<p style="text-align: justify;">ভালো ও কল্যাণ কাজের আদেশ এবং অসৎ ও অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করা উম্মতে মুহাম্মদির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্থান, কাল ও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই বৈশিষ্ট্য ধারণ করা একান্ত জরুরি। কারণ এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে, অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ১১০)</p> <p style="text-align: justify;">তাই এই বৈশিষ্ট্য অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে, অন্যথায় শাস্তি প্রদান করা হবে এবং তার দোয়াও আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। নবীজি (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার আত্মা আছে! অবশ্যই তোমরা ভালো কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজের নিষেধ করবে। অন্যথায় অচিরেই আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি প্রেরণ করবেন, তখন তোমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের প্রার্থনা কবুল করবেন না।’ (তিরমিজি,হাদিস : ২১৬৯)</p> <p style="text-align: justify;">অন্য এক বর্ণনায় নবীজি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘অন্যায়কারী ও অন্যায় দেখে যে ব্যক্তি বাধা প্রদান করে না এমন ব্যক্তিদ্বয়ের উদাহরণ হচ্ছে এক সম্প্রদায়ের মতো, যে সম্প্রদায় একটি নৌকায় আরোহণের জন্য লটারি করেছে। এতে তাদের কিছু হয়েছে ওপর তলার যাত্রী এবং কিছু হয়েছে নিচতলার। নিচতলার লোকেরা ওপর তলায় পানি আনতে যায়। এতে ওপর তলার লোকদের কষ্ট হয়। তখন নিচতলার লোকেরা কুড়াল দিয়ে পানি বের করার জন্য নৌকার তলা ছিদ্র করতে উদ্ধত হয়।</p> <p style="text-align: justify;">তারপর ওপর তলার লোক এসে বলে, তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা এমন করছ কেন? তখন তারা বলল, আমরা নিচতলা থেকে পানি আনতে গেলে তোমাদের কষ্ট হয়। আবার আমাদের পানিরও খুব দরকার (এ কারণে নৌকার তলা ছিদ্র করে পানি বের করব)। ওপরের লোকেরা যদি তাদের কুড়ালটি নিয়ে নেয় এবং তাদের এ কাজ থেকে বারণ করে, তাহলে তারা তাদেরকে বাঁচাবে এবং নিজেদেরও বাঁচাবে। আর যদি তাদের ছেড়ে দেয়, বাধা না দেয়, তাহলে তাদের ডুবিয়ে ধ্বংস করবে এবং নিজেদেরও ধ্বংস করবে।’ (বুখারি,হাদিস : ২৬৮৬)</p> <p style="text-align: justify;">এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, যারা অন্যায় করে এবং যারা অন্যায় দেখে বাধা দেয় না, তারা উভয়ই অপরাধী। তাদের উভয়ের অপরাধ সমান।</p> <p style="text-align: justify;">তবে ইসলামের বিধান হলো ভালো কাজের আদেশ দিলে নিজেও তা পালন করতে হবে, অন্যথায় ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। নিম্নে এর কয়েকটি পরিণতির দিক তুলে ধরা হলো—</p> <p style="text-align: justify;"><strong>১. আল্লাহর কঠিন ক্রোধের প্রকাশ :</strong> এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা এমন কথা কেন বলো, যা তোমরা করো না? আল্লাহর নিকট বড় ক্রোধের বিষয় এই যে তোমরা বলো এমন কথা, যা তোমরা করো না।’ (সুরা : আস সাফ, আয়াত : ২-৩)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>২. জাহান্নামে যেতে হবে :</strong> উসামা ইবনু জায়েদ বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন আগুনে পুড়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। এ সময় সে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকা নিয়ে তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামবাসীরা তার কাছে একত্র হয়ে তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদের ভালো কাজের আদেশ করতে আর অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদের ভালো কাজের আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না। আর আমি তোমাদের অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করতাম, অথচ আমিই তা করতাম। (বুখারি, হাদিস : ৩২৬৭)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৩. আগুনের কাঁচি দ্বারা ঠোঁট কাটা হবে : </strong>বেআমল বক্তাদের আরেকটি কঠিন শাস্তি হলো আগুনের কাঁচি দ্বারা তাদের ঠোঁট কাটা হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে রাতে আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, সে রাতে কিছু লোককে দেখলাম, যাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কেটে দেওয়া হচ্ছে। আমি বললাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? তিনি বলেন, এরা আপনার উম্মতের বক্তা, যারা মানুষকে ভালো কাজের আদেশ করত, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। তারা কোরআন তিলাওয়াত করত, তারা কোরআন চর্চা করত না।’ (সহিহ ইবনে হিববান ১/২৪৯)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৪. নিজেকে জ্বালিয়ে দেয় : </strong>যে ব্যক্তি অন্যায় কাজে বাধা দেয়, কিন্তু সে নিজেই এ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকে; তার উদাহরণ হলো এমন মোমবাতির মতো, যা মানুষকে আলোকিত করলেও নিজেকে সে জ্বালিয়ে দেয়। জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণের দাওয়াত দেয়, নিজে আমল করে না। তার উদাহরণ হলো, এমন মোমবাতির মতো, যে মোমবাতি মানুষকে আলো দেয় এবং নিজেকে জ্বালিয়ে দেয়।’ (মুজামুল কাবির তাবারানী ২/১৬৫)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৫. এরা মুখে জ্ঞানী, কর্মে মুনাফিক : </strong>যারা অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করে, কিন্তু নিজে এর ওপর আমল করে না; তাদের নিয়ে নবীজি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার অবর্তমানে তোমাদের ওপর যেটা সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হচ্ছে সেই সব লোক, যারা মুখে জ্ঞানী, কর্মে মুনাফিক।’ (মুসনাদে আহমদ,হাদিস : ১৪৩)</p> <p style="text-align: justify;">অর্থাৎ যারা অন্যকে সৎ উপদেশ দেয়, কিন্তু নিজে এর ওপর আমল করে না। তাদের নিকৃষ্ট চরিত্র নিয়ে নবীজি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা মুখে জ্ঞানী, কর্মে মুনাফিক।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৬. নিজের বড় অপরাধ চোখে না পড়া : </strong>কিছু মানুষের চরিত্র এমন, যারা অন্যের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র দোষ দেখতে পায়, কিন্তু নিজের করা বড় বড় দোষ চোখের সামনে পড়ে না। তারা ভালো কাজের উপদেশ দেয়, কিন্তু নিজে আমল করে না। তাদের এই নিকৃষ্ট চরিত্র তুলে ধরে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কোনো ব্যক্তি অন্যের চোখে ক্ষুদ্র-কুটা দেখতে পায়, কিন্তু নিজের চোখে গাছের শিকড়, বড় কাঠ খণ্ড দেখতে পায় না।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৭৬১)</p> <p style="text-align: justify;">মহান আল্লাহ আমাদের এ ধরনের অপরাধ থেকে নিরাপদ রাখুন।</p>