<p>জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) মির্জা আজম হলে ফাহাদ আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে সিনিয়র শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।</p> <p>মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মির্জা আজম হলের গেস্টরুমে শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আচার-আচরণ মিটিং ডাকেন। পরবর্তীতে চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে ডাকা হয়। এ সময় চতুর্থ ও তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আচরণ শেখানো নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করেন। পরে ওই ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষার্থী ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা সিনিয়র দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সমঝোতা হন। </p> <p>পরে রাত ১২টা দিকে তৃতীয় ব্যাচকে ডেকে কেমন কী শেখানো হয়েছে তা জানতে চায় দ্বিতীয় ব্যাচের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। এ সময় তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানায় চতুর্থ ব্যাচের আর ভুলভ্রান্তি করবে না। পরে রাত ২টা দিকে সিনিয়র শিক্ষার্থী অপি, আদর ও সৈকতের নির্দেশে হলের গেস্টরুমে (১০৫ নম্বর) নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফাহাদ আহমেদকে ডাকা হয়। পরে রাতভর মানসিক নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে ভোর রাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফাহাদ আহমেদ। পরে তাকে উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে তার সহপাঠীরা।</p> <p>নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী আব্দুল আহাদ ফাহাদ বলেন, ‘রাত ১১টা ৪০-এর  দিকে তৃতীয় ব্যাচের সিনিয়র বড় ভাইরা আমাকে ডেকে নিয়ে যান এবং আমাকে গালাগাল করা শুরু করেন। এই সময় আমি বলি, আমরা চতুর্থ ব্যাচ কিন্তু বিপ্লবী হয়ে উঠব। এই কথা শুনে সৈকত ভাই আমার ওপর প্রচুর রাগান্বিত হয়ে গালাগাল শুরু করেন। তারপর আমি মাফ চেয়ে রুমে চলে আসি এবং ঘুমিয়ে পড়ি। তারপর রাত ২টায় সৈকত ভাইসহ আরো কয়েকজন সিনিয়র আমাকে ডেকে নিয়ে যান। এই সময় আমাকে ২০-২২ জন মানসিকভাবে অনেক নির্যাতন করেন। তারা গালাগাল, হুমকি-ধমকি ও ভয়-ভীতি দেখান। পরে এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তারপর কী হয়েছে, জানি না।’</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিক্টিমের রুমমেট জানান, ‘রাত ২টা ৩০ মিনিটে মির্জা আজম হলের ৩০৯ নম্বর রুম থেকে সিএসই বিভাগের ফাহাদকে সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৈকত ১০৫ নম্বর রুমে (গেস্টরুম) ডেকে নিয়ে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তারা ফাহাদকে নিজ রুমে অজ্ঞান অবস্থায় রেখে চলে যায়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সিনিয়র শিক্ষার্থী অপি, সৈকত, আদর, আল-আমিন, রিয়াজ, আমজাদ, বেলায়েত, সিফাত ও মারুফ।</p> <p>অভিযুক্তদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক আমজাদ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন ও সদস্য আল সিফাত চৌধুরী।</p> <p>অভিযুক্ত সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুর রহমান আদর বলেন, ‘আমার বিষয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। আমাদের গোপন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে তার অন্য সমস্যায় অজ্ঞান হয়েছে।’</p> <p>অভিযুক্ত মেহরাব হোসাইন অপি বলেন, ‘আমরা সিনিয়র-জুনিয়র একসঙ্গে থাকি, বিভিন্ন কারণে মনোমালিন্য হতে পারে, এমন একটা বিষয়ে মতবিনিময় করেছিলাম। সেদিন রাতে না ঘুমানোর কারণে অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর আমরা তার মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করি।’</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাগিং ও বুলিং কমিটির আহ্বায়ক মৌসুমী আক্তার বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে স্যারের কাছ থেকে শুনলাম, এক শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। এই ঘটনায় আগামীকাল একটি মিটিং ডাকা হয়েছে। এটুকুই শুনেছি।’</p>