<p>দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঘুরে দাঁড়াতে নানা কর্মকৌশল নিয়ে দলের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করছে বিএনপি। কিন্তু নতুন পথচলার শুরুটা কিভাবে হবে সেই সিদ্ধান্তে এখনো পৌঁছাতে পারেননি দলের নীতিনির্ধারকরা। </p> <p>বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, দলের স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ কয়েকটি বৈঠকে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দল এবং কূটনৈতিক তৎপরতার লক্ষ্য ঠিক করতে আলোচনা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকরা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিলেও এখনো পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি।</p> <p>জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি বড় আন্দোলনের পর এর মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ সময়সাপেক্ষ বিষয়। তা ছাড়া জ্যেষ্ঠ নেতারা কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন মাত্র। ফলে সবার উপস্থিতিতে সেভাবে আলোচনার সুযোগ এত দিন ছিল না।’</p> <p>গত ২০ মার্চ ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।</p> <p>সামাজিক এই আন্দোলনে বিএনপির যুক্ত হওয়া ঠিক হবে কি না তা নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রশ্ন তুললেও দলটি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অবস্থান জানায়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় দলে এক ধরনের বিভ্রান্তি আছে। </p> <p>গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে বিএনপি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি ও তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলো এই ব্যর্থতার মূল্যায়নও করেছে। তাদের মূল্যায়নে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নানা পরামর্শও ছিল।</p> <p>গত এক মাসে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় একটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা গেছে যে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা আছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরানো যাচ্ছে না, এই ধারণাও তাঁদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।</p> <p>এই পর্যায়ে এখন দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েই বিএনপির ভেতরে আলোচনা হচ্ছে বেশি।</p> <p>নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, বিএনপির পরিকল্পনা কী? দলের জাতীয় কাউন্সিল কবে হবে? দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জানান, দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা তৈরির বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর চাপও দিচ্ছেন দায়িত্বশীল নেতারা।</p> <p>বিএনপিসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনায় দলের শীর্ষ পর্যায়ে কিছু ভুল-বোঝাবুঝি ও সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গত ২৮ অক্টোবরের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের বড় অংশটি আত্মগোপনে চলে যায়। আন্দোলনের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনুপস্থিতি নিয়ে দলে এক ধরনের সমালোচনা আছে।</p> <p>এই পরিস্থিতিতে বিএনপি-সমর্থক বুদ্ধিজীবী, যুগপৎ আন্দোলনরত জোটের নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলের ভেতরকার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে এবং বাইরের ঝুঁকিগুলো সামলে আগামী দিনে রাজনৈতিক সুযোগগুলো বিএনপি কতটা কাজে লাগাতে পারবে, তার ওপর নির্ভর করছে দলটির ভবিষ্যৎ। </p> <p>দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে, কোন দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে। ভারত ও চীনের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী হবে? সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বিষয়েও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কোনো লক্ষ্য স্থির করতে পারেনি। ২৮ অক্টোবর পরবর্তী আন্দোলনের মাঝপথে এসে ভারত বিরোধিতা শুরু করেন দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা। সেই ধারাবাহিকতায় এখনো ভারতের সমালোচনায় মুখর আছেন দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বেশ কয়েকজন। এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সমন্বিত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, যার ভিত্তিতে দলের সব নেতা ঐক্যবদ্ধভাবে এক সুরে ভারতের সমালোচনা করবেন।</p> <p>কূটনীতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রাখেন এমন একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি চীনের গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতার বৈঠক হয়েছে। নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশের বিষয়ে চীনের মূল্যায়ন বেশ ভিন্ন। ফলে চীনের সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের বোঝাপড়া তৈরি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।</p> <p>বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, একটি সমন্বিত ভবিষ্যৎ পথনকশা তৈরির বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতা কাজ করছেন।</p> <p>এ ছাড়া আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির সিদ্ধান্ত কী হবে সে বিষয়েও দলের নেতাকর্মীরা কিছু জানেন না। ফলে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতারা এখনো কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দলের পরবর্তী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।</p> <p>জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির লক্ষ্যও স্পষ্ট নয়। দ্বিধাবিভক্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখাটাই এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দলের নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, জাপা সরকারের সঙ্গে সখ্য ধরে রাখতে চায়। আবার বিরোধী দল হিসেবে সরকারের সমালোচনায়ও থাকতে চায়।</p> <p>এদিকে বিএনপির অন্যতম প্রধান মিত্র জামায়াত তাদের সংগঠন গোছানো এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।</p>