<p style="text-align:justify">যেসব আমলের কল্যাণ অন্যদের মধ্যে সঞ্চারণ করে এবং দেশ ও সমাজের উপকারে আসে তার অন্যতম হলো জনপদ পাহারা দেওয়া। এই পাহারা দ্বিন-ধর্ম, সমাজ-স্বদেশ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ—সব কিছুর জন্য হতে পারে। ইসলামে এই জনপদ পাহারার কাজকে শবেকদরের ইবাদত থেকেও উত্তম বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের কদরের রাতের থেকেও শ্রেষ্ঠ রাতের কথা জানাব না? সে ওই পাহারাদারের রাত, যে ভয়সংকুল স্থানে পাহারা দেয়, তার আশঙ্কা হয় যে সে হয়তো তার পরিবারে জীবিত ফিরতে পারবে না।’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ২৪২৪; সহিহুত তারগিব, হাদিস : ১২৩২)</p> <p style="text-align:justify">আল্লাহর পথে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জনপদ পাহারা দানকারী জাহান্নামে যাবে না। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘দুটি চোখকে আগুন স্পর্শ করবে না। এক চোখ যে আল্লাহর ভয়ে কান্না করে। আরেক চোখ যে আল্লাহর পথে রাত জেগে পাহারা দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৯)</p> <p style="text-align:justify">জনপদ পাহারা দেওয়ার প্রতিদান জান্নাত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দিনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম এবং শালের গোলাম। তাকে দেওয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। এরা লাঞ্ছিত হোক, অপমানিত হোক। (তাদের পায়ে) কাঁটা বিদ্ধ হলে তা কেউ তুলে দেবে না। ওই ব্যক্তির জন্য (জান্নাতের) সুসংবাদ, যে ঘোড়ার লাগাম ধরে জিহাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যার চুল উষ্কখুষ্ক এবং পা ধূলি মলিন। তাকে পাহারায় নিয়োজিত করলে পাহারায় থাকে আর (দলের) পেছনে পেছনে রাখলে পেছনেই থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৮৭)</p> <p style="text-align:justify">সাহল ইবনুল হানজালিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, হুনাইনের যুদ্ধের রাতে নবী (সা.) বলেন, আজ রাতে কে আমাদের পাহারা দেবে? আনাস ইবনু আবু মারসাদ আল-গানাবি (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি। তিনি বলেন, তাহলে ঘোড়ায় চড়ো। তিনি তাঁর একটি ঘোড়ায় চড়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, তুমি এ গিরিপথের দিকে খেয়াল করবে এবং এর শেষ চূড়ায় গিয়ে পাহারা দেবে। সাবধান! আমরা যেন তোমার অসতর্কতার কারণে ধোঁকায় না পড়ি। অতঃপর ভোর হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাতের জন্য বেরিয়ে এসে দুই রাকাত (সুন্নত) সালাত আদায় করে বলেন, তোমাদের অশ্বারোহীর কী খবর? সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার কোনো খবর অবহিত নই। অতঃপর সালাতের ইকামাত দেওয়া হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাত পড়ালেন এবং গিরিপথের দিকে তাকাতে থাকলেন।</p> <p style="text-align:justify">সালাত শেষে সালাম ফিরিয়ে তিনি বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমাদের অশ্বারোহী এসে গেছে। সাহাবিরা বলেন, আমরা গাছের ফাঁক দিয়ে গিরিপথের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি আসতেছেন। এমনকি তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) সামনে এসে তাঁকে সালাম দিয়ে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী, গিরিপথের শেষ প্রান্তে গিয়েছি এবং ভোরবেলায় উভয় পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি, কিন্তু কোনো (শত্রুকে) দেখতে পাইনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, তুমি কি রাতে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমেছিলে? তিনি বলেন, সালাত ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া নামিনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, তুমি তোমার জন্য (জান্নাত) অবধারিত করেছ, এরপর তোমার কোনো (অতিরিক্ত) নেক কাজ না করলেও চলবে।(আবু দাউদ, হাদিস : ২৫০১)</p>