<p style="text-align: justify;">নশ্বর এই পৃথিবী মুমিনের জন্য পরীক্ষাকেন্দ্র। এখানে মুমিনের জীবনে সুস্থতা-অসুস্থতা, সুখ-দুঃখ ও ভালো-মন্দ উভয়ই আছে। তবে মুমিনের জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত। সুস্থতা যেমন আমলে উদ্যমী হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ, তেমনি অসুস্থতাও বান্দার জন্য গুনাহ মাফের মাধ্যম। এটি উম্মতে মুহাম্মদির জন্য আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ অনুগ্রহ। কারণ তিনি রোগ-ব্যাধিকে গুনাহ মাফের মাধ্যম বানিয়েছেন।</p> <p style="text-align: justify;">এমনকি এই রোগ-ব্যাধির ফলে বান্দা কিয়ামতের দিন সব ধরনের গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। এক বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হলে আল্লাহ তাকে (গুনাহ থেকে) এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করেন, যেমন হাপর লোহাকে পরিচ্ছন্ন করে।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪৯৯)</p> <p style="text-align: justify;">তাই সুস্থতার মতো মুমিনের জীবনে অসুস্থতার নিয়ামতও অপরিসীম কল্যাণ বয়ে আনে। অসুস্থতার অপরিসীম কল্যাণের কিছু উদাহরণ—</p> <p style="text-align: justify;"><strong>অসুস্থতা গুনাহর কাফফারাস্বরূপ : </strong>মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সত্যের নিকটবর্তী থাকো এবং সরল-সোজা পথ অবলম্বন করো। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি কোনো কাঁটা বিঁধে বা সে কোনো বিপদে পতিত হয়, সব কিছুই তার গুনাহর কাফফারা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩০৩৮)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>অসুস্থতা দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি পায় : </strong>কখনো অসুস্থতা দ্বারা মুমিন বান্দার স্তর উন্নত হয়। তাই অসুস্থতাকে অশুভ নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪৫)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>অসুস্থতায় প্রকৃত মুমিনের পরিচয় মেলে :</strong> মাঝে মাঝে আল্লাহ তাআলা মুমিনকে বিভিন্ন দুঃখ-কষ্ট ও পেরেশানির মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। আর এতে মুমিন বান্দার ঈমান আরো মজবুত হয় এবং আল্লাহর প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৫-১৫৬)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা প্রকাশ পায় :</strong> রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়ায় তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তাঁর কোনো বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>সুস্থাবস্থার আমলের অনুরূপ সওয়াব : </strong>মহানবী (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হলে সেই অবস্থায় সে তার সুস্থাবস্থায় যেরূপ আমল করত সেরূপ সওয়াব তার জন্য লেখা হয়। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫০০)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জাকাত আদায় : </strong>আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমার কাছে জ্বরের চেয়ে প্রিয়তর কোনো রোগ নেই। তা আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রবেশ করে এবং আল্লাহ এর বিনিময়ে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে তার প্রাপ্য সওয়াব দান করেন।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫০৫)</p> <p style="text-align: justify;">মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থতার  নিয়ামত দান করুন। আমিন।<br />  </p>