<p style="text-align:justify">বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শহর থেকে গ্রাম সকল জনপদ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ বিদ্রোহে মুখরিত। সমগ্র দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, আইনজীবী, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, শ্রমজীবী মানুষসহ ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে শামিল হয়ে গণজাগরণের সৃষ্টি করেছে। গড়ে উঠেছে অভাবনীয় জাতীয় ঐক্য, জনগণের ঐক্য। সমগ্র দেশ আজ গণহত্যাকারী সরকারের বিরুদ্ধে এক একাট্টা। গ্রাম ও শহরের ঘরে ঘরে আর্তনাদের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে খুনি সরকারের পদত্যাগের দাবি। </p> <p style="text-align:justify">রবিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর’ ঘোষণাপত্রের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিএনপি।  </p> <p style="text-align:justify">মির্জা ফখরুল বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গতকাল শনিবার এক দফা দাবি অর্থাৎ স্বৈরাচার সরকারের পদত্যাগের দাবি সম্বলিত : এক দফার ঘোষণাপত্র’ উত্থাপন করে। বিএনপি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তথা আপামর জনসাধারণের উত্থাপিত এক দফা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, শনিবার শহীদ মিনারে জনতার উত্তাল সমুদ্রের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বায়কারীরা এই অবৈধ খুনি সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছে এবং অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে। দেশের সকল মানুষ এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতির এই চরম ক্রান্তি লগ্নে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্র প্রিয় আপামর জনসাধারণ এবং বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রাজপথে নেমে এসে ছাত্র জনতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি। শত শত শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ছাত্রজনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী।</p> <p style="text-align:justify">মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তীব্র গণআন্দোলনে পতন অবশ্যম্ভাবী জেনে আওয়ামী লীগ আবার সংঘাত, সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। গত রাতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে কারাগারে আটক বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা.শাহাদাত হোসেন, বর্তমান আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর চট্টগ্রামের বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায়, মিরপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব কারাগারে আটক আমিনুল হকের পারিবারিক রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়ে ভাংচুর করে। সন্ত্রাসীরা রুমিন ফারহানাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তার বাড়ির আশপাশে অন্যান্য বাড়িতেও সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আমিনুল হকের রেস্টুরেন্টে লুটপাট করে। এ সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।</p> <p style="text-align:justify">সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যভিত্তিতে মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুক্ষণ আগে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম শাহবাগে শান্তিপূর্ণ জনতার সমাবেশে ছাত্রলীগ যুবলীগ আক্রমণ করেছে। এতে একটা জিনিস প্রমাণিত হয় সরকার ছাত্রদের আন্দোলনকে দমন করে দেশে একটা ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়। এবং দেশকে তারা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চায়। তাদের এই অপচেষ্টা কখনো সফল হবে না। </p> <p style="text-align:justify">মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে ছাত্রদের এই যৌক্তিক, ন্যায় সংগত, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। আজ আমারা তাদের নতুন ঘোষণাকে সমর্থন জানাচ্ছি এবং এই ভয়াবহ দানবীয় খুনি শাসক গোষ্ঠীর পতনের লক্ষে সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, পেশাজীবী, শ্রমিক, কৃষকসহ আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে এই অবৈধ খুনি হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।</p> <p style="text-align:justify">এ সময় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরসদস্যসহ প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা কখনো জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। জনগণের রক্তে রাজপথ যেন আর রঞ্জিত না হয়। সন্তানরা যেন আর শহীদ না হন। এটা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা কোনো ব্যক্তির নন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। আপনারা জনগনের কাছে দায়বদ্ধ। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে অন্যায় নির্দেশ বাদ দিয়ে জনগণের পক্ষে কাজ করবেন।</p> <p style="text-align:justify">সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও বেগম সেলিমা রহমান।</p>