<p>ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে নামাজ। নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বিভিন্ন হাদিসে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। আমাদের মাঝে অনেকে রয়েছে, যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করে, অনেকে আছে মসজিদে যায় বটে; কিন্তু সামনের কাতারে নামাজ পড়ার আগ্রহ জাগে না বা আগ্রহ হয় না। প্রিয় নবীজি (সা.) আমাদের সতর্ক করেছেন।</p> <p>নবীজি (সা.) আমাদের জন্য সর্বদা আমাদের জন্য কল্যাণকে পছন্দ করতেন। রাসুল (সা.) ভালোবাসতেন, তাঁর উম্মত যেন কল্যাণের পথে পরস্পর প্রতিযোগিতা করে। তারা যেন জান্নাতের উঁচু স্তর লাভ করে।  এ জন্য তিনি আমাদের ভালো কাজে পরস্পর প্রতিযোগিতার প্রতি উৎসাহ প্রদান করতেন।</p> <p>প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করার কী ফজিলত তা তিনি বর্ণনা করেছেন। কারণ প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করার অর্থ হচ্ছে, আমার ভেতর নামাজের প্রতি আগ্রহ আছে। হাদিসে প্রথম কাতারে নামাজ আদায়কারীর জন্য বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।<br /> আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আজানে ও প্রথম কাতারে কী (ফজিলত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা জানত, লটারির মাধ্যমে নির্বাচন ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হতো, তাহলে অবশ্যই তারা লটারির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিত। জোহরে নামাজ প্রথম ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফজিলত) রয়েছে, যদি তারা জানত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ইশা ও ফজরের নামাজ (জামাআতে) আদায়ের কী ফজিলত তা যদি তারা জানত, তাহলে নিঃসন্দেহে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তারা তাতে উপস্থিত হতো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৫, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৩৭)</p> <p><strong>ফেরেশতাদের দোয়া লাভ</strong></p> <p>প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের জন্য এই ফজিলত কেন তাও নবীজি বলে দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, যারা প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করে, তাদের জন্য ফেরেশতারা কল্যাণের প্রার্থনা করেন। ফেরেশতা আল্লাহ তাআলার এমন সৃষ্টি, যাদের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। বারা ইবনে আজিব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের কাতারের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে গিয়ে আমাদের পায়ের গোড়ালি ও বক্ষসমূহ হাতের দ্বারা সোজা করে দিতেন এবং বলতেন, তোমাদের কাতার বাঁকা করো না। যদি এরূপ করো তবে তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হবে। আরো বলতেন, মহান আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ প্রথম কাতারসমূহের ওপর রহমত বর্ষণ করে থাকেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৬৪)</p> <p>অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সা.) প্রথম কাতারে নামাজ আদায়কারীর জন্য তিনবার দোয়া করেছেন। হজরত ইরবাজ বিন সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন আর দ্বিতীয় কাতারের মুসল্লিদের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। (সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস : ৯৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭১৪১)</p> <p><strong>কল্যাণ থেকে বঞ্চিত</strong></p> <p>সামনের কাতারে নামাজ আদায় না করা বা এ ব্যাপারে মনের ভেতরে আগ্রহ না জাগার অভ্যাস অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে দেয়। আমাদের মাঝে এমন অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা মনে করে যে মসজিদে এসে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করলেই চলবে। এটা একদিক থেকে ভালো, বাকি এতটুকুতেই তুষ্ট থাকা, এতেই সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া কোনো মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না; বরং শুধু মসজিদে এসে নামাজ আদায় করাই নয়, মুমিনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হওয়া উচিত, প্রথম কাতারে ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং এর গুরুত্ব নিজের মনে ফুটে ওঠা। যার ভেতরে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার অভ্যাস থাকবে সে অবশ্যই নামাজের প্রতি যত্নবান হবে। তার প্রতি আল্লাহর রহমত ঢের বেশি থাকবে।</p> <p>আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবাগণকে পেছনের কাতারে দেখে বললেন, সামনে এসো এবং আমার অনুসরণ করো, অতঃপর দ্বিতীয় কাতারের লোকেরা তোমাদের অনুসরণ করবে। এমন কিছু লোক সব সময় থাকবে, যারা নামাজে পেছনে থাকবে। আল্লাহ তাদের (নিজ রহমত হতেও) পেছনে রাখবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৩৮, সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৬৭৯)</p> <p>অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাদের আপন রহমত, মহাঅনুগ্রহ, উচ্চ মর্যাদা, ইলম এবং এ জাতীয় জিনিস থেকে হটিয়ে দেবেন।</p> <p>আমাদের ভেতরে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যাবে, যারা মসজিদে প্রবেশ করে দরজার আশপাশে কোথায় ফাঁকা জায়গা আছে, এমন জায়গায় খুঁজতে থাকে। এর কারণ হচ্ছে, নামাজ শেষে যেন সহজেই মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া যায়। তাদের যতই প্রথম কাতারের দিকে যেতে বলা হয়, তারা অন্যদের পাঠিয়ে দেয়, নিজে যেতে বিলকুল রাজি না। এ ধরনের মনোভাব, এমন চিন্তা লালন করা হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর। এমন ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের ইবাদতে পিছিয়ে থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের সব কল্যাণ থেকে পিছিয়ে দেন। এ জন্য এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা খুব বেশি জরুরি।</p> <p>আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন মনমানসিকতা থেকে হিফাজত করুন।</p> <p> </p>