<p>শিষ্টাচার হলো ভদ্র, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণ, যা মানুষকে সংযমী ও বিনয়ী করে তোলে। আদর্শ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামে শিষ্টাচারকে নবুয়তের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়তের ২৫ ভাগের এক ভাগ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৬)</p> <p>ইসলামের কয়েকটি সামাজিক শিষ্টাচার নিম্নরূপ—</p> <p>জান-মালের নিরাপত্তা দান</p> <p>একজন মানুষের ঈমান ও ইসলামের মাত্রা নিরূপণে মানবিক, কল্যাণকামী ও অন্যের জন্য নিরাপদ হওয়ার বিষয়টি খুবই জরুরি। নামাজ-বন্দেগি অপরিহার্য হলেও মুমিন-মুসলিমের পরিচয়ে এগুলোর আধিক্যকে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ ইবাদতের সম্পর্ক ব্যক্তির সঙ্গে। নিজের পরিচয় নিজে প্রদান করলে ইনসাফ হয় না। অন্যের দ্বারা পরিচয় পেতে অন্যের সঙ্গে আচরণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কাজেই হাদিসে মুমিন-মুসলিমের পরিচয়ে আচরণের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এটি ইসলামী সমাজব্যবস্থার অন্যতম সৌন্দর্য। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার জিহ্বা ও হাতের (অনিষ্ট) থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২৭)</p> <p><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <p><img alt="মুসলিম সমাজের নেতারা যেমন হবেন" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/05/22/1716317638-74cd6044b10f10a7e95be6f7277bd56d.jpg" width="100" /></p> <p>মুসলিম সমাজের নেতারা যেমন হবেন</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2024/05/22/1390187" target="_blank"> </a></p> <p>অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া</p> <p>জীবনের সব ক্ষেত্রে অন্যকে স্মরণ রেখে চলা। অর্থাৎ সব সময় নিজের স্বার্থকে না দেখে অন্যকেও নিজের মতো করে ভাবতে শেখা। আসলেই যদি এমনটি হতো, তাহলে সমাজে মারামারি-হানাহানির কোনো ঘটনাই সামনে আসত না। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১২)</p> <p><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <p><img alt="নামাজে মনোযোগ ধরে রাখব যেভাবে" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/27/1735318567-0efa18d265c9180923b3cd339f476434.jpg" width="100" /></p> <p>নামাজে মনোযোগ ধরে রাখব যেভাবে</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2024/12/28/1462042" target="_blank"> </a></p> <p>ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করা</p> <p>সমাজের সব মানুষ—বয়স বা সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে দুই ধরনের হয়। কেউ বড়, কেউ ছোট। সবাই যদি এমন ভেবে বড়দের প্রতি সম্মান-মর্যাদা আর ছোটদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসার আচরণ করে তাহলে সমাজের চিত্রই পাল্টে যাবে। আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন বয়স্ক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে আসে। লোকেরা তার জন্য পথ ছাড়তে বিলম্ব করে। (তা দেখে) রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যে লোক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৯)</p> <p>অন্যের মৌলিক অধিকার আদায় করা</p> <p>সমাজে একসঙ্গে চলতে গেলে একে অন্যের প্রতি বেশ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য এসে যায়। সেগুলোর বাস্তবায়ন পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, দায়িত্ববোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে। এমন ছয়টি হক বা অধিকারের কথা হাদিসে এসেছে। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুসলিমের প্রতি মুসলিমের হক ছয়টি। জিজ্ঞাসা করা হলো, সেগুলো কী, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, ১. তার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম করবে, ২. তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি গ্রহণ করবে, ৩. সে তোমার কাছে সৎ পরামর্শ চাইলে, তুমি তাকে সৎ পরামর্শ দেবে, ৪. সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে, তার জন্য তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) রহমতের দোয়া করবে, ৫. সে অসুস্থ হলে তার সেবা করবে এবং ৬. সে মারা গেলে তার (জানাজার) সঙ্গে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ৫৪৬৬)</p> <p>আস্থার জায়গায় উপনীত হওয়া</p> <p>ইসলামী সমাজব্যবস্থার আরেকটি গুণ হলো—একে অন্যের প্রতি সহনশীল, কল্যাণকামী ও বিশ্বাসী হওয়া। কাউকে ভয় দেখিয়ে, ত্রাস সৃষ্টি করে আর যাই হোক ঈমানদার হওয়া যায় না। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে সে আমাদের (মুসলিমদের) দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮২)</p> <p>সম্প্রীতি বিনষ্টকারী আচরণ থেকে বিরত থাকা</p> <p>সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে বা সমাজজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, এমন সব আচরণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ এসব বিষয়ে সতর্ক করেছেন। যেমন—১. উপহাস করা, ২. খোঁটা দেওয়া, ৩. মন্দ নামে ডাকা, ৪. অনুমান করা, ৫. দোষ অনুসন্ধান করা, ৬. কুৎসা করা ইত্যাদি সমাজজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।</p> <p>সুরা হুজুরাতে এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকার জন্য কঠিনভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং এসবের ক্ষতি চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন—আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অন্য কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তাওবা করে না তারাই তো জালিম। হে ঈমানদাররা! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থাক; কারণ কোনো কোনো অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান কোরো না এবং একে অন্যের গিবত কোরো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে করো। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১১- ১২)</p> <p>পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের সামাজিক শিষ্টাচার প্রকৃত অর্থে সমাজে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে, যা অন্য কোনো সমাজব্যবস্থায় সম্ভব নয়। কারণ মুসলমান পরকালের ভীতি ও জবাবদিহির কারণেই এসব শিষ্টাচার বাস্তবায়ন করে, এখানে ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য পায় না।</p>