১৯ নভেম্বর ছিল বিশ্ব টয়লেট দিবস। বিশ্বের ৪২০ কোটি মানুষ- যারা নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন স্যানিটেশনের সুবিধাবঞ্চিত, এই দিন তাদের জন্য উদ্যাপন করা হয় ও বাড়ানো হয় সচেতনতা। সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশনের উপলভ্যতা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ-এর লক্ষ্যে এটি বিশ্বব্যাপী নেয়া একটি পদক্ষেপ।
এই বছর ইউনিভার-এর টয়লেট ক্লিনিং ব্র্যান্ড ডমেক্স উন্নত ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশনের গুরুত্ব এবং জীবন ও পরিবেশ সুস্থ রাখতে এর ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলছে।
ডমেক্স ওয়াটারএইড, ব্র্যাক, ২০৩০ডব্লিউআরজি, ভূমিজ ও ইউনিলিভারের সাথে ১৯ নভেম্বর “নিরাপদ স্যানিটেশনের জন্য আমাদের লড়াই চলছে” শীর্ষক একটি ওয়েবিনার আয়োজন করেছে; যা প্রথম আলোর সাথে ভার্চুয়ালি প্রায় ১.৫ কোটি দর্শকের কাছে পৌঁছে। এই সেশনে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিগণ এসডিজি ৬ অর্জনে উন্নত স্যানিটেশনের গুরুত্ব, উন্নয়নমূলক সংস্থার ভূমিকা ও লাভ সম্পর্কে তদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
ওয়েবিনারে যোগ দিয়েছিলেন পার্থ হেফাজ শেখ, পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, ডঃ মোঃ লিয়াকত আলী, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর, ব্র্যাক, ফারহানা রশীদ, সিইও অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার, ভূমিজ, সায়েফ তানজীম কাইয়ুম, রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর, ২০৩০ডব্লিউআরজি, ওয়াটার জিপি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং জনাব তানজীন ফেরদৌস আলম, মার্কেটিং ডিরেক্টর- হোম কেয়ার, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড।
ডমেক্স কোভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতনতা ও নিরাপদ স্যানিটেশনের গুরুত্ব বাড়াতে ২০২০ সাল জুড়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ডমেক্স, ২০৩০ ডব্লিউআরজি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাথে এক হয়ে ৬৪টি ডিসি অফিসে স্যানিটেশন উন্নয়নের কাজ করেছে। ইউনিলিভার-এর ব্র্যান্ড ডমেক্স সেল্ফ-সাসটেইনিং পাবলিক টয়লেট তৈরি করতে এবং ঢাকা ও খুলনা বিভাগে কমিউনিটি টয়লেট স্থাপনের জন্য ব্র্যাক ও ভূমিজ-এর সাথে কাজ করছে।
এই ওয়েবিনারে পার্থ হেফাজ শেখ, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর মানুষের জন্য আরো উন্নত একটি জীবন নিশ্চিত করার জন্য উন্নত স্যানিটেশনের গুরুত্ব এবং বাংলাদেশে স্যানিটেশন উন্নত করতে ওয়াটারএইড-এর লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “কমিউনিটির ভালো থাকার জন্য স্যানিটেশন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং দেশজুড়ে টয়লেট ও স্যানিটেশন অবস্থার উন্নতি করতে ওয়াটারএইড বদ্ধপরিকর। তবে, গ্রামীণ ও শহুরে পরিবারগুলোর জন্য যথাযথ স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে টেকসই ওয়াশ সার্ভিসের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। একইসাথে এসডিজি-৬ অর্জন করতে আচরণগত পরিবর্তনও একটি প্রাথমিক ও মূল বিষয়।”
ডঃ মোঃ লিয়াকত আলী, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর, ব্র্যাক খারাপ স্বাস্থ্য ও জলবায়ুর জন্য কীভাবে নিম্নমানের স্যানিটেশন দায়ী এবং এই অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “ডিজাইন ও প্ল্যানিং-এর সময় আবহাওয়ার তারতম্য ও পরিবর্তন মাথায় রেখে যত্ন ও নিরাপত্তার সাথে তৈরি ও রক্ষনাবেক্ষণকৃত স্যানিটেশন এই মুহূর্তে দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমরা স্যানিটেশন ওয়েস্টকে মজুদ, পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা ও পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে কী করে কাজে লাগাতে পারি, এখন সময় এসেছে তা চিন্তা করার।”
