<p>দেশে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কাজ করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও।  এবার লবণশিল্পের ওয়াশারি প্লান্টের নতুন সম্ভাবনা দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে কস্টিক সোডার কাঁচামাল খাতে আমদানি ব্যয় যেমন কমবে, একই সঙ্গে টেকসই হবে লবণশিল্পের সংযোগ শিল্প।</p> <p>বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে কস্টিক সোডার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত লবণ সাধারণত ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। সেখানে উৎপাদিত বোল্ডার লবণ বিশেষ ধরনের ওয়াশারি প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম দূর করে তা কস্টিক সোডার কাঁচামালের উপযোগী করা হয়। আর এটি দেশে আমদানি পর্যন্ত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন ঘটে। অথচ দেশে সল্ট ওয়াশারি প্লান্ট গড়ে তোলা গেলে বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা আর খরচ করতে হয় না।</p> <p>সম্প্রতি এর সম্ভাবনা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিসিসি) এক প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়, দেশীয় লবণ চাষ সুরক্ষিত রেখে সল্ট ওয়াশারি প্লান্টের কাঁচামাল হিসেবে অপরিশোধিত বা বোল্ডার লবণ আমদানি করার অনুমোদন দেওয়া গেলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে লবণের সংযোগ শিল্প হিসেবে কর্মসংস্থানেরও নতুন দ্বার খুলবে।</p> <p>এ বিষয়ে লবণ শিল্প মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে কস্টিক সোডা ও ক্লোরিনের কাঁচামাল হিসেবে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টন লবণ আমদানির প্রয়োজন হয়। অথচ এর দ্বিগুণ লবণ আমদানির অভিযোগ আছে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত এই লবণ খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন স্থানীয় চাষি, মিল মালিক। রাজস্ব হারায় সরকার। কারণ সাধারণ লবণ আমদানিতে ৯২ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হয়। আর কাঁচামাল হিসেবে লবণ আমদানি করা হলে দিতে হয় ৩০ শতাংশ। সাধারণ লবণ আমদানি করার সুযোগ না থাকায় তারা শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানির সুযোগ নেয়। তাই দেশে ওয়াশারি প্লান্ট করা গেলে কস্টিক সোডার কাঁচামাল হিসেবে আমদানি কমবে। স্থানীয় বাজারেই মূল্য সংযোজন ঘটবে।  ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’</p> <p>তবে এ ব্যাপারে ভিন্ন মত প্রকাশ করে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল কবির বলেন, ‘লবণের জাত একটাই। এর বাই প্রডাক্ট নামে ভোজ্য লবণ, শিল্প লবণ নামকরণ হয়। এই অজুহাতে ১০ টাকার লবণ ৩০ টাকায় বিক্রি করে বাজারে। আমরা ভোজ্য লবণ হিসেব দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিই; সেটাও আমরা পরিশোধন করে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিই। সেই হিসেবে দেশে প্রায় ৩০০ পরিশোধন প্লান্ট আছে। অথচ ভিন্ন নামে কালোবাজারে লবণ বিক্রি করা হয় অতি মুনাফার কারণে।’ </p> <p>বিটিটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই ওয়াশারি প্লান্ট করতে পারে। এ জন্য তাদের নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় লবণ নীতি ও বিদ্যমান আমদানি নীতি সংশোধন করতে হবে। বিদ্যমান আমদানি নীতির ৫৮ উপানুচ্ছেদ অনুসারে সাধারণ লবণ আমদানি করা যায় না। তবে কাস্টমস আইন ১৯৬৯ অনুসারে ২৮ ও ২৯-এর আওতায় কেমিক্যাল পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত লবণ আমদানি করা যায়।</p> <p>প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, সরকারের নীতিমালা অনুসারে দেশে সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠান লবণ আমদানি করতে পারে না। তবে কস্টিক সোডা, ক্লোরিন বা ওষুধ তৈরি করে—এমন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা ওই শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সাধারণ লবণ পরিশোধিত বা ওয়াশ করার পর আমদানি করতে পারে।</p> <p>প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কস্টিক সোডা ও ক্লোরিন উৎপাদন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বছরে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টন অপরিশোধিত লবণ আমদানি হয়। প্রতি মেট্রিক টন আমদানিতে খরচ হয় ৪৫ ডলার। লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই লবণ আমদানি করলে খরচ পড়বে ৩০ ডলার। এতে প্রতি টনে সাশ্রয় হবে ১৫ ডলার। একই সঙ্গে  ওয়াশারি প্লান্টের মাধ্যমে দেশে মূল্য সংযোজন হওয়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া শিল্পের পশ্চাৎ শিল্প হিসেবে নতুন শিল্প তৈরি হবে এবং কর্মসংস্থান হবে। </p> <p>এ বিষয়ে বিটিটিসির সাবেক চেয়ারম্যান মর্তুজা রেজা চৌধুরী বলেন, ‘দেশে ওয়াশারি প্লান্ট হলে আমদানির বিকল্প নতুন সংযোগ শিল্প হবে। এতে বিপুল কর্মসংস্থান ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।’ স্থানীয় লবণশিল্প কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় শিল্প কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই, বরং চাহিদা বৃদ্ধির ফলে দেশীয় শিল্প আরো চাঙ্গা হবে। তবে এ জন্য আমদানি ও জাতীয় লবণ নীতি সংশোধন করতে হবে।’ লবণ মিল মালিক সূত্রে জানা যায়, দেশে মৌসুমভেদে ১২ থেকে ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদিত হয়। ২২ লাখ টনের চাহিদা রয়েছে। ফলে পাঁচ লাখ টন ঘাটতি আছে।</p>