<p>নতুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা চালু করতে একমত হয়েছে ব্রিকস দেশগুলো। মার্কিন ডলারের একচেটিয়া আধিপত্য রুখতে ও চলমান সংকট মোকাবেলায় ব্রিকসভুক্ত রাশিয়া, চীন, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো একটি নতুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা প্রচলনের পরিকল্পনা করছে। জুনের শেষে রাশিয়া এবং ব্রিকস দেশগুলোর সদস্যরা বলেছে, এই পাঁচটি প্রধান উদীয়মান অর্থনীতির দেশের নেতারা আন্তর্জাতিক রিজার্ভ মুদ্রা তৈরির জন্য একমত হয়েছেন।</p> <p>বিশ্লেষকরা মনে করেন, ব্রিকসের রিজার্ভ কারেন্সি (মুদ্রা) তৈরির পদক্ষেপ মার্কিন ডলার এবং আইএমএফের এসডিআরগুলোকে দুর্বল করে দেবে। </p> <p>বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ ও লেনদেনে একচেটিয়া আধিপত্য মার্কিন ডলারের। এই আধিপত্য আরো স্পষ্ট হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর।</p> <p>সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ভোগ্য পণ্যের মূল্য সর্বকালের উচ্চতায় উঠেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর চরম মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানির আকাশচুম্বী দামের জন্য যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে দায়ী করছেন।</p> <p>বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিকস মুদ্রা মার্কিন ডলার এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) মুদ্রার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হবে।</p> <p>১৪তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, ব্রিকস দেশগুলো ‘নতুন বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা’ চালুর পরিকল্পনা করেছে। এ ছাড়াও তুরস্ক, মিসর ও সৌদি আরব ব্রিকসে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রিজার্ভ মুদ্রা তৈরির বিষয়টি আমাদের দেশগুলোর মুদ্রার আলোকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’ </p> <p>পুতিন আরো বলেন, ভারতীয় রিটেইল চেইন স্টোরগুলোকে রাশিয়াতেও সম্প্রসারণের সুযোগ দেওয়া হবে এবং চীনা গাড়ি ও যন্ত্রাংশ নিয়মিত আমদানি করা হবে।</p> <p>আইএনজির বিশ্ববাজার প্রধান ক্রিস টার্নার বলেন, এটি আইএমএফ দ্বারা মার্কিন আধিপত্য মোকাবেলার বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ। এটি ব্রিকসকে তাদের নিজস্ব আধিপত্য ক্ষেত্র এবং সেই ক্ষেত্রের মধ্যে একক মুদ্রা প্রচলনের সুযোগ দেবে।</p> <p>রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ বছরের সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামে মার্কিন ও পশ্চিমা দেশগুলোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা ও নিন্দা করে বলেন, কিছুই চিরকাল স্থায়ী হয় না। মার্কিনিরা নিজেদের অদ্বিতীয় মনে করে এবং যদি তারা মনে করে যে তারা অদ্বিতীয়, তার মানে অন্য সবাই দ্বিতীয় শ্রেণির। </p> <p>রুশ রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে দ্বিবার্ষিক ভাষণে পুতিন বলেন, অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে পশ্চিমারা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ছে। সংকটের ফলে শিল্পোন্নত দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক সমস্যাগুলো আরো খারাপ হয়েছে, তা তথাকথিত ঐতিহাসিক পশ্চিমের প্রভাবশালী ভূমিকাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। পরিস্থিতির যেকোনো উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত থাকুন, এমনকি সবচেয়ে প্রতিকূল পরির্বতনের জন্যও।</p> <p>শি চিনপিং বলেন, বৈশ্বিক অর্থ ব্যবস্থায় একটি প্রভাবশালী অবস্থান ব্যবহার করে বিশ্ব অর্থনীতির রাজনীতিকরণ, যন্ত্রায়ন এবং সামরিকীকরণ করে অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা শুধু অন্যদের ক্ষতি করবে না, সেই সাথে নিজেকেও আঘাত করবে, সারা বিশ্বের মানুষকে কষ্ট দেবে। যারা শক্তির প্রভাবে আচ্ছন্ন, সামরিক জোট প্রসারিত করে এবং অন্যের খরচে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা খোঁজে, তারা নিজেরাই নিরাপত্তার সমস্যায় পড়বে। </p> <p>এদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, মার্কিন অর্থনীতি ‘মন্দার চেয়েও অনেক বড় সমস্যার’ মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের মন্দা দেখা দেবে। তবে আমাদের এই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আমরা গুরুতর সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি।’</p> <p>ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আর্থিক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দায় পড়বে। তার এই মন্তব্যে সমর্থন দিয়েছেন রিপাবলিকান নেতা ক্যারি লেক। সম্প্রতি অ্যারিজোনায় ‘সেভ আমেরিকা’ শীর্ষক এক র‌্যালিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, মার্কিন অর্থনীতি ১৯২৯ সালের মহামন্দার মতোই একটি বড় ধরনের মন্দায় পড়তে যাচ্ছে।</p> <p>সূত্র : বিটকয়েন, মেটা ক্রাঞ্চ</p>