হঠাৎ করেই চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি-দস্যুতার ঘটনা বেড়েছে। চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল—এই চার মাসে তিনটি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করেছে রিক্যাপ। ২০২১ সালেও চট্টগ্রাম বন্দর দস্যুতা বা পাইরেসিমুক্ত ছিল। এতে বেশ স্বস্তিতে ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বিজ্ঞাপন
বাণিজ্যিক জাহাজে সংগঠিত সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা ও চুরি প্রতিরোধে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংগঠন রিক্যাপ প্রকাশিত রিপোর্টে জানুয়ারি-এপ্রিল—এই চার মাসে তিনটি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো দস্যুতা-চুরির ঘটনা ছিল না বন্দর জলসীমায়। মার্চ মাসে একটি ঘটনা ঘটেছে, আর এপ্রিলে ঘটেছে দুটি ঘটনা। তিনটি ঘটনাই কুতুবদিয়া এলাকার সাগরে। আর তিনটি ঘটনাই ঘটেছে ট্যাংকার জাহাজে।
দস্যুতা-চুরি বাড়ার কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে মন্তব্য করতে চাননি। পরে বন্দরসচিব ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব চুরির ঘটনা খুবই ছোট্ট এবং বিচ্ছিন্ন। এর পরও আমরা বিষয়টিকে ছোট বলে উড়িয়ে দিচ্ছি না। বন্দরের জলসীমা বেড়েছে, নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। ফলে ছোট ঘটনাও যাতে না ঘটে সে জন্য চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড জলসীমা পাইরেসিমুক্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ’
রিক্যাপ রিপোর্টে ২০২২ সালের জানুয়ারি-এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে ৩১টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১টি ঘটনা ঘটেছে সিঙ্গাপুর-মালাক্কা স্ট্রেইটে। বাংলাদেশে তিনটি, ভারতে তিনটি, ইন্দোনেশিয়ায় তিনটি ও ফিলিপাইনে তিনটি ঘটনা ঘটেছে। রিক্যাপ রিপোর্টে অবশ্য জাহাজে দস্যুতা ঘটার ২০ মিনিটের মধ্যেই কোস্ট গার্ড টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার প্রশংসা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া পণ্য উদ্ধারের জন্য কৃতিত্বও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরও বিদেশি একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় পৌঁছার পর ছোট হোক বা বড় হোক—যেকোনো পাইরেসির শিকার হলে বিপাকে পড়তে হয় চট্টগ্রাম বন্দরকেই।
রিক্যাপ রিপোর্টে বন্দর জলসীমার কুতুবদিয়া এলাকার সাগরে গত ১৫ মার্চ ‘ওয়াসান টোপাজ’ ট্যাংকার জাহাজ, ১৬ এপ্রিল ‘বিএলপিজি সোফিয়া’ এলপিজি ট্যাংকার জাহাজ এবং ২৬ এপ্রিল ‘এসটিআই ম্যাজিস্টার’ ট্যাংকার জাহাজে পাইরেসির ঘটনা ঘটে। প্রতিবেদনে তিনটি ঘটনায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। শুধু চুরির উদ্দেশ্যেই সেটি ঘটেছে। তিনটি ঘটনায় রশি, রং ও তার চুরি হয়েছে। কোস্ট গার্ড টিম দ্রুত সেগুলো উদ্ধার করেছে। আর এসব ঘটনায় জাহাজের কোনো ক্যাপ্টেন-ক্রু আহত হয়নি, জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) ২০০৬ সালের একটি প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বন্দরকে জলদস্যু আক্রমণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক বন্দর’ ঘোষণা করা হয়। ওই বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল ৪৭টি। একের পর এক দস্যুতার ঘটনায় ওই সময়ে পৃথিবীজুড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে অনিরাপদ মনে করে বিদেশি জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে অস্বীকৃতি জানাত। আর যেসব জাহাজ পণ্য নিয়ে বন্দর জলসীমায় পৌঁছাত, তারাও সারচার্জ বা বাড়তি মাসুল আরোপ করত। ফলে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে খরচ বেশি লাগত।
কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড যৌথ প্রচেষ্টায় একটি কৌশল উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের পরই দস্যুতামুক্ত হতে শুরু করে বন্দরের জলসীমা।