুমের সাক্ষাৎকার নিতে যান একজন গণমাধ্যমকর্মী। এ সময় বেরিয়ে পড়ে চেয়ারম্যানের প্রতারণার ঘটনাটি। কারণ বুঝতে পারছেন তারা। বদনামের ওই তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য ধর্না দিলেও টারবাহনা করতে থাকেন তারা।</p> <p>বদনাম ছড়ানো প্রতারনায় জড়িত চেয়ারম্যানের বিচারের দাবিতে গত বুধবার ঝাড়বাড়ি বাজারে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচির পালনের জন্য জড়ো হন গ্রামবাসিরা। এসময় বীরগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় তাদের হটিয়ে দেন চেয়ারম্যানের অনুসারীরা। ওই ঘটনায় বিব্রত বোধ করলে বাড়াবাড়ি না করতে কুলসুমের স্বজনদের শাসাচ্ছে পুলিশও। অপবাদের ওই তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহার এবং সম্মানের সাথে বাকী জীবন কাটাতে বৃদ্ধা কুলসুম বেওয়াকে সরকারি সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।</p> <p>অন্যদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় থেকে সটকে পড়েন অভিযুক্ত জামায়াত নেতা চেয়ারম্যান একেএম কুতুব উদ্দিন।</p>