<p>বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারজনিত লোকসানের কারণে ২০২২ সালে রবির কর পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) ৪৯ শতাংশ কমে গেছে। এতে ৩৬১ কোটি টাকার পরিবর্তে রবির পিএটি হয়েছে ১৮২ দশমিক ৭ কোটি টাকা। এর ফলে প্রায় ১৭৯ কোটি টাকা মুনাফা হারিয়েছে অপারেটরটি।</p> <p>আজ রবিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২২ সালের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করে এসব তথ্য জানিয়েছে রবি।</p> <p>এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোট গ্রাহকের ৫৩ শতাংশ ফোরজি গ্রাহক নিয়ে ২০২২ সালেও ফোরজি সেবায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে রবি। ২০২২ সালে রবির মোট গ্রাহকের প্রায় ৭৬ শতাংশ গ্রাহকই ছিলেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যা এ খাতে সর্বোচ্চ।</p> <p>২০২২ সাল শেষে রবি প্রায় ১৬ হাজার ফোরজি সাইট দিয়ে ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ গ্রাহকের জন্য ফোরজি কভারেজ নিশ্চিত করেছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে প্রতি মাসে গ্রাহক প্রতি ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ ৩৬ শতাংশ বেড়েছে । ২০২২ সালে রবির ডাটা ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রতি মাসে ৫ দশমিক ৫ জিবি ডাটা ব্যবহার করেছেন। </p> <p>২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে রবির গ্রাহক সংখ্যা এক দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে পাঁচ কোটি ৪৪ লাখে পৌঁছেছে, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ৩০ শতাংশ। একইসাথে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ডাটা গ্রাহক সংখ্যা চার শতাংশ  বেড়ে চার কোটি ১১ লাখে পৌঁছেছে এবং রবির ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা ২১ শতাংশ  বেড়ে দুই কোটি ৮৯ লাখে পৌঁছেছে।</p> <p>২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে দুই হাজার ২৫৪ দশমিক তিন কোটি টাকাসহ বছর শেষে রবির মোট আয়  আট হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে রবির আয় বৃদ্ধির হার পাঁচ দশমিক  চার শতাংশ। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২২ সালের একই প্রান্তিকে রবির আয়  বেড়েছে ১০ শতাংশ।</p> <p>২০২২ সালে ভয়েস সেবায় রবির আয় বেড়েছে  নয় শতাংশ। ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২২ সালের একই প্রান্তি কে ভয়েস সেবা থেকে আয়ের হার সাত শতাংশ  বেড়েছে।</p> <p>অন্যদিকে ডাটা সেবায় ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে আয় বেড়েছে দু্ই শতাংশের মতো এবং ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২২ সালের একই প্রান্তিকে ডাটা সেবায় আয় বেড়েছে ১৬ শতাংশ। ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ৩৮৪ দশমিক  চার কোটি টাকা মূলধনী বিনিয়োগসহ বছর শেষে রবির মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩০ কোটি টাকায়।</p> <p>২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্ত্মিকে ১২৬ কোটি টাকা কর পরবর্তী (পিএটি) মুনাফাসহ ১৮২ দশমিক ৭ কোটি টাকা পিএটি নিয়ে বছর শেষ করেছে রবি যা ২০২১ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।</p> <p>২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্ত্মিকে ইবিএআটিডিএ ছিল (৪৭ শতাংশ মার্জিনসহ) ১ হাজার ৬৬ দশমিক ৪ কোটি টাকা যা ২০২১ সালে (৪৫ শতাংশ মার্জিনসহ) ৩ হাজার ৮৫৪ দশমিক ৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।২০২১ সালের তুলনায় এটি ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।</p> <p>২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্ত্মিকে ১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকাসহ ওই বছর রবি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে মোট৪ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্ত্মিকে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ এবং পুরো বছরেআয়ের ৫৬ শতাংশ সরকারী কোষাগারে জমা দিয়েছে রবি।</p> <p>২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্ত্মিকে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল দশমিক ২৫ টাকা এবং পুরো বছরের ইপিএস ছিল দশমিক ৩৫ টাকা যা ২০২১ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারজনিত লোকসান হওয়ায় প্রায় অর্ধেক মুনাফা না হারালে ২০২২ সালে ইপিএস হতো দশমিক ৬৭ শতাংশ, যে অঙ্ক ২০২১ সালের তুলনায় ৯৬ শতাংশ বেশি।</p> <p>রবির পরিচালনা পর্ষদ সাত শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে । অর্থাত্ শেয়ার প্রতি শূন্য দমমিক  ৭০ টাকা। যা ২০২২-সালের পিএটি-এর ২০০ দশমিক সাত শতাংশ। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রবির ২৭ তম বার্ষিক সাধারণ সভা আগামী ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে।</p> <p>কম্পানির আর্থিক ফলাফল সম্পর্কে রবির সিইও রাজীব শেঠি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারজনিত লোকসানের কারণে দুর্দান্ত এক বাত্সরিক সাফল্যের দেখা  পেলাম না আমরা। আক্ষরিক অর্থে আমাদের পিএটি অর্ধেক হয়ে যাওয়ায় সেই সাফল্য অধরাই থাকল। এর মধ্যে  দুই শতাংশ নূন্যতম কর আরোপ পিএটির ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে কাজ করেছে। অন্যদিকে দক্ষ ব্যয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা উল্লেখযোগ্য লাভ করতে পেরেছি। রবির অবস্থানকে দৃঢ় রাখতে আমরা সামনের দিনগুলোতেও ব্যয় ব্যবস্থাপনার ওপর তীক্ষ্ন নজর রাখব।’</p> <p>ডাটা ব্যবসার অস্থিরতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘টেলিকম খাতে মূল্য নিয়ে অতিরিক্ত প্রতিযোগিতার কারণে ডাটা মূল্য হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে ৪৫ শতাংশ ডাটা ট্র্যাফিক বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ডাটা খাত থেকে আমাদের মাত্র দুই শতাংশের মতো আয়  বেড়েছে। নির্দিষ্ট ডাটা ফ্লোর প্রাইসের অনুপস্থিতিতে এই ধরনের মূল্য যুদ্ধ ডাটা খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। আমরা এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবিলম্বে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’</p>