<p>কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টা হিসেবে নির্দলীয় যেসব ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে আপত্তি জানাবে না দলটি। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।</p> <p>দলের নেতারা মনে করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছাত্রনেতাদের মতামতের সঙ্গে তাঁদের দ্বিমত থাকবে না।</p> <p>তবে সরকারের মেয়াদ বেশি দিন হলে তা নিয়ে কিছুটা হলেও আপত্তি তুলতে পারে দলটি। সংবিধানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি।</p> <p>বিএনপি এখন দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির কাছে এই আহ্বান জানান তিনি।</p> <p>মির্জা ফখরুল বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন সরকার গঠন না করলে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে। অবশ্য মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।</p> <p>উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও নতুন সরকার গঠনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।</p> <p>বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সরকার পতনের পর বিএনপি বড় ধরনের শোডাউন করবে। কারণ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে মুক্ত পরিবেশে রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।</p> <p>রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তারেক রহমান।</p> <p>বিএনপি নেতারা বলেন, ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যাঁরাই আসুন, তাঁদের নিয়ে কোনো নেতিবাচক বক্তব্য দেবে না।</p> <p>বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির কাছে সরকার গঠনের বিষয়ে মতামত না চাইলে এ বিষয়টি আলোচনায় আনতে রাজি নন তাঁরা। কাদের উপদেষ্টা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে প্রস্তাব চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং জামায়াতসহ যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাব দেবে দলটি।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুলকে প্রশ্ন করা হয়, কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকার প্রধান হিসেবে চান, আপনারা তাঁকে সমর্থন করেন কি না?</p> <p>জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আমাদের সমর্থন করার বিষয় না। রাষ্ট্রপতি আমাদের প্রস্তাব দিলে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব। সরকার গঠনের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তবে ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। তাঁদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি, তাঁদের সঙ্গে একাত্মবোধ করছি। এখানে বলব, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যে বিষয়টি এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>সরকার পতন আন্দোলনে যুক্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্য সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, পেশাজীবী—যারাই এই সংগ্রামে জড়িত ছিল, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞা জানান তিনি।</p> <p><strong>খালেদা জিয়ার বার্তা</strong></p> <p>বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। বিএনপি চেয়ারপারসন জনগণকে সর্তক থাকতে বলেছেন, এই বিজয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে।</p> <p>খালেদা জিয়া কবেনাগাদ জনসমক্ষে আসবেন—এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সুস্থবোধ করলেই জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন।</p> <p>অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখনই মনে করবেন তখন আসবেন। দল থেকে দ্রুত চলে আসার অনুরোধ করা হয়েছে।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।</p>