<p>প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা সহজ করতে বিকাশ ও সিটি ব্যাংক যৌথভাবে ‘পে-লেটার’ নামে জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ সেবা চালু করেছে। এই সেবায় গ্রাহকের কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও বিকাশ অ্যাপ দিয়ে পণ্য কেনার পর মূল্য পরিশোধ করা যাবে। ওই ঋণের অর্থ সাত দিনের মধ্যে পরিশোধ করলে গ্রাহককে কোনো সুদ দিতে হবে না। আর অর্থ পরিশোধ করতে ৩-৬ মাস সময় নিলে বাত্সরিক সুদ দিতে হবে ৯ শতাংশ।</p> <p>আজ সোমবার (১ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশান-১ এ অবস্থিত সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর।</p> <p>অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে কেউ কেনাকাটা করে ঋণ নিলে তার অর্থ দিবে সিটি ব্যাংক। পে-লেটার সেবার মাধ্যমে একজন গ্রাহক ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। তবে ছয় মাসে পে-লেটার ঋণ পরিশোধ পদ্ধতিতে গ্রাহককে শুরুতেই ২০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিতে হবে। বাকি ৮০ শতাংশ অর্থ পে-লেটারের মাধ্যমে সমান কিস্তিতে ভাগ হয়ে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রেও বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই শূন্য দশমিক ৫৭৫ শতাংশ ভ্যাট ও প্রসেসিং ফি দিতে হবে। একজন ঋণগ্রহীতার ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেও অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। এতে গ্রাহককে শুধু সেই কয়েক দিনের জন্যই সুদ দিতে হবে। অগ্রিম ঋণ পরিশোধে বাড়তি খরচ করতে হবে না।</p> <p>উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘সিটি ব্যাংক ও বিকাশ ২০২১ সালে যৌথভাবে দেশে প্রথম ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ সেবা চালু করে। গত শনিবার পর্যন্ত এই ঋণ নিয়েছে ৮ লাখ ৩১২ জন মানুষ। আর ঋণ দিয়েছি ৭৪২ কোটি টাকার। অন্যান্য ব্যাংকগুলো একইভাবে ২০-৩০ শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে। আমরা নিচ্ছি ৯ শতাংশ। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সহায়তা দিচ্ছে, সেখান থেকে আমরা পাচ্ছি ১ শতাংশ হারে। প্রতিটি ঋণের আকার প্রায় ৯ হাজার ২০০ টাকা। প্রতিটি গ্রাহক এই ঋণ প্রায় ৩ বার নিয়েছেন। এত টাকা ঋণ দিচ্ছি, কিন্তু এর খেলাপি (এনপিএল) হওয়ার হার মাত্র শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ। তার মানে যারা বিকাশের মাধ্যমে ঋণ নিচ্ছেন তারা নিজেদের মূলধনের ছোট একটা অংশ হিসেবে নিচ্ছেন। তাদের আসলে ঋণ খেলাপি হওয়ার ইচ্ছে নেই। ঋণ শোধ করছে। এটা আমাদের সাহস ও শক্তির একটা জায়গা।’</p> <p>বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, ‘একজন কৃষকের এই মুহূর্তে সার, কাঁচামাল কেনা দরকার, কিন্তু টাকা নেই। এখানে যদি কাঁচামালের সরবরাহ থাকে তাহলে, তাকে অর্থ নিয়ে কোনো নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। যেনো আমাদের উত্পাদন কার্যক্রম থেমে না থাকে। সার দরকার, সার চলে আসবে সেই ব্যবস্থাটা হচ্ছে। পরে সে টাকা দিয়ে দিবে। এই সেবা নিয়ে আসার উদ্দেশ্যই মানুষের আত্মনিভর্রশীলতা যেন আরো সচল হয় এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।’</p> <p>দেশে আর্থিক খাতে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ। একসময় ব্যাংক থেকে বিকাশে টাকা নেওয়ার সেবা চালু হলে অনেক ব্যাংকার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে বিকাশ থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সেবা চালু হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, বিকাশ থেকে ব্যাংকে বেশি পরিমাণে টাকা জমা হচ্ছে।</p> <p>অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অ্যাপের মাধ্যমে ‘পে-লেটার’ ঋণের জন্য বিবেচ্য গ্রাহক বিল দেওয়ার সময়, কিউআর কোড স্ক্যান বা মার্চেন্ট নম্বর বসাতে হবে। এরপর টাকার পরিমাণ লিখে ‘পে-লেটার’ নির্বাচন করতে হবে। এরপর ৭ দিন, তিন বা ছয় মাসে পরিশোধের একটি পদ্ধতি বাছাই করে নিতে হবে। তাহলে সঙ্গে-সঙ্গেই বিল পরিশোধ হবে এবং গ্রাহকের একাউন্টে ঋণের পরিমাণ জমা হবে। গ্রাহকের বিকাশ লেনদেন ও সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট পলিসির ভিত্তিতে ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা ও ঋণের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। এই সেবা নিতে গ্রাহককে অবশ্যই ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হবে। যা বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে করা যাবে।</p> <p>অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ, হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং মো. অরূপ হায়দার, বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মীর নওবত আলী প্রমুখ।</p>