<p>অর্থসংকট এতটাই প্রকট যে দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বছর এমন অবস্থা হয়েছে যে করোনার সময়ও এডিপি বাস্তবায়নের হার এখনকার চেয়ে ভালো ছিল। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ১৭.০৬ শতাংশ। সাম্প্রতিক কোনো বছরে এমন খারাপ পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি।</p> <p>এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ছিল ১৬.৮৪ শতাংশ। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা যায়। আইএমইডির প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের ৫৮টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে অর্থ খরচ করা হয়েছে ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের বিপরীতে পাঁচ মাসে যে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে, তা গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।</p> <p>তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলোকে এখন বিদেশি ঋণের প্রকল্পগুলোর ওপর বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। গত তিন মাসে সরকারের অর্থায়ন থেকে যে টাকা খরচ হয়েছে, এর আগে এত কম অর্থ খরচ করার রেকর্ড নেই সরকারের। এই অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের অর্থায়ন থেকে খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ২৯১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৬.১৫ শতাংশ। কাছাকাছি কোনো সময়ে এর চেয়ে কম খরচ আর হয়নি। </p> <p>এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১৭.০৬ শতাংশ। এমনকি করোনার সময়ও ২০২০-২১ অর্থবছরে এ হার ছিল ১৯.৯৩ শতাংশ।</p> <p>বৈদেশিক ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) এক প্রকল্প পরিচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে আমরা বিদেশি ঋণের প্রকল্পে সরকার থেকে সিডি ভ্যাটের বরাদ্দ নিতে না পারায় ঋণের টাকা ছাড় করতে পারছি না। তাহলে বুঝতে পারছেন দেশীয় প্রকল্পগুলোর কী অবস্থা। অর্থসংকটে খুবই ধীরগতিতে চলছে প্রকল্পগুলো।</p> <p>আইএমইডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে এখনো খরচের খাতা খুলতে পারেনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন। মাত্র ০.১১ শতাংশ খরচ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত অর্থবছর এক টাকাও খরচ করতে না পারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবার পাঁচ মাসে খরচ করেছে ৩.২৯ শতাংশ। এ ছাড়া ৩.৫৪ শতাংশ খরচ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ৪.১৫ শতাংশ খরচ করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। আর ১০ শতাংশের কম খরচ করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।</p> <p>চলতি অর্থবছরের চার মাসে খরচ এবং এডিপি বাস্তবায়ন হারে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, সংসদবিষয়ক বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়সহ আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।</p> <p>স্থানীয় সরকার বিভাগ খরচ করেছে ৯ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ খরচ করেছে সাত হাজার ১৬২ কোটি টাকা। তিন হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা খরচ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তিন হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা খরচ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। আর সর্বোচ্চ ৬৬.০৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ।</p> <p>পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ায় অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন এবং তহবিলের সীমিত ছাড়ও এডিপি বাস্তবায়ন হার কমিয়েছে।</p> <p>এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়ার বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বছরের শুরুতে পেপার ওয়ার্ক থাকার কারণে এডিপি বাস্তবায়ন প্রতিবছরই কিছুটা কম থাকে। তবে অনেক প্রকল্পেই কাজ হলেও অর্থছাড় কম হচ্ছে। এ কারণে বাস্তবায়ন হার কম দেখা যাচ্ছে।</p>