<p style="text-align:justify">শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অন্যরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে আন্দোলনের রেশ ধরে রাখতে কিভাবে মাঠে থাকা যায়, আত্মগোপনে থেকে সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। জামায়াতের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তাদেরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় বাকিরা আত্মগোপনে আছেন।</p> <p style="text-align:justify">এর মধ্যে জামায়াত নিষিদ্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত তাদের আরো বেকায়দায় ফেলেছে। নিষিদ্ধের পর দলটির পক্ষ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়, তা নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের আলোচনা।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইন্টারনেট সংযোগ চালুর পরও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। ফলে কোটা আন্দোলন নিয়ে দলগতভাবে কোনো বিশ্লেষণ নেই তাঁদের। তবে দলের করণীয় নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কোটা সংস্কার আন্দোলনের রেশ কাটতে শুরু করেছে। এতে সরকার চাপে পড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমন বাস্তবতায় কী ধরনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে।</p> <p style="text-align:justify">দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বিএনপি সমর্থক পেশাজীবীরা কিছু কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন। গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করা হয়েছে। সাংবাদিক নেতারাও একাধিক কর্মসূচি পালন করেছেন। পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে আরো কয়েকটি কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া আজ বুধবার পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। অন্যান্য দলও গণতন্ত্র মঞ্চের মতো কর্মসূচি নেবে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এসব কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন একজন নেতা।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত কয়েক দিনে একাধিবার অভিযোগ করে বলেছেন, তাঁদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে সাজানো স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের না করে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন করছে সরকার।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মনে করে বিএনপি</strong></p> <p style="text-align:justify">আন্দোলন নিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনা না হলেও দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, এটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। এই আন্দোলনে বিএনপি সম্পৃক্ত থাকলেও অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব তাদের নয়। ছাত্রদের আন্দোলনে জনগণ অংশ নিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">দলের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে কথা বলে তাঁদের এমন ভাষ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা মনে করেন, শুরুতে বিএনপি আন্দোলন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিল। যখন আন্দোলন দানা বেঁধেছে এবং ছাত্ররা মার খাচ্ছিল, নিহত হচ্ছিল; তখন রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই আন্দোলনে যুক্ত হয়।</p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রথমে যুক্ত হলে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রাজনৈতিক হয়ে যেত। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ধরন বোঝাতে বিএনপি শুরুতে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছে, যা নিকট অতীতে দেখা যায়নি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, জনগণ সরকারের ওপর অনেক ক্ষুব্ধ।’</p> <p style="text-align:justify">মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রতি আমাদের আহ্বান, এই আন্দোলনকে তারা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>জামায়াত-শিবির কী করবে</strong></p> <p style="text-align:justify">জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে রাজপথে নেমে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন দলটির নেতাকর্মীরা। ফলে দেশে আবারও সংঘাত-সহিংতা দেখা দিতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। দলটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই ইস্যুতে ঠিক কী ধরনের কর্মসূচি দেবেন তাঁরা সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি। গতকাল সন্ধ্যায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একজন নেতা বলেন, যোগাযোগব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এখনো সমন্বিত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়নি। তবে কোনো না কোনো কর্মসূচি থাকবে বলে আভাস দেন তিনি। </p> <p style="text-align:justify"><strong>জামায়াতকে নিয়ে ঐক্যের বিষয়ে বিএনপিতে দ্বিমত</strong></p> <p style="text-align:justify">কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই জামায়াতকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণায় বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সহিংসতাপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি বলে মনে করেন বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারক। বিএনপিতে আলোচনা আছে, ঐক্যের ঘোষণার যে বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল, তা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে জানানো হয়নি। অথচ তাঁর স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ঐক্যের ডাকে ৩৪ দলের সমর্থন</strong></p> <p style="text-align:justify">বিএনপির ডাকা জাতীয় ঐক্যের ডাকে জামায়াতে ইসলামীসহ ৩৪ দল সমর্থন দিয়েছে। গতকাল জামায়াত এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এর আগে এলডিপি, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ১২টি রাজনৈতিক দল, বাম ঐক্যের চার দল, লেবার পার্টি (একাংশ), এনডিএম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণ অধিকার পরিষদের দুই অংশ ও এবি পার্টি বিবৃতি দিয়ে বিএনপির ডাকা জাতীয় ঐক্যের প্রতি সমর্থন জানায়।</p> <p style="text-align:justify">তবে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত ছয়দলীয় রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ এখনো পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। এই জোটের একাধিক নেতা বলেন, জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে জামায়াত যুক্ত থাকায় তাঁদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।</p>