<p style="text-align:justify">জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, “২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিল। আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছিলেন, ‘সবাই অংশ না নিলে আমরা নির্বাচনে যাব না।’ চিকিৎসার নামে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আটক করা হয়েছিল। আমি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। নির্বাচনের সময় আমি নিজে মন্ত্রী ছিলাম। আমাদের নেতার নির্দেশে আমরা ৩০০ আসনের মধ্যে ২৭০ জন নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। আমি নিজেও নির্বাচন বর্জন করেছি, ২০১৪ সালের সংসদে আমি ছিলাম না।”</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, “পরবর্তীতে আমাকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি রাজি হইনি। কারণ, পল্লীবন্ধু এরশাদের নির্দেশে আমি সবাইকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছিলাম, আমার কথায় ২৭০ জন নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। ২০১৪ সালে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন না করলেও উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির অনেক নেতা আমাকে বলেছেন, ‘কাদের সাহেব, আপনি তো ঘরকাও না ঘাটকাও না।’ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আমরাও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। সরকারের সমালোচনা করার কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আমাকে হঠাৎ উপনেতা পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মতো সরকারের সমালোচনা অনেকেই করেনি। তখন একটি কথার জন্য একটি মানুষ গুম হয়ে যেত, কিন্তু আমরা সরকারের সমালোচনা করেছি। ২০১৪ সালের পর থেকে আমাদের দলের মাঝে সরকারই বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমরা যেতে চাইনি। আমাদের ব্ল্যাকমেইল করে, জোর করে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছিলাম নির্বাচন সঠিক হবে না। নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরে প্রতিদিনই আমরা বলেছি, নির্বাচন সঠিক হয়নি।’ </p> <p style="text-align:justify">জি এম কাদের বলেন, ‘২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি সমর্থন দিয়েছে। ১ জুলাই আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমি ৩ জুলাই সংসদে বক্তৃতায় বলেছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যৌক্তিক। আমার নির্দেশে জাতীয় ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিল। রংপুরে আমাদের একটি ছেলে শহীদ হয়েছেন। রংপুরে আমাদের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। ছাত্রদের সহায়তা করতে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে যৌথসভা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছি, আটক ৬ সমন্বয়কের মুক্তি দাবি করেছি। আমরা সব সময় বলেছি ছাত্রদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন অন্যায় এবং সংবিধানবিরোধী। আমি সব সময় বলেছি, বাংলাদেশে বৈষম্য হচ্ছে। এ দেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। সর্বশেষ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আমরা স্বাধীন একটি দেশ পেয়েছি, মুক্তি পাইনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেশের জনগণ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করবে আমরা তা আগে থেকেই বলেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আমাদের মুক্তি দিয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">জি এম কাদের বলেন, ‘বৈষম্যহীন ও ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি দেশ হবে, এটা এ দেশের মানুষের চাওয়া ছিল। বৈষম্যহীন দেশের জন্য আমাদের দেশের ছাত্র-জনতাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম, অথচ আমাদের নামে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ২০২৪ সালের নির্বাচনে যদি না যেতাম, তাহলে কি আমাদের একটি অংশকে নির্বাচনে নেওয়া হতো না? আমরা নির্বাচনে না গেলে নির্বাচন কি বন্ধ হতো? নির্বাচনের জন্য সরকারের পতন হয়েছে? সরকারের পতন হয়েছে দুর্নীতি, দুঃশাসন আর মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টির জন্য। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করেছিল। জাতীয় পার্টি সব সময় জনগণের পক্ষে কাজ করেছে। অন্যায়ভাবে নির্যাতন হয়েছে জাতীয় পাটির ওপর। ১৯৯০ সালের পর থেকে সব রাজনৈতিক শক্তিই আমাদের ধংস করতে চেয়েছে। শত নির্যাতনের পরও আমরা সব সময় জনগণের পক্ষে থাকতে চেষ্টা করেছি। আমাদের অপবাদ দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা সব সময় জনগণের পক্ষেই ছিলাম। আপনারা খেয়াল করবেন, আমাদের ওপর কতটা জুলুম-নির্যাতন হয়েছে। আমাদের ভুলগুলো ছিল অনিচ্ছাকৃত। তার পরও অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা জনগণের পাশে ছিলাম, পাশেই থাকব।’ </p> <p style="text-align:justify">সোমবার বিকেলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, ‘রাসুল (সা,) পৃথিবীর জন্য নেয়ামতস্বরূপ এসেছিলেন। রাসুলের (সা.) উন্নত চরিত্র অনুসরণেই মানুষের মুক্তি নিহিত।’ রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।</p> <p style="text-align:justify">ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) দোয়া ও আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এ টি ইউ তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, উপদেষ্টা ড. নরুল আজহার শামীম, ড. গোলাম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দীন, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, রফিকুর আলম সেলিম, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সুলতান আহমেদ সেলিম, আহাদ চৌধুরী শাহীন, যুগ্ম মহাসচিব সামছুল হক, অ্যাড. হামিদ ভাসানী ও শামীম আহমেদ রিজভী।</p>