<p>মৃত্যু সবার জন্য অবধারিত। কার কখন কোথায় মৃত্যু হবে, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের দায়িত্ব হলো দ্রুত তার কাফন-দাফন সম্পন্ন করা। কিন্তু এ সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষ উদাসীন থাকায় কাফন-দাফন করতে বিলম্ব হয়ে যায়। নারী কিংবা পুরুষ যে কেউ হোক না কেন, ইন্তেকাল করার সঙ্গে সঙ্গে তার খবর ছড়িয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজনের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তখন শোক সংবাদ কানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে পাঠ করতে হয় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯১৮)</p> <p>তখন মাইয়েতের পাশে থাকা ব্যক্তিদের প্রধান কর্তব্য হলো ইন্তেকাল হওয়া মাত্র তার হাত-পা বাঁকা থাকলে সোজা করে দেওয়া। উভয় পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ফিতা বা কাপড়ের টুকরা দ্বারা বেঁধে দেওয়া এবং চোখমুখ বন্ধ করে দেওয়া। সম্পূর্ণ শরীর চাদর দ্বারা ঢেকে মাটি কিংবা ফ্লোরের ওপর না রেখে সরাসরি কোনো খাটিয়ার ওপর তুলে রাখা। (আদ দুররুল মুখতার : ২/১৯৩)</p> <p>অতঃপর আত্মীয়দের কাজ হলো কাফন-দাফন করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।</p> <p><strong>গোসল করানোর নিয়ম</strong></p> <p>পুরুষ ও নারী মাইয়েতের গোসলের নিয়ম প্রায় একই রকম। পুরুষের গোসল নেককার পুরুষ এবং নারীদের গোসল পরহেজগার নারীরা দেবেন। পর্দা ঘেরা স্থানে মাইয়েতকে নিয়ে প্রথমে একটা লম্বা মোটা কাপড় দিয়ে সতর ঢেকে তার ভেতর থেকে শরীরের অন্যান্য কাপড় খুলে দিতে হয়। সতর না দেখে বাঁ হাতে কোনো কাপড় পেঁচিয়ে তা দ্বারা মাইয়েতকে তিন বা পাঁচটি ঢিলা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করাতে হয়। পানি দ্বারা ধৌত করাতে হয়। তারপর নাকে, মুখে ও কানে তুলা দিয়ে অজু করাতে হয়।</p> <p>তবে ফরজ গোসল অবস্থায় মৃত্যু কিংবা হায়েজ-নেফাস অবস্থায় মৃত্যু হলে মুখে ও নাকে পানি দিয়ে বের করা জরুরি। অজুর সময় প্রথমে চেহারা, তারপর দুই হাত ও মাথা মাসেহ করে উভয় পা ধুয়ে দিতে হয়। অতঃপর সাবান দ্বারা মাথা ধৌত করে মাইয়েতকে বাঁ কাতে শুইয়ে বরই পাতার কুসুম কুসুম গরম পানি দ্বারা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ডান পাশে তিনবার পানি ঢালতে হয়। যেন নিচের দিকে বাঁ পার্শ্ব পর্যন্ত পৌঁছে যায়।</p> <p>অনুরূপভাবে ডান কাতে শুইয়ে বাঁ পার্শ্বে তিনবার পানি ঢালতে হয়। অতঃপর মাইয়েতকে নিজের শরীরের সঙ্গে ঠেস লাগিয়ে কিঞ্চিৎ বসিয়ে হালকাভাবে পেটের ওপর থেকে নিচের দিকে মালিশ করতে হয়। ময়লা বের হলে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিতে হয়। অতঃপর গোলাপ জল ও কর্পূর মেশানো পানি ডানে-বাঁ নিচ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হয়। গোসল শেষে শুকনা কাপড় দ্বারা শরীর মুছে কাফন পরাতে হয়। (আহকামে জিন্দেগী : ৫৩৭)</p> <p><strong>কাফন পরানোর সুন্নত</strong></p> <p>নারীদের পূর্ণ শরীর সতর। আর তার পূর্ণ শরীর সুন্দরভাবে আবৃত করার জন্য পাঁচটি কাপড় দেওয়া সুন্নত। কাপড়গুলো হলো—ইজার, লেফাফা, কোর্তা বা জামা, সিনাবন্দ ও সারবন্ধ বা ওড়না। লায়লা বিনতে কায়েফ (রা.) বলেন, যে নারীরা উম্মে কুলসুম (রা.)