<p>জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন ও অর্থ কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্ষদগুলো চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্যদের নিয়ে। দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন মেয়াদোত্তীর্ণ ৮১ সিনেটর। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মো. নূরুল আলম উপাচার্য পদে সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালনকালেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে পূর্ণ দায়িত্ব পেলে বিভিন্ন পর্ষদের নির্বাচনের আয়োজন করবেন। তবে পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের আট মাস পার হলেও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি।</p> <p>প্রায় পাঁচ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, সিনেট, ডিন ও অর্থ কমিটির নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে ডিন, অর্থ কমিটি ও সিনেটের নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যদের মেয়াদও শেষ হয়েছে। তবে এসব পর্ষদে নির্বাচন আয়োজনের জন্য শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় দাবি উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সিন্ডিকেটের ১৯টি পদের মধ্যে সাতটি শূন্য, অন্য সাতটি মেয়াদোত্তীর্ণ।</p> <p>পদাধিকার বলে তিনটি পদে রয়েছেন নিয়মিত সদস্য হিসেবে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। আর চলতি বছরের ২১ মার্চ নতুন দুজনকে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেন রাষ্ট্রপতি। এই পাঁচজনের সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সাতজন অর্থাৎ মোট ১২ জনকে নিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেট।</p> <p>রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদে কেউ না থাকায় সিন্ডিকেটের এই পদটি খালি রয়েছে।</p> <p>১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ২২ (১) (ডি) ধারা অনুযায়ী, সিন্ডিকেটে একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত সরকারি কলেজের দুজন অধ্যক্ষের মধ্যে একটি পদ খালি, আরেকটি পদ মেয়াদোত্তীর্ণ। ডিন, প্রাধ্যক্ষ, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে একজন নির্বাচিত হয়ে সিন্ডিকেটের সদস্য হন। কিন্তু দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষকদের পদোন্নতি ও সংশ্লিষ্ট পদ হারানোর কারণে অধ্যাপক ক্যাটাগরি ছাড়া অন্য পাঁচটি পদ শূন্য হয়েছে। ২০১৬ সালের ৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ সিন্ডিকেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে ২০১৮ সালের জুনে নির্বাচিত সব সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়।</p> <p>চলতি বছরের ২১ মার্চ রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩-এর ২২ (১) (জি) ও ২২ (৩) ধারা অনুযায়ী অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও অধ্যাপক মো. আশরাফ-উল-আলমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দুই বছরের জন্য মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত দুজনের সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সাতজন সদস্য নিয়েই সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে।</p> <p>অন্যদিকে অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য হবেন ৯৩ জন। তাঁদের মধ্যে গত আড়াই যুগ ধরে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। অন্য ৮৮ জনের মধ্যে পাঁচজন হলেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ২০১০ সালের পর সরকার থেকে এই ক্যাটাগরিতে নতুন করে কাউকে মনোনীত না করায় এই পদগুলো শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া সিনেটে স্পিকার মনোনীত পাঁচজন সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রপতি মনোনীত পাঁচজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সিন্ডিকেট মনোনীত পাঁচজন গবেষক এবং একাডেমিক কাউন্সিল থেকে পাঁচজন কলেজের অধ্যক্ষ রয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে শিক্ষাবিদদের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে। আর অন্য ২০ জনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাইয়ের আগে। সিনেটের অন্য ৬৩ সদস্যের মধ্যে ৫৮ জন নির্বাচিত হয়ে আসেন। </p> <p>তাঁদের মধ্যে ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি এবং ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। তিন বছর মেয়াদি এই সিনেট সদস্যদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। আর শিক্ষক প্রতিনিধিদের নির্বাচন হয়েছে সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। সেই হিসেবে আট বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে তাঁদের। সিনেটের অন্য পাঁচজন সদস্য (পদাধিকার বলে) হলেন উপাচার্য, দুজন উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। তবে অধ্যাদেশের ১৯ (২) ধারা অনুযায়ী ‘সিনেটরদের দায়িত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত বহাল থাকবে, যতক্ষণ না তাঁদের উত্তরাধিকার নির্বাচিত, মনোনীত ও নিয়োগপ্রাপ্ত হন।’ এই ধারাবলে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন মেয়াদোত্তীর্ণ ৮১ সিনেটর।</p> <p>গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নূরুল আলম বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে পর্ষদগুলোতে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্বাচন শিগগিরই হবে বলে আমি আশাবাদী।’</p>