<p style="text-align: justify;">ইসলাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ধর্ম। ইসলাম পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অংশ ঘোষণা করেছে এবং ইবাদত-বন্দেগির জন্য পবিত্রতার শর্তারোপ করেছে। ইসলাম ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেয়। আবু বারজাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে এমন একটি বিষয় অবহিত করুন, যার সাহায্যে উপকৃত হতে পারি। তিনি বলেন, মুসলিমদের চলার পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬৭)</p> <p style="text-align: justify;">ইসলাম চলাচলের পথ পরিচ্ছন্ন রাখতে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। যেমন—</p> <p style="text-align: justify;"><strong>১. ঈমানের অংশ : </strong>চলাচলের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করে বা মানুষকে কষ্ট দেয় এমন বিষয় দূর করা ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা আছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। আর সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫০০৫)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>২. সুন্দরতম আমল : </strong>রাসুলুল্লাহ (সা.) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণকে সুন্দরতম আমল বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার উম্মতের সব ভালো ও মন্দ আমল আমার সামনে পেশ করা হয়েছিল। আমি দেখলাম তাদের সব উত্তম কাজের মধ্যে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূরীকরণও একটা উত্তম কাজ। আর আমি এটাও দেখলাম যে তাদের খারাপ আমলের মধ্যে আছে মসজিদের মধ্যে কাশি বা থুথু ফেলা এবং তা মিটিয়ে না ফেলা।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৫৩)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৩. মুসলমানের বৈশিষ্ট্য :</strong> রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা তোমাদের আঙ্গিনা (চারপাশ) পরিচ্ছন্ন রাখো। কেননা ইহুদিরা তাদের আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন রাখে না।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৪১৪৯১)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৪. নোংরা করা অভিশপ্ত কাজ : </strong>মানুষের চলাচলের পথে ময়লা বা কষ্টদায়ক বস্তু ফেলা অভিশপ্ত কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা দুটি অভিশপ্ত কাজ থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, অভিশপ্ত কাজ দুটি কি হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, মানুষের যাতায়াতের পথে বা ছায়াবিশিষ্ট (যেখানে তারা বিশ্রাম নেয়) জায়গায় প্রস্রাব করা।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৫)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>৫. গুনাহ মাফ : </strong>রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিনিময়ে জান্নাত লাভের ঘোষণা দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘একবার এক ব্যক্তি চলাচলের পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন সে রাস্তার ওপর একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেল, তারপর তা সরিয়ে দিল। আল্লাহ তার এই ভালো কর্মটি পছন্দ করেছেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬৩)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>নোংরা আচরণও নিষিদ্ধ : </strong>ইসলাম চলাচলের পথকে শুধু ময়লা-আবর্জনা থেকেই পরিষ্কার রাখতে বলেনি, বরং নোংরা আচরণ পরিহার করারও নির্দেশ দিয়েছে। তার পরিবর্তে সামাজিকতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে বলেছে। যেমন দৃষ্টি অবনত রাখা এবং সালাম বিনিময় করা ইত্যাদি।</p> <p style="text-align: justify;">নবী (সা.) বলেন, তোমরা রাস্তার ওপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোনো পথ নেই। কেননা এটাই আমাদের ওঠাবসার জায়গা এবং আমরা এখানেই কথাবার্তা বলে থাকি। নবী (সা.) বলেন, যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, রাস্তার হক কী? তিনি (সা.) বললেন, ‘দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের উত্তর দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৬৫)</p> <p style="text-align: justify;"> </p> <p style="text-align: justify;"> </p>