-কে তাঁর ইন্তেকালের পর গোসল দিয়েছিলেন আমিও তাঁদের একজন ছিলাম। তাঁর গোসল সম্পন্ন হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কাফনের জন্য সর্বপ্রথম আমাদের তহবন্দ প্রদান করেন। এরপর জামা, সিরবন্দ, চাদর এবং শেষে এমন একটা কাপড় প্রদান করেন, যা ওপরে জড়িয়ে দেওয়া হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৪৩ )</p> <p>মাইয়েতকে কাপড় পরানোর সুন্নত নিয়ম হলো- প্রথমে লেফাফা, তারপর ইজার, তারপর সিনাবন্দ ও জামা বিছাতে হয়। অতঃপর মাইয়েতকে কাফনের ওপর চিত করে শোয়াতে হয়। আল্লামা ফখরুদ্দিন জাইলাই (রহ.) বলেন, প্রথমে জামা পরাতে হবে। অতঃপর চুলগুলো দুটি গুচ্ছ করে (দুদিক থেকে) জামার ওপর দিয়ে সিনায় রাখবে। এরপর (মাথা ঢেকে) ওড়নার উভয় পাশ সিনার চুলের ওপর লেফাফার ভেতরে রাখবে।</p> <p>এরপর ইজার, অতঃপর লেফাফা গুটিয়ে নেবে যেভাবে পুরুষের কাফন গোটানো হয়। অর্থাৎ আগে বাঁ পাশ ওঠাবে, তারপর ডান পাশ উঠিয়ে তার ওপরে রাখবে। এরপর কাফনের ওপরে একটি কাপড়ের টুকরা (সিনাবন্দ) পেঁচিয়ে দেবে, যেন কাফন সরে না যায়। এ কাপড় চওড়া হবে সিনা থেকে নাভি পর্যন্ত। আবার সিনা থেকে হাঁটু পর্যন্ত প্রশস্ত হওয়ার কথাও বলা হয়েছে, যাতে লাশ নিয়ে চলার সময় রান দোল খাওয়ার কারণে কাফন খুলে না যায়। (তাবঈনুল হাকায়েক : ১/২৩৮)</p> <p><strong>দাফনের সময় সতর্কতা</strong></p> <p>নারী মাইয়েতের খাট আলাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া উত্তম। যেন বেগানা পুরুষের দৃষ্টি লাশের ওপর না পড়ে। নারী মাইয়েতকে কবরে রাখার সময় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কাপড় বা চাদর দিয়ে ঢেকে কবরের প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়। আবু ইসহাক (রহ.) বলেন, আমি হারিস (রহ.)-এর জানাজায় উপস্থিত হলাম। লোকজন তাঁর কবর কাপড় দিয়ে ঢেকে দিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদ কাপড়টি টেনে সরিয়ে দেন এবং বলেন, তিনি তো পুরুষ। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১১৭৮৫)</p> <p>নারীর লাশ তার মাহরাম ব্যক্তিরাই কবরে নামাবে। মাহরাম না থাকলে অন্য আত্মীয়রা, তারাও   না থাকলে   কোনো পরহেজগার ব্যক্তি লাশ কবরে নামাবে (আলমগিরী : ১/১৬৬)</p> <p>দাফনের সময় আরো অন্যান্য নিয়ম আছে। সেগুলো মেনে নিয়ে মাটি দেওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করতে হয়। আবু উমামা (রা.) বলেন, যখন রাসুল (সা.)-এর মেয়ে উম্মে কুলসুম (রা.)-কে কবর রাখা হয়, তখন রাসুল (সা.) পড়েন, ‘মিনহা খালাকনাকুম ওয়াফিহা নুয়ীদুকুম ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২১৮৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৩৪৩৩)</p>