<p style="text-align:justify">কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আয়োজনে 'নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক সমাবেশ' থেকে এই সমর্থন জানানো হয়। এ সময় সমাবেশ থেকে হত্যা, গুম, গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করতে এবং আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানানো হয়। </p> <p style="text-align:justify">এ সময় আন্দোলনে নিহতদের 'শহীদ' উল্লেখ করে তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ ছাড়া সমাবেশ থেকে চলমান আন্দোলনে নিহত ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে 'জুলাই হত্যাকাণ্ড' নামে ডাকার জন্য আহ্বান করা হয়। </p> <p style="text-align:justify">সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইদ ফেরদৌস বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আপনারা আপনাদের প্রতিপক্ষ ভাবছেন। সেই শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের খোল নলচে পাল্টে দিতে এসেছে। স্বাধীনতার পর থেকে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রে যে লাগাতার নৈরাজ্য চলেছে, হলগুলোতে যে সুপরিকল্পিত নিপীড়ন চলেছে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের, সেই সব কিছুকে পাল্টে নতুন ইতিহাস লিখবার পথ তৈরি করেছে এই শিক্ষার্থীরা। সেই শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবিকে আমরা সমর্থন জানাই।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রদের মৃত্যুতে যে ব্যক্তি যে প্রতিষ্ঠানের যে পদধারী যে নেতা যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যক্তি যে বিচারসংশ্লিষ্ট লোকের যে শিক্ষকের দায়দায়িত্ব আছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক। আমরা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিকে সমর্থন করি। কিন্তু সবার আগে হত্যা বন্ধ হোক। সবার আগে গুম, অপহরণ বন্ধ হোক।’</p> <p style="text-align:justify">সমাবেশে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হাসিব চৌধুরী বলেন, ‘১৯৬৯ সালে অধ্যাপক শামসুজ্জোহা ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন ফেব্রুয়ারি মাসে। আমরা এখানে যারা জমায়েত হয়েছি, আমরা শহীদ শামসুজ্জোহার উত্তরসূরি। আমাদের যে সন্তানরা, যে ছাত্ররা যে অধিকারের জন্য, যে বৈষম্যহীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, লড়াই করছে তারা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরি। এই লড়াইয়ের ফলাফল কী হবে সেটা ইতিহাসই আমাদের নির্দেশ করছে। আর আমাদের করণীয় কী সেটা ইতিহাস আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা সেই দায়িত্ব নিশ্চয় চালু করব।’</p> <p style="text-align:justify">জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর যে মামলা হচ্ছে, মামলাটা হলো পুলিশের মামলাবাজি এবং মামলাবাজি হলো পুলিশের ব্যবসা। আপনারা এই ব্যবসা বন্ধ করুন। ছাত্রছাত্রীদের অযথা মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘর থেকে বাচ্চাদের ধরে নিয়ে আসতেছেন। মোবাইলে কী ধারণ করা আছে না আছে- পাঁচ কোটি মানুষের মোবাইলে আপনি এই আন্দোলনের ছবি পাবেন। পাঁচ কোটিকে আপনি জেলে দিবেন। জেল বড় করেন। কারণ মোবাইল চেক করলে সবার মোবাইলে আপনারা আন্দোলনের চিত্র দেখবেন। আমি সুস্পষ্টভাবে বলব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দিন। বাচ্চাদের নিজের কাজে ফিরে আসতে, পড়ালেখায় ফিরে আসতে দেন। আর আপনারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুন। স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে থেকে দেশের উন্নয়ন তো দূরের কথা, দেশের মানুষের কাছে কোনো দিন পৌঁছতে পারবেন না।’</p> <p style="text-align:justify">সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সায়মন রেজা, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ নাহিদ নেওয়াজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুদ ইমরান, ঢাবি আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, গ্রীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রীতু শারমিন, স্ট্যাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তামান্না মাকসুদ, ঢাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুনসহ আরো শিক্ষকরা। </p> <p style="text-align:justify">সমাবেশ শেষে শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হয়ে আবারও অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ফিরে আসেন।</p>