<p>দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গত ৪ জুন দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম ৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে প্রথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকের পর গতকাল বুধবার মাধ্যমিক স্তরের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঘোষণায় বলা হয়েছে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের মাধ্যমিক স্তরের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে ৮ জুন (আজ বৃহস্পতিবার)। এর পরের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শ্রেণি কার্যক্রম ফের শুরু হবে আগামী রবিবার। </p> <p>এর আগে গত মঙ্গলবার মাধ্যমিকের সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরের শ্রেণি কার্যক্রম, মাদরাসার ইবতেদায়ি স্তরের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর গতকাল মাদরাসার দাখিল স্তরের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।</p> <p>আবহাওয়াবিদরা জানান, ৯ জুন পর্যন্ত তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। ১১ ও ১২ জুন সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে। এরপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।</p> <p>সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও বেসরকারি প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন (বাংলা ও ইংলিশ মিডিয়াম) সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।</p> <p>শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহের এই সময়ে সুচিন্তিত ও পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া প্রয়োজন ছিল। আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে যত দিন তাপপ্রবাহ থাকবে তত দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এখানে বাচ্চাদের সুস্থতা বেশি গুরুত্ব পেতে হবে। তীব্র গরমে স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীর মৃত্যু আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে। ঢাকার বাইরে যেখানে বিদ্যুৎবিভ্রাট বেশি, সেখানে পরিস্থিতি আরো নাজুক। এ অবস্থায় যেসব স্কুলে ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাট হয়, সেখানে বাচ্চারা কিভাবে বসে ক্লাস করে, তা আমার বোধগম্য নয়।’</p> <p>বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশিদ খোকন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পর আমরাও শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি, তবে কিন্ডারগার্টেনগুলো শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’ </p> <p>বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের জন্য নির্দেশনা থাকলে বিজ্ঞপ্তিতে কিন্ডারগার্টেন শব্দ উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এবারের বিজ্ঞপ্তিতে কিন্ডারগার্টেনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। ফলে আমরা শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো আমরা এক বেঞ্চে অনেক শিক্ষার্থী বসতে দিই না। এক বেঞ্চে দু-তিনজন শিক্ষার্থী বসে।’</p> <p>এক দিনে অসুস্থ অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী : একদিকে তীব্র তাপপ্রবাহ অন্যদিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। গতকাল এক দিনে দেশে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। </p> <p>গতকাল রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শ্রেণিকক্ষে অন্তত সাতজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের মনোয়ারা হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হয়। বারবার বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে অতিরিক্ত গরমে এই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে জানায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। </p> <p>ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ওই শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।’ </p> <p>শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে নির্দেশনা না এলে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে পারি না। আমরা চাই, এই গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুদিন বন্ধ থাকুক।’ </p> <p>গতকাল রংপুরের বদরগঞ্জ সরকারি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের টেস্ট পরীক্ষা চলাকালে জাকির হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এদিকে কুমিল্লার গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্য কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তীব্র গরমে গতকাল অন্তত ২২ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার সুবল আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা শ্রেণি কার্যক্রম চলার সময় গরমে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। </p> <p>[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কুমিল্লা ও রংপুর (বদরগঞ্জ) প্রতিনিধি]</p>