<p style="text-align: justify;">দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ফিতনা হচ্ছে ধন-সম্পদ। সম্পদের কারণে মানুষ মানুষকে খুন করছে। স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া, ভাই ভাইয়ে মারামারি, প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন ইত্যাদি ঘটনার মূল কারণ হচ্ছে সম্পদ। আবার সম্পদের মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করতে পারে। আবার এর অপব্যবহারের ফলে সে জাহান্নামের ইন্ধন হবে। সম্পদ তাই এক মহা ফিতনা।</p> <p style="text-align: justify;">এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই মহান আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রেখো! নিশ্চয়ই তোমাদের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের সন্তানরা হচ্ছে ফিতনা বা পরীক্ষা। আর আল্লাহর কাছে আছে মহা পুরস্কার।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২৮)</p> <p style="text-align: justify;">কাব বিন ইয়াজ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফিতনা আছে। আর আমার উম্মতের ফিতনা হচ্ছে সম্পদ।’ (সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস : ৫৯২)</p> <p style="text-align: justify;">তবে যারা আল্লাহভীরু এবং যারা সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে, তাদের জন্য তা কখনো ফিতনা নয়। কেননা তারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ধন-সম্পদ উপার্জন ও বিলি-বণ্টন করে। দুনিয়ার জন্য দুনিয়া নয়, বরং আখিরাতের জন্য দুনিয়া অর্জন করে। এমন মানুষ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যে ব্যক্তি দান করে ও আল্লাহভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্য বলে বিশ্বাস করে, অচিরেই আমি তার জন্য সহজ করে দেব সরল পথ (জান্নাতের পথ)।’ (সুরা : লাইল, আয়াত : ৪-৭)</p> <p style="text-align: justify;">মূল কথা হলো, দুনিয়া অর্জন করা যাবে, কিন্তু দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে আখিরাত বর্জন করা যাবে না। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবন প্রাধান্য দিচ্ছ, অথচ আখিরাতই উত্কৃষ্টতর ও স্থায়ী।’ (সুরা : আলা, আয়াত : ১৬-১৭)</p> <p style="text-align: justify;">সম্পদের মহা ফিতনা থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায়—</p> <p style="text-align: justify;"><strong>১. সম্পদের মোহ ত্যাগ করা : </strong>সম্পদের মোহ মানুষকে বিপদগ্রস্ত করে, তাকে অন্যায় কাজে উদ্বুদ্ধ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, দুনিয়ার মোহ সব পাপের মূল। (মিশকাতুল মাসাবিহ)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>২. কৃপণতা পরিহার করা : </strong>পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা কৃপণতা করে, মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন তা গোপন করে, আর আমি আখিরাতে অবিশ্বাসীদের লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৭)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৩. সম্পদ পুঞ্জীভূত করে না রাখা : </strong>পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাটে, পার্শ্বদেশে ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটা হলো তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন করো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৪. সুদি লেনদেন না করা : </strong>ধ্বংস ও পেষণের হাতিয়ার সুদ নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৫. অবৈধ উপার্জন থেকে বেঁচে থাকা : </strong>ইসলামে অবৈধ ও অন্যায় উপার্জন নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করতে তা বিচারকের কাছে পেশ কোরো না।’ (সুরা : বাকারা,  আয়াত : ১৮৮)</p> <p style="text-align: justify;">আল্লাহ সবাইকে সম্পদের মহা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p> </p>