<p>সুদহার ও বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনার প্রভাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা চলছে। এতে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার আবার ব্যাংকঋণে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের কোনো ব্যাংকঋণ ছিল না। ওই সময়ে ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেশি ছিল। </p> <p>সাধারণত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত নিরুৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এতে ব্যাংকের ঋণযোগ্য তহবিল সরকারের কাছে আটকা পড়ে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এ জন্য অর্থনীতিবিদরা বরাবরই সরকারকে ব্যাংক থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে করোনার কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ মন্দায় ব্যাংকিং খাতে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য থাকায় সরকারকে বেশি ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।</p> <p>প্রতিবছর বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে বাজেট পেশ করে আসছে সরকার। এই ঘাটতি মেটানো হয় দুটি উৎস থেকে। এগুলো হলো অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত। বৈদেশিক খাত থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পাওয়া না গেলে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় সরকারকে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র খাত।</p> <p>চলতি অর্থবছরের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আর ব্যাংকের বাইরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।</p> <p>জানা যায়, চলতি অর্থবছরের শুরুতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার পর মাঝখানে কিছুদিন তা কমতির দিকে ছিল। এর কারণ ওই সময় সঞ্চয়পত্র বিক্রির গতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের সুদ ব্যয় কমিয়ে আনতে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের সুদের ২ শতাংশের মতো কমিয়েছে সরকার।</p> <p>এর পর থেকে বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।</p> <p>জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে মাত্র আট হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১১ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই তিন মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ২৬.২৭ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরে রেকর্ড ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ২৯ দিনে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ করেছিল ১১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। আর  বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর পর থেকে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ কমতে থাকে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাস তথা আগস্ট পর্যন্ত নিট ব্যাংকঋণ কমে দাঁড়ায় সাত হাজার ৫২০ কোটি টাকা। আর ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা আরো কমে হয় ছয় হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। তবে এর পর থেকে সরকারের ব্যাংকঋণ বেশ গতিতে বাড়ছে। গত অক্টোবর মাস শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৯ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা। ফলে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। </p> <p>এদিকে গত অর্থবছর সরকারের ব্যাংকঋণের চাহিদা ছিল খুব কম। শুরুর দিকে সরকার ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, পরিশোধ করেছিল তার চেয়ে বেশি। তবে শেষ দিকে গিয়ে নিট ঋণ দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। যদিও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছর ব্যাংকব্যবস্থা থেকে রেকর্ড ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা নেয় সরকার।</p>