<p>ইসলাম সাধারণভাবে পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়, বস্তু ও কাজকে বৈধ বলেছে। তবে আল্লাহ বান্দার কল্যাণ বিবেচনা করে কিছু বিষয় নিষিদ্ধ বা হারাম করেছেন, যা সংখ্যায় খুব কম। নিম্নে ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—</p> <p><strong>নিষিদ্ধ কাজ কী</strong></p> <p>ইসলামী শরিয়তে হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ বলতে এমন কাজ বোঝানো হয়, যা পরিহার করা আবশ্যক। যে কাজগুলো করলে শাস্তি এবং পরিহার করলে পুরস্কার আবশ্যক হয়। (মাকালিদুল উলুম, পৃষ্ঠা ৬৩)</p> <p>পবিত্র কোরআনে হারাম কাজ সম্পর্কে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস এবং যার ওপর আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারিত হয়েছে, তা তোমাদের জন্য হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৭৩)</p> <p><strong>নিষিদ্ধ কাজ আল্লাহর সীমানাস্বরূপ</strong></p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষিদ্ধ কাজকে আল্লাহ সীমানা ঘোষণা করে তা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এই দুইয়ের মধ্যে আছে বহু সন্দেহজনক বিষয়, যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বিন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়গুলোতে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের মতো, যে তার পশু বাদশাহর সংরক্ষিত চারণভূমির আশপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা আছে। জেনে রাখো যে প্রত্যেক বাদশাহর একটি সংরক্ষিত এলাকা আছে। আল্লাহর জমিনে তার সংরক্ষিত এলাকা হলো তার নিষিদ্ধ কাজগুলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২)</p> <p><strong>নিষিদ্ধ কাজ বোঝাতে শরিয়তের পরিভাষা</strong></p> <p>ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ বা পরিহারযোগ্য বোঝাতে বেশ কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন—১. হারাম (নিষিদ্ধ), ২. মামনু (নিষিদ্ধ), ৩. মাহজুর (পরিহারযোগ্য), ৪. মাসিয়া (পাপ), ৫. জাম্বুন (পাপ), ৬. মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। এ ছাড়া পরিহারযোগ্য কাজ বোঝাতে মাঝজুর, কাবিহ, সাইয়িয়াহ, ফাহেসাহ, ইসমুন ইত্যাদি শব্দেরও ব্যবহার দেখা যায়।</p> <p><strong>মৌলিকভাবে সব কাজ বৈধ</strong></p> <p>হানাফি মাজহাবের মূলনীতি হলো ‘যেকোনো বিষয় মৌলিকভাবে বৈধ।’ যতক্ষণ না তা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে শরিয়তের দলিল পাওয়া যাবে। এটাই বেশির ভাগ আলেমের মত। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘সব অস্তিত্বশীল বস্তু, তার গুণাবলি ও প্রকারভেদ ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা মানুষের জন্য সাধারণভাবে হালাল বিবেচিত হবে। আর তা তাদের জন্য পবিত্রও বিবেচিত হবে পরিধান করা, ব্যবহার করা ও স্পর্শ করার ক্ষেত্রে।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া : ২১/৫৩৫)</p> <p><strong>নিষিদ্ধ করার অধিকার একমাত্র আল্লাহর</strong></p> <p>কোনো জিনিস হালাল বা হারাম করার অধিকার একমাত্র আল্লাহর। কোনো মানুষ আল্লাহ কর্তৃক হালাল বিষয় হারাম করতে পারবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ তোমাদের যে জীবিকা দিয়েছেন তোমরা যে তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ? বলো, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এর অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করেছ?’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫৯)</p> <p><strong>নিষিদ্ধ কাজের স্তরগুলো</strong></p> <p>পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ এবং অসংগত বিরোধিতা আর কোনো কিছুকে আল্লাহর শরিক করা—যার কোনো সনদ তিনি প্রেরণ করেননি এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলা যা তোমরা জানো না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩৩)</p> <p>আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতে আল্লাহ হারাম বা নিষিদ্ধ কাজকে চার স্তরে বিন্যস্ত করেছেন। তা হলো—</p> <p>১. আল্লাহ সবচেয়ে নিম্ন স্তরের হারাম দ্বারা শুরু করেছেন। সেটা হলো অশ্লীলতা।</p> <p>২. এরপর আল্লাহ প্রথমটির চেয়ে গুরুতর হারাম কাজের বর্ণনা দিয়েছেন। তা হলো আল্লাহর অবাধ্যতা, পাপ ও জুলুম করা।</p> <p>৩. তৃতীয় স্তরে আল্লাহ আরো মারাত্মক ও গুরুতর নিষিদ্ধ কাজের বর্ণনা দিয়েছেন। তা হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা।</p> <p>৪. চতুর্থ হারাম নিষিদ্ধ কাজ, যা উল্লিখিত তিনটি নিষিদ্ধ কাজ থেকেও মারাত্মক, তা হলো আল্লাহর ব্যাপারে না জেনে কোনো কথা বলা। ‘না জেনে কথা বলা’ দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর নাম, গুণাবলি, কাজ, তাঁর দ্বিন ও শরিয়তের ব্যাপারে না জেনে কোনো কথা বলা। (মাওয়ায়িজ, পৃষ্ঠা ৩৩)</p> <p><strong>যে নিষেধাজ্ঞা সাময়িক</strong></p> <p>ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ বিষয়গুলো দুই প্রকার :</p> <p>১. যা সত্তাগতভাবে নিষিদ্ধ। যেমন—মদ, জুয়া, শূকরের গোশত, চুরি করা ইত্যাদি। এসব কাজ কখনো বৈধতা লাভ করে না।</p> <p>২. যা আনুষঙ্গিক কারণে নিষিদ্ধ। যেমন স্ত্রীর বর্তমানে তাঁর বোনকে বিয়ে করা হারাম। স্ত্রী মারা গেলে বা তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে তাঁর বোনকে বিয়ে করা বৈধ। (হিদায়া, বিয়ে অধ্যায়)</p> <p><strong>মাকরুহও পরিহারযোগ্য</strong></p> <p>মাকরুহ হলো অপছন্দনীয় কাজ। যা হারাম না হলেও পরিহারযোগ্য। বুজুর্গ আলেমরা বলেন, মাকরুহ কাজ মানুষ যখন নির্দ্বিধায় করে, তখন তার হারামে লিপ্ত হওয়ার ভয় বেড়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি বিষয় অপছন্দ করেন : ১. অনর্থক কথা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা, ৩. সম্পদ নষ্ট করা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৩৭৩)</p> <p><strong>নিষেধাজ্ঞা মেনে চললেই সাফল্য</strong></p> <p>আল্লাহ মুমিনের পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণের জন্যই দুনিয়াতে কিছু বিষয় নিষিদ্ধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কোরো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)</p> <p><strong>অপারগের জন্য ক্ষমা</strong></p> <p>কেউ যদি অপারগ হয়ে হারাম কাজে লিপ্ত হয় এবং মনে মনে অনুতপ্ত থাকে, তবে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস এবং যার ওপর আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারিত হয়েছে, তা তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু যে অনন্যোপায় অথচ নাফরমান কিংবা সীমালঙ্ঘনকারী নয়, তার কোনো পাপ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৭৩)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে নিষিদ্ধ কাজ পরিহারের তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p> </p>