<p style="text-align:justify">মানুষ স্বাভাবিক জীবনে তিনটি সময় পার করে। বাল্যকাল, যৌবনকাল ও বৃদ্ধকাল। এই তিন সময়ের দুই সময়ে সে থাকে অপূর্ণ। বাল্যকালে এগিয়ে যায় পূর্ণতার দিকে। আর বৃদ্ধকালে কমতে থাকে অর্জিত পূর্ণতা। শুধু যৌবনকালে মানুষ পূর্ণ থাকে। সে সব কিছু করতে পারে। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং সমাজের জন্য।</p> <p style="text-align:justify"> একটি উন্নত দেশ ও আদর্শ জাতি গঠনে বড় ভূমিকা ও অবদান রাখে দেশের যুবসমাজ। তাদের সুচিন্তা ও সুষ্ঠু মনন গঠনের মধ্য দিয়ে একটি দেশ তার লক্ষ্যে পৌঁছতে শক্তি ও সাহস পায়। সুশীল সমাজ ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র গঠনে যুবশক্তির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ জন্য যৌবনকালকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে।</p> <p style="text-align:justify">রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাঁচটি বস্তুকে পাঁচটি বস্তুর আগে গুরুত্ব দেবে এবং মূল্যবান মনে করবে। (১) বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, (২) অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, (৩) দরিদ্রতার আগে সচ্ছলতাকে, (৪) ব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং (৫) মৃত্যুর আগে জীবনকে।’<br /> (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)</p> <p style="text-align:justify">এই অমূল্য নিয়ামতের যথাযথ সংরক্ষণ এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করা সব মুসলিম যুবকের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) মূল্যবান উপদেশ দিয়ে গেছেন। যথা—</p> <p style="text-align:justify"><strong>সুন্দর চরিত্র গঠনে প্রয়াসী হওয়া</strong></p> <p style="text-align:justify">যে সমাজ বা দেশে যুবসমাজের চরিত্র ভালো থাকবে, সে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন ঠিক থাকবে। আর যে সমাজে যুবকদের চারিত্রিক ও নৈতিক অবক্ষয় দেখা দেবে, সে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন ঠিক থাকবে না এবং সে সমাজের পতন ও ধ্বংস অনিবার্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা, যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ (জামিউস সগির : ২১৮)</p> <p style="text-align:justify">রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সুন্দর চরিত্র গঠনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমার চরিত্রকে সুন্দর করুন, যেমনিভাবে আপনি আমার শারীরিক গঠনকে সুন্দর করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৩৮২৩)</p> <p style="text-align:justify"><strong>সুন্দর চরিত্র গঠনে করণীয়</strong></p> <p style="text-align:justify">১. মাদক পরিহার : মাদক গ্রহণের ফলে মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিকতা ও সক্রিয়তা নষ্ট হয়ে যায়। নানা অপরাধ-অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। একসময় মানবজীবনকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। এ জন্য মাদক গ্রহণকে ইসলামে বড় অপরাধ তথা হারাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নেশাদ্রব্যই মাদক। আর প্রত্যেক নেশাদ্রব্যই হারাম।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০০৩)</p> <p style="text-align:justify">২. পঞ্চেন্দ্রিয়ের হেফাজত : পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াকে উপলব্ধি করে। দুনিয়ায় যেমন কিছু বিষয় ভালো, তেমনি কিছু বিষয় মন্দ। তাই সুন্দর জীবন ও চরিত্র গঠনে জরুরি হলো পঞ্চেন্দ্রিয়ের উত্তম ব্যবহার এবং গর্হিত বিষয় থেকে তা হেফাজত করা। সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য নবীজি (সা.) দোয়া শিখিয়েছেন—‘হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই—আমার শ্রবণশক্তির অনিষ্ট থেকে, দৃষ্টির অনিষ্ট থেকে, যবানের অনিষ্ট থেকে, অন্তরের অনিষ্ট থেকে এবং আমার আকাঙ্ক্ষার অনিষ্ট থেকে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৫১)</p> <p style="text-align:justify">৩. বিজাতীয় সংস্কৃতি প্রতিহত করা : মানুষ কৃষ্টি-কালচার-সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে নিজ আদর্শ ও বিশ্বাসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। বর্তমানে মুসলিম যুবকদের নানাভাবে বিজাতীয়করণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যুবসমাজের উচিত এসব শুধু পরিহার নয়, বরং প্রতিহত করে নিজেদের ও সমাজকে রক্ষা করা। নবীজি (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের ছেড়ে অন্য কারো সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইহুদিদের সাদৃশ্য অবলম্বন কোরো না, আর খ্রিস্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন কোরো না।’ (তিরমিজি, সহিহুল জামে, হাদিস : ২৬৯৫)</p> <p style="text-align:justify"><strong>জ্ঞানার্জন</strong></p> <p style="text-align:justify">ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়, ‘পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ১)</p> <p style="text-align:justify">দ্বিনি জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জনও ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কাম্য।</p> <p style="text-align:justify"><strong>আল্লাহর আনুগত্য করা</strong></p> <p style="text-align:justify">যৌবনে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে কাটানোর অনেক গুরুত্ব, আলাদা তৃপ্তি ও মূল্যায়ন রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত শ্রেণির ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার নিজের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এর মধ্যে একজন সেই যুবক, যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)</p> <p style="text-align:justify"><strong>সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা</strong></p> <p style="text-align:justify">বর্তমানে যুবকদের বড় একটা অংশ বেকার ও হতাশার জীবনযাপন করছে। আল্লাহর ইবাদত-আনুগত্য ও তাঁর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ভরসা ছাড়া পার্থিব নানা উপায়-উপকরণের মাধ্যমে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত ও উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে যখন ব্যর্থ, তখন তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশা ও অমানিশার অন্ধকার। ইসলাম তাদের এ অবস্থা থেকে উঠে এসে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখা এবং তাঁর সাহায্য কামনার নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে তরুণ!...তুমি আল্লাহর নির্দেশনা পালন করবে, তুমি তাকে তোমার সামনে পাবে। কারো কাছে সাহায্য চাইতে হলে আল্লাহর কাছে চাও। জেনে রেখো, পুরো জাতি তোমার উপকার করতে চাইলেও আল্লাহ তোমার জন্য যতটুকু লিখে রেখেছেন, ততটুকু হবে। তারা তোমার ক্ষতি করতে চাইলেও আল্লাহ তোমার জন্য যতটুকু লিখে রেখেছেন, ততটুকু হবে। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠাগুলো শুকিয়ে গেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৬)</p> <p style="text-align:justify"><strong>দ্বিনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা</strong></p> <p style="text-align:justify">আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন বিধান ইসলামের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে যুবসমাজের ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমেই। ইসলামের প্রথম যুগে রাসুল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেসব সাহাবি তাঁর প্রতি ঈমান আনে, তাঁকে সাহায্য-সহযোগিতা করে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) হিদায়াতের যে আলোকবর্তিকা নিয়ে আসেন, তার অনুসরণ করে, তারা সবাই ছিল যুবক! ইসলামী দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অনেক সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের হাতেই ন্যস্ত করেন এবং তাদের হাতে দায়িত্ব সমর্পণ করেন। যেমন—উসামা ইবনু জায়েদ (রা.)-কে আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর মতো বড় সাহাবিদের উপস্থিতিতে মাত্র ১৮ বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধের সেনাপতি নিয়োগ করেন। হুনাইনের যুদ্ধে যাওয়ার সময় উত্তাব ইবন উসাইদ (রা.)-কে মাত্র ২০ বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কার গভর্নর নিয়োগ করেন। এ ছাড়া ইসলামের ইতিহাসে ইসলামের ঝাণ্ডা বহন করা, ইসলামের পতাকাকে সমুন্নত রাখা এবং ইসলামের আলোকে দুনিয়ার আনাচকানাচে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যুবকদের ভূমিকার বিষয়ে আরো অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">কোনো কিছু প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুবকরা যেমন বদ্ধপরিকর, তেমনি কোনো কিছু ভাঙনেও তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এদের শক্তি হচ্ছে এদের আত্মবিশ্বাস। এরা যৌবনের তেজে তেজোদ্দীপ্ত। তাই জাতীয় কল্যাণ প্রতিষ্ঠাও এদের কাছে অসম্ভব নয়। এদের দুর্দমনীয় শক্তিকে ন্যায়ের পথে চালিত করলে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হওয়া যেমন মোটেই অসম্ভব নয়, তেমনি অন্যায়ের পথে পরিচালিত করলে অন্যায় প্রতিষ্ঠা হওয়াও মোটেই অস্বাভাবিক নয়। যুবশক্তিকে তাই ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধে কাজে লাগাতে হবে।</p>