<p>মুসলিম আইন অনুসারে মুতাওয়াল্লি ওয়াক্ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপক। শিয়া আইনে মুতাওয়াল্লি নিয়োগ বাধ্যতামূলক হলেও সুন্নি আইনে তা বাধ্যতামূলক নয় (ঐচ্ছিক)। ইসলামী আইনানুসারে ওয়াক্ফ সম্পত্তিতে মুতাওয়াল্লির কোনো অধিকার নেই এবং সম্পত্তি তার ওপর ন্যস্তও নয়। আধুনিক আইনের ‘ট্রাস্টি’র সঙ্গে মুতাওয়াল্লির প্রায়োগিক পার্থক্য আছে। মুতাওয়াল্লি একজন ব্যবস্থাপক বা পরিচালক মাত্র।</p> <p><strong>কারা মুতাওয়াল্লি হতে পারবে : </strong>যেকোনো সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক ও ওয়াক্ফ ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম ব্যক্তি মুতাওয়াল্লি হিসেবে নিয়োগ পেতে পারে। অবশ্য একজন অপ্রাপ্ত শিশুও মুতাওয়াল্লি হতে পারে যদি ওয়াক্ফ সম্পত্তি বংশীয় ধারায় পরিচালিত হয়ে আসে অথবা ওয়াক্ফ দলিলে উত্তরাধিকারীদের তত্ত্বাবধানের শর্তারোপ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ওয়াক্ফ সম্পত্তি পরিচালনার ভার শিশুর ওপর ন্যস্ত হবে। নারীদের মুতাওয়াল্লি হওয়ার ক্ষেত্রে আইনত কোনো বাধা নেই। কিন্তু যেখানে মুতাওয়াল্লিকে নানামুখী ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে হয় সেখানে নারী ও অমুসলিমরা মুতাওয়াল্লি হতে পারে না।</p> <p><strong>মুতাওয়াল্লি কে নিয়োগ দেবে : </strong>নিম্নোক্ত ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ মুতাওয়াল্লি নিয়োগ ও প্রত্যাহারের ক্ষমতা রাখেন। তাঁরা হলেন—</p> <p><strong>১. প্রতিষ্ঠাতা : </strong>ওয়াক্ফ প্রতিষ্ঠাতা মুতাওয়াল্লি নিয়োগের পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা রাখেন। তিনি নিজেকেও প্রথম মুতাওয়াল্লি ঘোষণা করতে পারেন। তিনি পরবর্তী মুতাওয়াল্লি নিয়োগে বিধি-নিষেধ প্রণয়ন করতে পারেন। মৃত্যুশয্যায় তিনি একজন অপরিচিত ব্যক্তিকেও মুতাওয়াল্লি নিয়োগ দিতে পারেন।</p> <p><strong>২. মুতাওয়াল্লি : </strong>যদি কোথাও প্রতিষ্ঠাতা বা ওয়াকিফ (ওয়াক্ফকারী) মারা যায় এবং পূর্ব থেকে মুতাওয়াল্লি নিয়োগে কোনো নীতিমালা না থাকে, তবে বর্তমান মুতাওয়াল্লি তাঁর মৃত্যুশয্যায় বা শারীরিক সামর্থ্য হারানোর পর তাঁর উত্তরসূরি নির্ধারণ করতে পারবেন। যদি যৌথ মুতাওয়াল্লিদের একজন মারা যায় এবং ওয়াক্ফনামায় এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকে, তবে অবশিষ্টদের একজন ওফাক্ফ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।</p> <p><strong>৩. আদালত : </strong>যখন প্রতিষ্ঠাতা বা ওয়াকিফ কোনো মুতাওয়াল্লি নিয়োগ না দেন অথবা তিনি মুতাওয়াল্লি হওয়ার যোগ্যতা না রাখেন, তখন আদালত একজন মুতাওয়াল্লি নিয়োগ দিতে পারবেন। জেলা আদালতের ওপরই মুতাওয়াল্লি নিয়োগের দায়িত্ব বর্তাবে। মুতাওয়াল্লি নিয়োগের সময় আদালত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করবে—</p> <p>ক. আদালত নিয়ন্ত্রণকারীদের নির্দেশনা উপেক্ষা করবে।</p> <p>খ. তবে অপরিচিত ব্যক্তির ওপর বর্তমান ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কোনো ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেবে।</p> <p><strong>৪. সংঘবদ্ধ মানুষ :</strong> মসজিদ ও কবরস্থানের মতো যেসব ওয়াক্ফ সম্পদ পুরোপুরি স্থানীয়, সেখানে সংঘবদ্ধ স্থানীয় মানুষ মুতাওয়াল্লি নিয়োগ দিতে পারবে।</p> <p><strong>মুতাওয়াল্লির ক্ষমতা : </strong>মুতাওয়াল্লি ওয়াক্ফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার ক্ষমতা রাখে। যে উদ্দেশ্যে সম্পদ ওয়াক্ফ করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যে সে সম্পত্তি ব্যবহারের পূর্ণ ক্ষমতা রাখে। আদালতের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে সে সম্পত্তি বিচ্ছিন্ন (বিক্রি বা দান) করার ক্ষমতা রাখে। আদালতের পূর্বানুমতি ছাড়া এমনটি করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। ওয়াক্ফ আইন ১৯৫৪ কার্যকর হওয়ার আগে মুতাওয়াল্লি ওয়াক্ফ বিষয়ে মামলা করার ক্ষমতা রাখত। কিন্তু বর্তমান আইনে এই ক্ষমতা শুধু ওয়াক্ফ বোর্ডকেই দেওয়া হয়েছে।</p> <p><strong>মুতাওয়াল্লি বরখাস্ত করা : </strong>মুতাওয়াল্লি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠাতা কোনো ব্যক্তিকে বরখাস্ত করার অধিকার রাখে না। যদি না ওয়াক্ফনামাতে তাকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। কোর্ট মুতাওয়াল্লি বরখাস্ত করার ক্ষমতা রাখেন। আদালত ভুলভ্রান্তি, বিশ্বাস ভঙ্গ, অযোগ্যতা অথবা যেকোনো গ্রহণযোগ্য কারণে মুতাওয়াল্লি বরখাস্ত করতে পারেন।</p> <p><em>লইয়ার্স জ্ঞান ডটকম অবলম্বনে</em></p>