<p>করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গত ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন। এরপর কেটে গেছে সাড়ে তিন মাস। এই সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রণোদনার টাকা দ্রুত ছাড় করার তাগিদ দিলেও বাস্তব চিত্র হতাশার। ব্যাংকগুলো প্রণোদনার টাকা ছাড় করতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা ঘোষণার সাড়ে তিন মাসে এখন পর্যন্ত ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে টাকা ছাড় হয়েছে মাত্র ২০৬ কোটি টাকা। আর ৫১৮ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব বিবেচনাধীন আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।</p> <p>ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনার টাকা বিতরণে গঠিত ১১ সদস্য কমিটির বৈঠকে ব্যাংকগুলোর অনীহা অসন্তোষ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। একই সঙ্গে প্রণোদনার টাকা দ্রুত ছাড় করার তাগিদ দেন কমিটির সদস্যরা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিও।</p> <p>বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির সভাপতি মির্জা নূরুল গনি শোভন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রণোদনার টাকা ছাড় এত কম হওয়া সত্যিই দুঃখজনক। ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ছাড় হয়েছে মাত্র ২০৬ কোটি টাকা। তবে এই টাকা ছাড় নিয়েও প্রশ্ন আছে। আসলে এই টাকা কারা পেয়েছেন, সেটাও দেখার বিষয়। তিনি বলেন, বৈঠকে প্রণোদনার টাকা দ্রুত ছাড়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>এদিকে গতকালের বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের ডিও লেটার পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানে জেলা প্রশাসকদের বলা হবে, দ্রুত টাকা ছাড় এবং প্রণোদনার টাকা বাস্তবায়ন করতে। সে জন্য প্রতি মাসে জেলার ব্যাংকের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দেওয়া হবে। শিল্পসচিব এই ডিও লেটার পাঠাবেন। একই সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সেও কথা বলবেন।</p> <p>এদিকে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের বাইরে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এমএমই খাতে ঋণ বিতরণের জন্য এক হাজার ১০০ কোটি টাকা চেয়েছে বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশন। সংস্থা দুটি বলছে, অনেক অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাঁদের পক্ষে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া সম্ভব নয়। আর ব্যাংকগুলোও ১০ লাখ টাকার নিচে ঋণ দিতে আগ্রহী হয় নয়। কিন্তু অনেক ছোট উদ্যোক্তার দুই-তিন লাখ টাকা ঋণ প্রয়োজন। এ ধরনের প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের ঋণ দেবে সংস্থা দুটি। গতকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় যাতে দ্রুত এই টাকা ছাড়ের ব্যবস্থা করে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সেই অনুরোধ করা হবে।</p> <p>গতকালের সভায় জানানো হয়েছে, গ্যারান্টারের অভাব ও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনের পুরনো সম্পর্ক না থাকায় এসএমই উদ্যোক্তাদের সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না ব্যাংকগুলো।</p> <p>মূলত এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে বাড়তি ব্যয় ও ঋণের অর্থ ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কার কারণে করোনাভাইরাসে প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতটির উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। এমন বাস্তবতায় জেলা পর্যায়ের ব্যাংক কর্মকর্তারা যাতে এসএমই খাতে ঋণ দিতে আগ্রহী হন, সে জন্য জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য শিগগিরই জেলা প্রশাসকদের ডিও লেটার দেবেন শিল্পসচিব কে এম আলী আজম।</p> <p>করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল জোগান নিশ্চিত করতে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে ১৩ এপ্রিল সার্কুলার করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৯ শতাংশ সুদে এসএমই ঋণের ৫ শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি দেবে, বাকি ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন। সাড়ে তিন মাস কেটে গেলেও এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ সন্তোষজনক না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলাদা এক বৈঠকে এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর অনীহার তথ্য তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।</p> <p>এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, প্রণোদনা প্যাকেজ ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। ফলে যেসব পশ্চাৎপদ এলাকায় ব্যাংক নেই, সেখানকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হবেন। অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন যে তারা ক্ষতিগ্রস্ত পুরনো ঋণগ্রহীতাদের প্রাধান্য দেবে।</p>