<p>দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) খাতে দ্রুত অগ্রগতি করেছে। বর্তমানে এলপিজি খাত বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি শিল্প ও পরিবহন খাতেও এখন এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে এলপিজির চাহিদা ছিল মাত্র ১ লাখ টন, সেটি বেড়ে এখন হয়েছে ১৫ লাখ টনের বেশি। শিগগিরই নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে এই খাতে আরো ব্যাপক প্রসারের সম্ভাবনা রয়েছে।</p> <p><img alt="k" height="400" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/kalerkantho.jpg (4).png" width="600" /></p> <p>বাংলাদেশে এলপিজির বাজারকে আরো সম্প্রসারণ করতে ওয়ার্ল্ড এলপিজি অ্যাসোসিয়েশন আয়োজন করেছে দুই দিনব্যাপী ‘এশিয়ান রিজিওনাল এলপিজি সামিট’। আজ বুধবার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত সামিটের দ্বিতীয় দিনের দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।</p> <p>দিনব্যাপী চলা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড এলপিজি অ্যাসোসিয়েশনের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জেমস রোক্যাল, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক অব. বিগ্রে. জেনারেল আলি আহমেদ খান, ওয়ার্ল্ড এলপিজি অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাইকেল কেলি, এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরী।</p> <p><img alt="k" height="360" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/kalerkantho.jpg (5).png" width="600" /></p> <p>এ ছাড়া বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সিইও (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং, সেক্টর-এ) এম এম জসিম উদ্দিন, বেক্সিমকো আইওসি’র সিইও এম মুনতাসির আলম, আইওসি এলপিজি’র নির্বাহী পরিচালক শৈলেন্দ্র কুরুমাদ্দালী, বসুন্ধরা গ্রুপের (সেক্টর-এ) স্ট্রাটেজি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া জালাল ও ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজীম চৌধুরীসহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>এশিয়ান এলপিজি সামিটে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনসহ বিশ্বের ৩০টি দেশের এলপিজি অপারেটররা অংশগ্রহণ করেছেন। এই সামিটে এক ছাতার নিচে এলপিজি খাতের সব পণ্য নিয়ে বিশ্বের ৪০টির বেশি কম্পানি এলপিজির বিভিন্ন পণ্য নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন। স্টলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি এলপিজি সরবরাহকারী কম্পানিগুলো তাদের আধুনিক প্রযুক্তির সিলিন্ডারসহ এলপিজি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত পণ্য সিলিন্ডার বাল্ব, রেগুলেটর ও অটোগ্যাস স্টেশন মেশিনারি এবং শিল্প-কারখানায় এলপিজির প্লান্ট স্থাপনের যন্ত্রাংশ স্টলগুলোতে প্রদর্শন করেন। এই এশিয়া সামিটের প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে ছিল বসুন্ধরা এলপি গ্যাস।</p> <p>বক্তব্যে জেমস রোক্যাল বলেন, ‘এলপিজি খাতে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার, রেগুলেটরি কমিশন এবং কম্পানিগুলোর নানাবিধি নতুন উদ্ভাবনের কারণে বাংলাদেশে এলপিজির ভিত্তি অনেক শক্ত হয়েছে। পাশাপাশি  ন্যায্য প্রতিযোগিতা এবং ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা এলপিজি খাতকে আরো উন্নত করবে।’</p> <p>আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম কিছুটা বেড়েছিল। যদিও এই সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। তবে এত কিছুর পরও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এলপিজি খাতে দ্রুত অগ্রগতি করেছে। একইসঙ্গে এবারের এলপিজি সামিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমাদের নেটওয়ার্কিং বাড়বে। যা এলপিজি খাতের সকলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’</p> <p>এম এম জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভারত এলপিজিতে ভর্তুকি দেয়। আমরা ভর্তুকি চাচ্ছি না, শুধু এই খাতে সরকারের নীতিগত সহযোগিতা চাই। তাহলেই এলপিজিতে বিনিয়োগ আসবে। এলপিজির প্রসার হবে।’</p> <p>তানজীম চৌধুরী বলেন, ‘এলপিজি খুবই নিরাপদ জ্বালানি। কিন্তু অনেক ফিলিং স্টেশনে অবৈধভাবে এলপিজি সিলিন্ডার রিফিল করা হচ্ছে যা আমাদের কমিউনিটির জন্য খুবই বিপদজনক। তাই আমাদের সকল অপারেটরদের আরো সচেতন থাকতে হবে। একইসঙ্গে অবৈধভাবে রিফিল করা (ক্রসফিলিং) স্টেশনগুলোকে চিহ্নিত করে দ্রুত বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে।’</p> <p>মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘জ্বালানি একটি দেশের উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বিভিন্ন খাতে এলপিজির ব্যবহার হচ্ছে। রান্নায় এলপিজি ব্যবহারের ফলে গাছ কাটার পরিমাণ অনেক কমেছে। যে কারণে এলপিজি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’</p> <p>আলী আহমেদ খান বলেন, ‘এলপিজি স্টোরেজের ক্ষেত্রে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। পাশাপাশি প্রতিবার এলপিজি রিফিলের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষা করা। এসবের ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায় ও জনসাধারণের জন্য নিরাপদ হবে।’</p> <p>এদিন বিকেলে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় রান্নার জন্য ক্লিন এনার্জি ফুয়েল হিসেবে এলপিজি’ এর ওপর প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া জালাল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মার্কেটে মোট এলপিজি ব্যবহারের ৯১ শতাংশ এলপিজি গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার হয়। যার মধ্যে ভারতের মোট এলপিজির ৯১ শতাংশ, পাকিস্তানে ৮৪ শতাংশ ও বাংলাদেশে মোট এলপিজির ৮৫ শতাংশ গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশে মার্কেটে এলপিজির যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তার মাত্র ২৯ শতাংশ দেশের সব কম্পানিগুলো পূরণ করতে পারছে। তাই আমি মনে করি ইনভেস্টরদেও  বাংলাদেশে এলপিজি খাতে বিনিয়োগের এখনই মূখ্য সময়।’</p>