<p>হাদিসের ভাষ্যমতে, কিয়ামতের আগে পৃথিবীতে ফিতনার ছড়াছড়ি দেখা দেবে। মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকবে না। তাদের মন থেকে মায়া-দয়া উঠে যাবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কিয়ামত সন্নিকটে হবে, আমল কমে যাবে, অন্তরে কৃপণতা ঢেলে দেওয়া হবে এবং হারজ বেড়ে যাবে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হারজ কী? তিনি বলেন, হত্যা, হত্যা। (বুখারি, হাদিস : ৬০৩৭)</p> <p>নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের শেষ যুগের ফিতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে বলেন, শেষ যুগে ফিতনা এতটা প্রকট আকার ধারণ করবে যে মানুষ তার বন্ধুবান্ধব কিংবা আপন মানুষের কাছেও নিরাপদ থাকবে না। তখন উম্মতের করণীয় কী হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন নবীজি (সা.)। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, অতঃপর তিনি আবু বাকরাহ বর্ণিত হাদিসের অংশবিশেষ বর্ণনা করে বলেন, ওই ফিতনায় নিহত সব লোকই জাহান্নামি হবে। তিনি তাতে বলেন, আমি বললাম, হে ইবনে মাসউদ, ওই পরিস্থিতি কখন হবে? তিনি বলেন, সেই মারামারির যুগে কোনো ব্যক্তি তার বন্ধুর কাছেও নিরাপদ থাকবে না। আমি বললাম, সেই যুগ যদি আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে আমাকে কী করতে আদেশ করেন? তিনি বলেন, তোমার জিহ্বা নিয়ন্ত্রণে রাখবে, হাত গুটিয়ে রাখবে আর তুমি তোমার ঘরের বাইরে বের হবে না। ... (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৫৮)</p> <p>উল্লিখিত হাদিসগুলোতে হারজ বলতে মহানবী (সা.) মূলত শেষ যুগের কঠিন ফিতনার সময়কেই বুঝিয়েছেন। যখন মানুষের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাবে। মানুষকে মূর্খতা ভর করবে। আবু মুসা আল-আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বলেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ‘হারজ’ হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, ‘হারজ’ কী? তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ব্যাপকতা। কতক মুসলমান বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা এখন এই এক বছরে এত মুশরিককে হত্যা করেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তা মুশরিকদের হত্যা করা নয়, বরং তোমরা পরস্পরকে হত্যা করবে, এমনকি কোনো ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে, চাচাতো ভাইকে এবং নিকট আত্মীয়-স্বজনকে পর্যন্ত হত্যা করবে।</p> <p>কতক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তখন কি আমাদের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, বেশির ভাগ লোকের জ্ঞান লোপ পাবে এবং অবশিষ্ট থাকবে নির্বোধ ও মূর্খ। অতঃপর আবু মুসা আল-আশআরি (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ, আমি ধারণা করেছিলাম যে হয়তো এ যুগ তোমাদের ও আমাকে পেত, তাহলে তা থেকে আমার ও তোমাদের বের হয়ে আসা মুশকিল হয়ে যেত; যেমন নবী (সা.) আমাদের জোর দিয়ে বলেছিলেন যে আমরা ওই অনাচারে যত সহজে জড়িয়ে পড়ব তা থেকে আমাদের নিষ্ক্রমণ ততোধিক দুষ্কর হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৫৯)</p> <p>ফিতনার সেই যুগে মানুষ খুব বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়বে, মূর্খতা ও সীমালঙ্ঘন তাদের এতটা পশু বানিয়ে দেবে যে তারা কোনো কারণ ছাড়াই খুনখারাবিতে জড়িয়ে পড়বে। এমনকি হত্যাকারীও জানবে না যে সে কেন হত্যা করেছে, যাকে হত্যা করা হয়েছে সেও বুঝে উঠতে পারবে না যে তাকে ঠিক কেন হত্যা করা হয়েছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার জীবন, দুনিয়া ধ্বংস হবে না যে পর্যন্ত না মানুষের কাছে এমন এক যুগ আসে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে কি দোষে সে অন্যকে হত্যা করেছে এবং নিহত লোকও জানবে না যে কি দোষে তাকে হত্যা করা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করা হলো, কিভাবে এমন অত্যাচার হবে? তিনি জবাবে বলেন, সে যুগটা হবে হত্যার যুগ। এরূপ যুগের হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামি হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭১৯৬)</p> <p>নাউজুবিল্লাহ, তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত, যেকোনো ধরনের ফিতনা থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা, নিজেদের জিহ্বার হেফাজত করা, যেকোনো ধরনের ঝগড়াঝাঁটি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা। নিজেকে ও নিজের আপনজনদের কোরআন-হাদিস মোতাবেক জীবন গড়ার চেষ্টা করা, মানুষকে বেশি বেশি দ্বিনের দাওয়াত দেওয়া। কারণ মানুষ যত বেশি দ্বিনবিমুখ হবে, সমাজে তত অস্থিরতা বাড়বে, মানুষকে তত বেশি মূর্খতা ভর করবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।</p>