<article> <p>একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালটা ছিল শিশুদের। ১১টার আগেই খুলে দেওয়া হয় সব ফটক। দুুুুুুুুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। এ সময় প্রাণখুলে স্টলে স্টলে ছুটে বেড়িয়েছে শিশুরা। নতুন বই নিয়ে মেতেছিল খুদে পাঠকের দল। তবে সিসিমপুর কার্টুনের জনপ্রিয় চরিত্র হালুম, টুকটুকি, ইকরি আর শিকুকে নিয়েও আগ্রহ মোটেই কম ছিল না। </p> </article> <article> <p>বিকেল ৩টার পর থেকে শিশু চত্বরের বাইরেও দ্রুত ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার আগেই মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। জায়গায় জায়গায় আড্ডা জমতে দেখা যায়। অনেকেই বই উল্টেপাল্টে দেখছিলেন। বেলা গড়ালে বেড়ে ওঠে বিক্রয়কর্মীদের ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে অমর একুশে বইমেলার চিরচেনা রূপটা দেখা গেল দ্বিতীয় দিনেই।</p> </article> <article> <p>গতকালও অবশ্য মেলা প্রাঙ্গণ অগোছালোই ছিল। কালও বেশির ভাগ স্টলের আশপাশে অব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী পড়ে ছিল। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, কলামিস্ট অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।</p> <p>কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বইমেলা এত বড় করার দরকার ছিল না। কারণ দেশে যথার্থ প্রকাশক হাতে গোনা। বাংলা একাডেমিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিস্তৃত করে এলোমেলো করা হয়েছে। চারদিকে আবর্জনা, ধুলাবালির স্তূপে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।’</p> </article> <article> <p>পাঠক সমাবেশের প্যাভিলিয়নে দেখা গেল কয়েকজন তরুণ লেখক আড্ডায় মেতে আছেন। নতুন কী বই এসেছে জানতে চাইতেই একজন বিক্রয়কর্মী এগিয়ে দিলেন কবি কামাল চৌধুরীর নতুন বই ‘কবিতার অন্বেষণ কবিতার কৌশল’। তিনি বললেন, কবিতা সম্পর্কে জানার আগ্রহী লেখক ও পাঠকের জন্য এটি জরুরি বই। বইটিতে সহজ ভাষায় কবিতার বিভিন্ন উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।</p> <p>কথা হয় অনন্যা প্রকাশনীর কর্ণধার মনিরুল হকের সঙ্গে। তাঁর বিশ্বাস, এ বছর মেলা বেশ জমবে। করোনার কারণে দুই বছর মেলা এলোমেলো ছিল। গত বছর কাগজের দাম বৃদ্ধির একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। এ বছর সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ইতিবাচক। বহু বিখ্যাত বইয়ের প্রকাশক মনিরুল হক জানান, এবার তাঁরা শতাধিক বই প্রকাশ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও গবেষণা।</p> <p>এরই মধ্যে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সাম্প্রতিককালে লেখা গল্পের সংকলন ‘অন্ধকার নামতে পারেনি’ এবং কিশোরদের জন্য লেখা গল্পগ্রন্থ ‘চোর এসে গল্প করেছিল’ বই দুটি মেলায় এসেছে।‌ মুহম্মদ জাফর ইকবালের ছোটদের বই ‘ওগো টুনটুনি কীগো ছোটাচ্চু’ এসেছে। গোয়েন্দা কাহিনি লেখক রকিব হাসানের কয়েকটি বইও এসেছে অনন্যার স্টলে।</p> <p>গতকাল বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৩১টি। এর মধ্যে রয়েছে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : এ প্রোফাইল ইন লিডারশিপ’; নূহ-উল আলম লেনিনের ‘শেখ হাসিনা : ঝড়ের খেয়ার কাণ্ডারি’ (ঝুমঝুমি), আবুল কাশেমের ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অর্থনীতি’ (অন্যপ্রকাশ), রবীন্দ্র গোপের ‘ছাগলের হাসি ও একটি পাউরুটি’ (বিভাস)। জার্নিম্যান প্রকাশনীতে মেলার প্রথম দিনেই এসেছে শিল্পী রফিকুন নবীর সম্পাদিত তাঁর বাবাকে নিয়ে লেখা বই ‘রশিদুন নবী : শিল্পেই যার আনন্দ’।