<p style="text-align:justify">গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অংশ নেওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পায় ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে। এ দলগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দলের দলছুট বেশ কিছু নেতা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই নেতারা বেকায়দায় পড়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বর্তমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়।</p> <p style="text-align:justify">আলোচিত-সমালোচিত এসব নেতা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, প্রলোভন ও চাপে পড়ে আওয়ামী লীগের সাজানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে এখন তাঁরা মহাবিপাকে আছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর বর্তমানে তাঁরা দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি দিতে পারছেন না। এমনকি জনরোষে পড়ার ভয়ে ঘর থেকে বাইরে যেতে পারছেন না। অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য এই নেতাদের দোষ স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।</p> <p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। গত ৫ আগস্টের পর আর তিনি জনসম্মুখে আসেননি। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইলে বহুবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।</p> <p style="text-align:justify">নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে জেনারেল ইবরাহিম নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু হঠাৎ জোট ছেড়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তিনি ‘জাতীয় বেঈমান’ আখ্যায়িত হন। নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ) আসনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নির্বাচনী এলাকার তার এক অনুসারী কালের কণ্ঠকে জানান, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেল ইবরাহিম আর অপরিচিত কারো ফোন রিসিভ করছেন না।</p> <p style="text-align:justify">কিংস পার্টির অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে বলে প্রচার করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের কিছুদিন আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এসব দলের নেতাদের সবাই জামানত হারিয়েছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে না, এমন অভিযোগ তুলে দল থেকে পদত্যাগ, এরপর দ্বাদশ নির্বাচনের আগে বিএনএমের দায়িত্ব নেন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। সে সময় তাঁর সঙ্গে যোগ দেন বিএনপি ছেড়ে আসা আরো কয়েকজন নেতা। তবে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেছেন, বিএনএম শেখ হাসিনা সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল।</p> <p style="text-align:justify">ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আবারও বিএনএম সংগঠিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আবু জাফর বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণের কথা বলা। কিন্তু ওই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় আমাদের পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হয়নি। আগামীতেও আমরা সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আপাতত দল গঠনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>আদর্শিকভাবে বিএনপিতেই আছেন তৈমূর</strong></p> <p style="text-align:justify">দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে পাত্তাই পায়নি তৃণমূল বিএনপি। যদিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে দলটির চেয়ারপারসন বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বিজয়ী হয়ে আসতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল। কিন্তু সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তৃণমূল বিএনপির অবস্থান জানতে শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ব্যক্তিগত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।</p> <p style="text-align:justify">তবে দলটির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার ছিলাম। শেখ হাসিনার পক্ষে কখনো আমি একটি কথাও বলিনি। আমি আমার একই আদর্শের আরেকটি দলে যোগদান করেছি। বিএনপি ও তৃণমূল বিএনপি দুটি দলেরই গঠনতন্ত্র ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা লিখেছেন। তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের ভাষণেও আমি খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছিলাম।’</p>