<p style="text-align: justify;">অনৈতিক মানবচরিত্র হলো হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঈমান ও আখিরাত। হিংসা অর্থ আল্লাহ অন্যকে যে অনুগ্রহ দান করেছেন তাকে হিংসা করা (মেনে নিতে বা সহ্য করতে না পারা) এবং ওই অনুগ্রহের ধ্বংস কামনা করা।</p> <p style="text-align: justify;">হিংসুক হলো, হিংসাকৃত ব্যক্তির নিয়ামত (অনুগ্রহের) ধ্বংসের আকাঙ্ক্ষী। হিংসারই সমার্থক বা আরেক রূপ হলো বিদ্বেষ। বিদ্বেষ পোষণকারী সব সময় মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তির মন্দ কামনা করে। মুনাফিকদের আচরণ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ স্পর্শ করে, তাতে তারা অসন্তুষ্ট হয়। আর যদি তোমাদের কোনো অকল্যাণ হয়, তাতে তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত : ১২০)</p> <p style="text-align: justify;">হিংসা বিদ্বেষ পোষণের মধ্যে ঈমানদারের কোনো কল্যাণ নেই। কেননা ঈমানদার তো সব সময় তার ঈমানদার ভাইয়ের মঙ্গলপ্রত্যাশী হয়ে থাকে। হিংসা বিদ্বেষ থেকে বিরত থাকা ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। প্রিয় নবীর (সা.) নির্দেশ, ‘তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ কোরো না, হিংসা কোরো না, ষড়যন্ত্র কোরো না এবং সম্পর্ক ছিন্ন কোরো না। তোমরা পরস্পর আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (বুখারি)</p> <p style="text-align: justify;">প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, ‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য ওই জিনিস ভালোবাসবে, যা সে নিজের জন্য ভালোবাসে।’ (বুখারি)</p> <p style="text-align: justify;">হিংসা ও বিদ্বেষ হলো অন্তরের বিষয়। অন্তর বিদ্বেষমুক্ত না হলে কর্ম অন্যায়মুক্ত হয় না। কোনো মুমিন যদি পাপকর্ম করে, তাহলে তার পাপকে ঘৃণা করা এবং ঈমানের কারণে তাকে ভালোবাসতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা সবাই ভাই ভাই।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১০)</p> <p style="text-align: justify;">প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন হলো সত্যের পক্ষে সমর্থন এবং মিথ্যার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা। যেমন—প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে আল্লাহর জন্য অন্যকে ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ করে, আল্লাহর জন্য দান করে এবং আল্লাহর জন্য বিরত থাকে, সে তার ঈমানকে পূর্ণতা লাভ করল।’ (তিরমিজি)</p> <p style="text-align: justify;">হিংসুটের হিংসা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য মহান আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা-বাণী শিখিয়েছেন—‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই হিংসুকের অনিষ্টকারিতা থেকে যখন সে হিংসা করে।’ (সুরা ফালাক, আয়াত : ৫)</p> <p style="text-align: justify;">জঘন্য মহাপাপ হিংসা বিদ্বেষ, এটা ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য নয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দার অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্র হতে পারে না।’ (নাসাঈ)</p> <p style="text-align: justify;">হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করাই প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তাকে জুলুম করে না, লজ্জিত করে না, নিকৃষ্ট ভাবে না।’ ‘তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে’, বলে তিনি নিজের বুকের দিকে তিনবার ইশারা করেন। অতঃপর বলেন, ‘মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে সে তার অন্য মুসলিম ভাইকে নিকৃষ্ট ভাবে। মনে রেখো, এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের জন্য হারাম হলো তার রক্ত, তার মাল ও তার ইজ্জত।’ (মুসলিম)</p> <p style="text-align: justify;">সৎকর্মশীলরা কখনো কাউকে হিংসা করে না। তারা আসামি হয়, কিন্তু সহজে বাদী হয় না এবং এটা প্রমাণিত। হিংসা বিদ্বেষ প্রসঙ্গে কবি কুমায়েত আল-আসাদি বলেন,</p> <p style="text-align: justify;">(১) ‘তারা যদি আমাকে হিংসা করে, পাল্টা আমি তাদের নিন্দা করব না। কেননা আমার আগে বহু কল্যাণময় ব্যক্তি হিংসার শিকার হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">(২) ‘আমি সেই ব্যক্তি যে তারা আমাকে সর্বদা তাদের বুকের মধ্যে পাবে, যেখান থেকে আমি না ফিরে গেছি, না অবতরণ করেছি।’</p> <p style="text-align: justify;">হিংসুটের পরিণতি শুভ হয় না। হিংসুক ও বিদ্বেষী মানুষ কোনো অবস্থায় শান্তি পায় না। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পারস্পরিক হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের সবাইকে মিলেমিশে ভাই ভাই হয়ে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>