</p> <p> </p> <p>মেলামঞ্চের আয়োজন</p> <p>গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : মহাকবি আলাওল’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মিল্টন বিশ্বাস এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মো. আবুল কাসেম।</p> <p>প্রবন্ধে লোকসাহিত্য গবেষক সাইমন জাকারিয়া বলেন, ‘বাঙালি ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের অবাঙালি গবেষকদের বিচারে খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকের কবি আলাওল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আখ্যান কবি হিসেবে স্বীকৃত। আলাওল রচিত ‘পদ্মাবতী’, ‘সিকান্দরনামা’, ‘তোহ্ফা’, ‘রাগতালনামা’ ও ‘পদাবলী’ এবং কাজী দৌলতের ‘সতী-ময়না লোর-চন্দ্রাণী’র শেষাংশ হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপির সাহায্যে সম্পাদিত গ্রন্থাকারে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন নতুন তথ্যের আলোকে মহাকবি আলাওলকে যে তত্ত্বীয় পরিসরে গবেষকরা উপস্থাপন করছেন তাতে তাঁর সাহিত্যের গভীরতা, দূরদৃষ্টিসম্পন্নতা এবং মহাকাল স্পর্শের ক্ষমতা স্পষ্ট।</p> <p>আলোচকরা বলেন, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিকর্ম ‘ছয়ফুলমুলক-বদিউজ্জামান’। এই কাব্যের পরিচয় শুধু আখ্যানকাব্য বা প্রণয়োপাখ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এই কাহিনি কিচ্ছা আকারে যাত্রাপালায়ও পরিবেশিত হয়েছে। কাজেই এই পুঁথির আবেদন অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত।</p> <p>সভাপতির বক্তব্যে মো. আবুল কাসেম বলেন, মধ্যযুগে প্রচলিত বিশ্বাস ছিল, বাংলা ভাষা মুসলমানের ভাষা নয়, হিন্দুর ভাষা। তার পরও মধ্যযুগের মুসলমান কবিরা বাংলা ভাষায় প্রচুর সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন। মহাকবি আলাওলও এর ব্যতিক্রম নন। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের একাধিক পাঠ থেকে লেখকের অভিপ্রেত পাঠটি পুনরুদ্ধার করাই পাণ্ডুলিপি বা পুঁথি সম্পাদনার মূল উদ্দেশ্য। এই আয়াসসাধ্য কাজে তরুণ গবেষকদের উৎসাহিত করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাচীন ও দুষ্প্রাপ্য পুঁথি ও পাণ্ডুলিপি সহজলভ্য করতে হবে।</p> <p>সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রুবী রহমান, আসাদ মান্নান ও মাহবুব সাদিক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ, মুস্তাফা ওয়ালিদ ও মজুমদার বিপ্লব। এ ছাড়া ছিল ড. আবুল কালাম আজাদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’ এবং ড. মো. শাহাদাৎ হোসেনের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী তিমির নন্দী, মহিউজ্জামান  চৌধুরী, প্রিয়াংকা গোপ, জুলি শারমিলি ও মানিক রহমান। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার, এ কে আজাদ মিন্টু, মো. ফারুক ও রিচার্ড কিশোর।</p> <p>আজ শনিবার বইমেলার তৃতীয় দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। দুপুর ১টা পর্যন্ত থাকবে শিশুপ্রহর।</p> <figure class="image"><img alt="সকাল থেকেই মুখরিত মেলা" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/February/03-02-2024/2_kaler-kantho--2-2024.jpg" width="1000" /> <figcaption>বইমেলায় শিশু প্রহর :  অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন গতকাল ছিল ছুটির দিন। সকালে শিশুপ্রহরে সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি, ইকরি আর শিকুর নাচ-গানের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা।   ছবি : কালের কণ্ঠ</figcaption> </figure> <p> </p> </article>