<article> <p style="text-align: justify;">যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বড় অর্থনৈতিক দেশগুলোতে গত বছর মূল্যস্ফীতি কমেছে। কারণ রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে কমে এসেছে জ্বালানি তেলের দাম। কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে হারানোর যুদ্ধ এখনো শেষ হয়ে যায়নি, বরং এ সমস্যা আবারও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে লোহিত সাগরকেন্দ্রিক ঝুঁকির কারণে। বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুটটিতে হুতিদের হামলায় পণ্য পরিবহনে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।</p> </article> <p style="text-align: justify;">হুতিদের জাহাজ আটক ও হামলার ভয়ে লোহিত সাগরে চলাচল করা বিপুলসংখ্যক কনটেইনার জাহাজ, যাত্রীবাহী ক্রুজজাহাজ, তেলের ট্যাংকার ও মালবাহী বড় জাহাজ রুট পরিবর্তন করছে। জাহাজগুলো এখন গতিপথ বদলে দীর্ঘ দূরত্বের আফ্রিকা রুট দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। এতে আকাশছোঁয়া হয়ে যাচ্ছে বীমা ও পণ্য পরিবহন খরচ।</p> <p style="text-align: justify;">সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে ইউবিএসের সিইও সার্জিও এরমতি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমে আসায় আর্থিক বাজারে এক ধরনের পরিতৃপ্তি ছিল। কিন্তু লোহিত সাগরে হুতিদের হামলার কারণে জাহজীকরণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে, যা প্রকারান্তরে পণ্যের দাম বাড়াবে। এর ফলে আমরা আবারও মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখিতার দিকে যাব, এমনটি আমি ভাবতে পারছি না।’</p> <article> <p style="text-align: justify;">গত নভেম্বর থেকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরপথে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করছে। নভেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত গ্যালাক্সি লিডার জাহাজে হামলার পর লোহিত সাগরে এ পর্যন্ত ২৬টি জাহাজে হামলা চালিয়েছে তারা। এতে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য কমে গেছে। হুতি বি্রেদাহীরা ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে এ হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে। তাদের এ হামলার কারণে ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধ আঞ্চলিক পর্যায়ে ছড়িয়ে যাওয়ারও ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। ইরান এরই মধ্যে পাকিস্তানে হামলা করায় তারাও পাল্টা হামলা করেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ অনেক দেশ এ অঞ্চলে থাকায় বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আবারও বেড়ে যেতে পারে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সুয়েজ খাল হয়ে ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরকে এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে লোহিত সাগর। বর্তমানে বিশ্বের ১২ শতাংশ পণ্যবাহী জাহাজ লোহিত সাগর ব্যবহার করে। দৈনিক গড়ে ৫০টি জাহাজ ব্যবহার করছে এই জলপথ। এসব জাহাজে ৩০০ থেকে ৯০০ বিলিয়ন ডলারের কার্গো পরিবহন করা হয়। প্রতিবছর এই রুট ব্যবহার করে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য পরিবহন করা হয়। ক্লার্কসন রিসার্চ সার্ভিস লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধের তুলনায় ৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া বন্দরে পৌঁছাতে উত্তমাশা অন্তরীপের আশপাশের জলসীমা ব্যবহারকারী জাহাজের সংখ্যাও বেড়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি ও মানবসম্পদের ব্যয়ও বেড়েছে। ফলে বেড়ে গেছে বীমা খরচ। এ কারণে পণ্যবাহী জাহাজ পৌঁছাতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরি হতে পারে। পাশাপাশি বন্দরগুলোতে কনটেইনারের জটও বেড়ে যেতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যকার আটটি প্রধান রুটে চলাচলকারী পণ্যবাহী জাহাজের হিসাব রাখে ড্রেউরি ওয়ার্ল্ড কনটেইনার। তাদের সূচক অনুযায়ী, চীন থেকে ইউরোপে ৪০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার পাঠানোর খরচ ২৪৮ শতাংশ বেড়েছে। নভেম্বরে যখন হামলা হয়, তখন একই কনটেইনার পাঠাতে খরচ পড়ত এক হাজার ১৪৮ ডলার।</p> <p style="text-align: justify;">ড্রেউরির কটেইনার গবেষণা বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সাইমন হেনি বলেন, জাহাজ কম্পানিগুলো কিভাবে সাড়া দেয়, তার ওপর সব কিছু নির্ভর করছে। যেকোনো স্থানে পণ্য পরিবহনের মোট খরচ ৩ থেকে ২১ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস বলছে, পরিবহন খরচ বাড়ায় এর বাড়তি ব্যয় ভোক্তাদের ঘাড়েই পড়বে। কিন্তু ভাড়ার এই ঊর্ধ্বমুখিতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে বিশ্বজুড়ে আবারও মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে। মায়ার্সকের সিইও ভিনসেন্ট ক্লার্ক বলেন, ‘এই সংকট যত দিন দীর্ঘায়িত হবে পরিবহন খরচ তত বাড়তে থাকবে।’</p> <p style="text-align: justify;">লোহিত সাগরে উত্তেজনার ফলে তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ ব্যাহত হবে বলে জানিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘অন্যান্য পণ্য সরবরাহের মতোই এলএনজি রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লোহিত সাগর ছাড়াও বিকল্প রুট আছে। কিন্তু সেসব বিকল্প পথ খুব একটা কার্যকর নয়। বর্তমান রুটের চেয়ে সেগুলোর গুরুত্ব অনেক কম।’ গত সোমবার ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, কাতারের এলএনজি বহনকারী কমপক্ষে পাঁচটি জাহাজ লোহিত সাগর রুটে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">সূত্র : <strong>রয়টার্স, আলজাজিরা</strong></p> </article>