<p>বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। </p> <p>তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে যে নির্বাচন হয় সেটা ঐতিহাসিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। সেই নির্বাচনকে সবাই সম্মানের চোঁখে দেখে। কিন্তু গতকাল বুধবার নির্বাচনকে ঘিরে যা ঘটেছে তা দেশের নির্বাচনব্যবস্থার জন্য কলঙ্কজনক ঘটনা। আমরা ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছি। এই ঘটনা প্রমাণ করে, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই। এখন মনে হয় যে দেশে সরকারও নেই। কারণ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনব্যবস্থা তারা ভেঙে দিয়েছে।</p> <p>তিনি বলেন, আগে প্রেস ক্লাবের নির্বাচনব্যবস্থা নষ্ট করেছে। তারা এভাবে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। আসলে আওয়ামী লীগ হলো চোর। সব ক্ষেত্রে তারা চুরি করে। এর চেয়ে বড় চোর বিশ্বে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন তারা যমুনা নদী সংকুচিত করতে প্রকল্প নিয়েছে। </p> <p>বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে কষ্ট হয় যে যখন দেখি কিছু বুদ্ধিজীবী এই নেত্রীকে সাপোর্ট করেন। তার অন্যায়গুলোকে সমর্থন করেন। এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? চিৎকার দিয়ে বলতে পারি- আমরা এই বাংলাদেশ চাইনি। আজকে দেশের মানুষ ভাত পায় না, চাল পায় না। একজন শ্রমিক তার ছেলেকে প্রোটিন হিসেবে ডিমও খাওয়াতে পারে না।</p> <p>মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। আগুনসন্ত্রাস করে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। আজকে তারা সেটা বাতিল করে ফেলেছে। এখন দেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন! আমাদের আন্দোলন চলছে। ইতোমধ্যে আমাদের আন্দোলনে ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছে। আসুন আমরা সবাই মিলে কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।</p> <p>১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় বিএনপি ঘোষিত ‘আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২৭ দফা রূপরেখার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা’ শীর্ষক এই আলোচনাসভার আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট।</p> <p>সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীরপ্রতীক, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান আব্দুল করিম আব্বাসী, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান ক্বারী মুহাম্মদ আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, ন্যাপ-ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিমসহ ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।</p> <p>সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব। ২৭ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন, দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য যুগপৎ আন্দোলনে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আপনারা সবাই শরিক হবেন এই প্রত্যাশা করি।</p> <p>১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, এই সরকার দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে গেছে। তারা গোশতের অর্থনীতি, রাজনীতি সব কিছুই তছনছ করে দিয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে যা করেছে তা নজিরবিহীন। আসলে সেটা হলো পরিকল্পিত ঘটনা। এতেই বোঝা যায়, আগামী নির্বাচন কেমন হবে? এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এটা কোনো পাগলও বিশ্বাস করে না। আমরা এই ঘটনার নিন্দা প্রস্তাব করছি। সুতরাং বিএনপি যে ২৭ দফা ঘোষণা দিয়েছে, তার আলোকে দেশ গঠন করতে হবে। নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে। অর্থাৎ ২৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই জন্য বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করতে হবে। কেননা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন গুণগত পরিবর্তন প্রয়োজন।</p>