<p>কিছু আমল এমন আছে, যেগুলোর পুরস্কারস্বরূপ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সদ্যোভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দেন। নিম্নে হাদিসের আলোকে সে রকম কিছু আমল তুলে ধরা হলো—</p> <p><strong>১. যথাযথভাবে পবিত্র হজ পালন :</strong> ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ, যা শুধু সামর্থ্যবান মানুষের ওপর ফরজ। সঠিকভাবে হজ পালন করলে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সদ্যোভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ ঘরের (বাইতুল্লাহর) হজ আদায় করল, অশ্লীলতায় জড়িত হলো না এবং আল্লাহর অবাধ্যতা করল না, সে মায়ের পেট থেকে সদ্যঃপ্রসূত শিশুর ন্যায় (হজ থেকে) প্রত্যাবর্তন করল। (বুখারি, হাদিস : ১৮২০)</p> <p><strong>২. রোগশয্যায় ধৈর্যধারণ :</strong> সুস্থ-সবল মানুষ থেকে হঠাৎ রোগশয্যায় পড়ে যাওয়া অনেক কষ্টের। যারা সেই কঠিন সময়েও মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রাখে, আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকে এবং তাঁর সাহায্য কামনা করে, মহান আল্লাহ তাদের সদ্যোভূমিষ্ঠ শিশুর মতো গুনাহমুক্ত করে দেন। শাদ্দাদ ইবন আওস ও সুনাবিহী (রা.) রোগীকে বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাদের মধ্যে কোনো মুমিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি। রোগগ্রস্ত করা সত্ত্বেও যে আমার শুকরিয়া আদায় করবে, সে রোগশয্যা থেকে সদ্যঃপ্রসূত শিশুর মতো সব গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে উঠবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বলেন, আমি আমার বান্দাকে রোগ দিয়ে বন্দি করে রেখেছি। তাই তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য যা লিখতে তা-ই লিখো। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭১১৮)</p> <p><strong>৩. রমজানের ইবাদত : </strong>হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাস সম্পর্কে বলেন, এটি এমন একটি মাস, যখন আল্লাহ তোমাদের ওপর তাঁর সাওম ফরজ করেছেন এবং আমি তোমাদের ওপর এর দণ্ডায়মান হওয়া (রাত জেগে ইবাদত করা) সুন্নত করেছি। অতএব, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় এ মাসে সাওম রাখে ও (রাতে ইবাদতে) দণ্ডায়মান হয়, সে তার জন্মদিনের মতো পাপমুক্ত হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩২৮)</p> <p><strong>৪. অজু ও নামাজে বিশেষ গুরুত্ব : </strong>হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, কাফফারাত দ্বারা মানুষকে তার জন্মলগ্নের মতো নিষ্পাপ করে দেওয়া হয়। ‘কাফফারাত’ অর্থ নামাজের পর মসজিদে বসে থাকা, নামাজের জামাতে উপস্থিতির জন্য হেঁটে যাওয়া এবং কষ্টকর সময়েও সুষ্ঠুভাবে অজু করা। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে লোক এসব কাজ করবে সে কল্যাণের মধ্যে বেঁচে থাকবে, কল্যাণের সঙ্গে মরবে এবং তার জন্মদিনের মতো গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যাবে।...(তিরমিজি, হাদিস ৩২৩৩)</p> <p><strong>৫. উত্তমরূপে অজু করে নামাজ পড়া : </strong>মুসলিম শরিফের দীর্ঘ একটি হাদিসের একাংশে আছে, আমর ইবনে আবাসাহ আস সুলামি (রা.) মদিনায় নবীজি (সা.)-কে কিছু দ্বিনি বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল, হে আল্লাহর নবী! অজু সম্পর্কে আমাকে বলুন। তিনি বলেন, তোমাদের যেকোনো ব্যক্তির কাছে অজুর পানি পেশ করা হলে সে যেন কুলি করে, নাকে পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করে, এতে তার মুখমণ্ডলের ও নাক গহ্বরের সমস্ত পাপ ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে আল্লাহর নির্দেশমতো মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন পানির সঙ্গে তার মুখমণ্ডল থেকে, এমনকি দাড়ির আশপাশের সমস্ত পাপ ঝরে যায়। অতঃপর তার দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আঙুলসমূহ থেকে পানির সঙ্গে গুনাহগুলো ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার পদদ্বয় ধৌত করে তখন তার আঙুলগুলো দিয়ে তার পাপসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করে, তাঁর যথাযোগ্য মর্যাদা বর্ণনা করে এবং আল্লাহর জন্য নিজের অন্তরকে পৃথক করে নেয়, তাহলে সে তার জন্মদিনের মতো গুনাহমুক্ত হয়ে যায়।... (মুসলিম, হাদিস : ১৮১৫)</p> <p>মহান আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>