এসডিজি ৬ অর্জনে সেল্ফ-সাসটেইনিং ওয়াশ মডেলের কথা বলতে গিয়ে মিস ফারহানা রশীদ, সিইও অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার, ভূমিজ বলেন, “স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট শুধু স্বাস্থ্যকর জীবনই নিশ্চিত করে না, মর্যাদাও বয়ে আনে।”
সায়েফ তানজীম কাইয়ুম, রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর, ২০৩০ডব্লিউআরজি, ওয়াটার জিপি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ফেকাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট কেন অত্যন্ত জরুরি তা উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের উন্নয়নশীল শহরগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখতে এর সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট ও স্যানটিশেনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতিকল্পে বিনিয়োগ এখন অত্যন্ত জরুরি, যা আমাদের স্বাস্থ্যসম্মত কমিউনিটি তৈরিতে, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রসারে ও ইকোসিস্টেম সংরক্ষণে অত্যন্ত প্রয়োজন।”
উন্নত দেশগুলোতে উন্নয়নের সঙ্গে নিরাপদ স্যানিটেশনের যোগ রয়েছে বলে জানান হোম কেয়ার ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং ডিরেক্টর তানজীন ফেরদৌস। তিনি বলেন, প্রতিটি ব্র্যান্ডের একটি উদ্দেশ্য থাকে। ডমেক্সেরও একটা দায়িত্ব রয়েছে। সে লক্ষ্যেই ডমেক্স কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি জানান, ঢাকার পাঁচটি কাঁচাবাজারে ভূমিজের সঙ্গে স্যানিটেশন ব্যবস্থার কাজ করছে ইউনিলিভার। এসডিজি অর্জন করতে হলে এখানে প্রচুর কাজ করার সুযোগ আছে। যত দিন না নিরাপদ স্যানিটেশন হচ্ছে, তত দিন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
ওয়েবিনার থেকে জানা যায়- কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশনের কোনো বিকল্প নেই, তাই এর জন্য আরও বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমান স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ না করে পাবলিক টয়লেটকে পরিবেশবান্ধব করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
কেবল সুন্দর সুন্দর টয়লেট বানালেই চলবে না, তার সুন্দর ব্যবস্থাপনাও থাকতে হবে। সেই সাথে স্যানিটেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকেও নজর দিতে হবে এবং নারীবান্ধব ও সমাজের সব ধরনের মানুষের ব্যবহারযোগ্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সবাই মিলে কাজ করলে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
বিশ্ব টয়লেট দিবস প্রসঙ্গে
১৯ নভেম্বর বিশ্ব টয়লেট দিবস, বিশ্বের ৪২০ কোটি মানুষ যারা নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন স্যানিটেশনের সুবিধাবঞ্চিত, এই দিনে তাদের জন্য টয়লেটকে উদ্যাপন করা হয় ও বাড়ানো হয় সচেতনতা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৬: সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশনের উপলভ্যতা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ-এর লক্ষ্যে এটি বিশ্বব্যাপী স্যানিটেশন সংকট মোকাবেলায় নেয়া একটি পদক্ষেপ।
এই বছর, বিশ্ব টয়লেট দিবস ২০২০ পালন করা হচ্ছে টেকসই স্যানিটেশন ও জলবায়ু পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে; যেহেতু আমাদের জলবায়ু বেশ কয়েকটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যেমন- বন্যা, খরা, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি- টয়লেট থেকে সেপটিক ট্যাংক ও পরবর্তীতে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, সর্বোপরি পুরো স্যানিটেশন সিস্টেমের জন্য হুমকিস্বরূপ। স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কোভিড-১৯, কলেরা, টাইফয়েডের মতো মারাত্মক সংক্রামক রোগের বিস্তার প্রতিরোধের চেষ্টায় আমাদের নিশ্চিত করতে হবে টেকসই স্যানিটেশনের পাশাপাশি পরিষ্কার পানি ও হাতধোয়ার সুবিধা।
মন্তব্য