২০২৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১০ লক্ষ মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক সুব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ নিয়ে কাজ করছে জেটিআই ফাউন্ডেশন এর ‘ওয়াশ’ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় জেটিআই ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ, ‘সুজলা- প্রমোটিং ওয়াটার এন্টারপ্রেনারস অ্যান্ড ডিজিটাল ফিন্যান্সিং মেকানিজম ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো পোশাকশিল্প কর্মীদের আবাসিক এলাকায় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এই প্রকল্পের পরীক্ষামূলক ধাপ হচ্ছে, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগ ঝুকি কমিয়ে পাঁচটি ওয়াটার বুথ স্থাপন করা, যার মাধ্যমে পোশাকশিল্প কর্মী ও তার আবাসিক এলাকায় বসবাসরত সকল পেশার মানুষের জন্য নিরাপদ পানির সংস্থান হয়।
এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পটি ঢাকা, গাজীপুর এবং চট্টগ্রামে ১টি করে মোট মোট ৩টি ওয়াটার বুথ চালু করেছে। তার মধ্যে ২টি ওয়াটার বুথে এটিএম কার্ডের ব্যবস্থা আছে, যার কারণে খুব সহজেই এটিএম কার্ডে রিচার্জের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে যেকোন পরিমাণ পানি সংগ্রহ করা যায়।
পোশাকশিল্প কর্মীদের আর্থিক অবস্থার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে প্রকল্প পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসকল বুথের পানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি লিটার পানি ০.৬ – ০.৮ টাকার মধ্যে রাখা হচ্ছে, যা প্রচলিত জার পানির ব্যবসার বাজার মূল্যের এক তৃতীয়াংশ। প্রকল্প থেকে উদ্যোক্তাদের যে আর্থিক সহায়তা করছে তার বিনিময়ে উদ্যোক্তাগণ এই অলাভজনক মূল্যে পানি প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। যার ফলে পোশাকশিল্প কর্মীদের মাঝেও নিরাপদ পানি পান করার আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, মাত্র এক মাসে গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ২টি বুথে প্রায় ৭০০ এর অধিক গ্রাহক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে, যা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। প্রকল্প থেকে এলাকার মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে। যার ফলে মানুষের মাঝে নিরাপদ পানি ব্যবহারের উৎসাহ বেড়েছে।
সুজলা প্রকল্পের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত পানির বুথ গুলোর নিরাপদ পানি উৎপাদনের সক্ষমতা প্রতি ঘন্টায় ১,০০০ লিটার। সে হিসেবে গড়ে দৈনিক ৮ ঘন্টা চললে ৮,০০০ লিটার পানি উৎপাদন সম্ভব। সুজলা প্রকল্পের প্রারম্ভিক গবেষণার তথ্যমতে পোশাকশিল্প কর্মীরা নিজ বাসায় গড়ে দৈনিক মাত্র ২ লিটার পানি পান করে, সুতরাং প্রতিটি পানির বুথ দৈনিক অন্তত ৪ হাজার মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। প্রকল্পটির পরীক্ষামূলক পর্যায়ে এরকম আরও দুইটি বিশুদ্ধ খাবার পানির বুথ স্থাপন করবে।
শিল্পায়নের প্রভাবে সৃষ্ট অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের অপরিহার্য নাগরিক সুবিধা পেতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। অপরিকল্পিত আবাসিক এলাকায় অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা প্রদানের সক্ষমতাও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নেই। এমতাবস্থায় সুজলা প্রকল্পের মতো প্রকল্পগুলো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারের পরিপুরক হিসেবে অবদান রাখছে। এধরণের প্রকল্পের বিস্তার দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য