<p>রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কিয়ামুল লাইল। তাহাজ্জুদ, তারাবি, কিয়ামুল লাইল, কিয়ামু রমজান সব কিছুকে এককথায় ‘সালাতুল লাইল’ বা ‘রাতের নফল সালাত’ বলা হয়। রমজানের প্রধান কিয়ামুল লাইল হলো তারাবি। তারাবির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াব লাভের আশায় কিয়ামুল লাইল আদায় করবে, তার আগের সব পাপ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭)</p> <p>তবে তারাবি পড়ার ক্ষেত্রে ইমাম সালাত পরিপূর্ণ করা পর্যন্ত মসজিদে ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করতে হবে। ইমামকে রেখে চলে গেলে এই ফজিলত অর্জিত হবে না। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ইমামের সঙ্গে যদি কোনো ব্যক্তি নামাজে শামিল হয় এবং ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় শেষ করে, তার জন্য সারা রাত (নফল) নামাজ আদায়ের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৬)</p> <p>সারা মাস এই সালাতের বিধান দেওয়ার হিকমত হলো বান্দা যেন এই এক মাস এই সালাতের প্রশিক্ষণ নিয়ে বছরের বাকি দিনগুলোতেও এই সালাতে অভ্যস্ত হতে পারে। কারণ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে অন্যতম বড় মাধ্যম হলো কিয়ামুল লাইল।</p> <p>সারা বছর কিয়ামুল লাইলের সালাত হলো তাহাজ্জুদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই সালাতকে এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, তিনি কখনো এই সালাত পরিত্যাগ করতেন না। যদি অসুস্থ থাকতেন তবে বসে হলেও কিয়ামুল লাইল আদায় করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন,‌ ‘তুমি কিয়ামুল লাইল পরিত্যাগ কোরো না। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো এটা ছাড়তেন না। তিনি অসুস্থ থাকলে বা অলসতা লাগলে বসে হলেও কিয়ামুল লাইল আদায় করে নিতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩০৭)</p> <p>তাহাজ্জুদ হলো রাতের শেষাংশে আদায় করার নামাজ। রাসলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘ কিরাতসহ সাধারণত আট রাকাত তাহাজ্জুদ ও তিন রাকাত বিতর নামাজ আদায় করতেন। (বুখারি, হাদিস : ১০৯৬)</p> <p>তবে অনেক সময় চার/ছয়/দশ/বারো রাকাতও আদায় করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ১০৮৮)</p> <p>তাহাজ্জুদ নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে কমপক্ষে দুই রাকাত হলেও তা আদায় করা উচিত। আর তারাবি ও তাহাজ্জুদ এক নয়। দুটি ভিন্ন ভিন্ন নামাজ। তাহাজ্জুদ সারা বছর রাতের শেষাংশে আদায় করার নামাজ। পক্ষান্তরে তারাবি শুধু রমজান মাসে রাতের প্রথমাংশে আদায় করার নামাজ। ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮১২)</p> <p>কিয়ামুল লাইল আদায় করা আগের নেককার বান্দাদের চিরায়ত অভ্যাস ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল বান্দাদের অভ্যাস, আর এটা তোমাদের রবের নৈকট্য লাভের উপায়, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং পাপের প্রতিবন্ধক।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৯)</p> <p>সুতরাং সাধ্যানুযায়ী অল্প হলেও রাতের সালাতে অভ্যস্ত হওয়া উচিত। যদি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়া সম্ভব না হয়, তবে এশার পরে ঘুমের আগে দুই রাকাত বা চার রাকাত সালাত আদায়ের মাধ্যমে আমরা কিয়ামুল লাইলের সওয়াব অর্জন করতে পারি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে মাওকুফ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘যে ব্যক্তি এশার পরে চার রাকাত সালাত আদায় করবে, সেটা হবে লাইলাতুল কদরের সালাতের মতো মর্যাদাপূর্ণ।’ (মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাহ, হাদিস : ৭৪৬৭)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে এশার সালাত আদায় করে বাড়িতে এসে ঘুমের আগে এই চার রাকাত সালাত আদায় করতেন। (বুখারি, হাদিস : ১১৭)</p> <p>তাই যারা রমজানে তারাবির সালাত আদায় করবে, তাদের জন্য এই সালাতে অভ্যস্ত হওয়া মোটেও কঠিন নয়।</p>