<p>জাহান্নামবাসীরা জাহান্নামের আজাবের তীব্রতা ও প্রখরতা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে চেষ্টা করবে। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা সর্বদা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। সে সময় তারা কখনো আল্লাহর সঙ্গে, কখনো জাহান্নামের প্রহরীদের সঙ্গে, কখনো পৃথিবীতে তাদের অনুসরণীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে, কখনো দুনিয়ার রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে, আবার কখনো জান্নাতবাসীদের সঙ্গে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য কথোপকথন করবে। সেদিন তাদের এসব কথোপকথন কোনো কাজে আসবে না। থাকবে না কোনো সাহায্যকারী বন্ধু। নিম্নে জাহান্নামিদের কথোপকথনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করা হলো—</p> <p><strong>আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন</strong></p> <p>জাহান্নামিরা যখন আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আবেদন করবে, তখন আল্লাহ ও তাদের মধ্যে যে কথোপকথন হবে তা নিম্নরূপ—পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হায়! তুমি যদি দেখতে যখন তাদের প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান করা হবে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, কিয়ামত কি সত্য নয়? জবাবে (জাহান্নামিরা) বলবে, হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের রবের শপথ করে বলছি, এটা বাস্তব সত্য বিষয়। তখন আল্লাহ বলবেন, তবে তোমরা এটাকে অস্বীকার করার ফলস্বরূপ শাস্তি আস্বাদন করো।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩০)</p> <p>আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে? তারা বলবে, আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন অথবা এক দিনের কিয়দংশ, আপনি না হয় গণনাকারীদের জিজ্ঞেস করুন! তিনি বলবেন, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে, যদি তোমরা জানতে। তোমরা কি মনে করেছিলে যে আমি তোমাদের অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না?’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১০৫-১১৫)</p> <p><strong>জাহান্নামের প্রহরীদের সঙ্গে কথোপকথন</strong></p> <p>জাহান্নাম হাশরের মাঠে কাফেরদের দেখে ক্রোধে ফেটে পড়বে। সে দূর থেকে যখন কাফেরদের দেখবে, তখন তারা তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও ভয়ংকর চিৎকার শুনতে পাবে। যখন তাদের জাহান্নামের কাছে উপস্থিত করা হবে তখন তার প্রবেশদ্বারগুলো খুলে দেওয়া হবে। অতঃপর তার প্রহরীরা কাফেরদের সঙ্গে কথা বলবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে, যখনই তাতে কোনো দলকে নিক্ষেপ করা হবে, (জাহান্নামের) রক্ষীরা তাদের জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী আসেনি? তারা বলবে, অবশ্যই আমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিল। আমরা তাদের মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি। তোমরা তো স্পষ্টত মহাভ্রান্তিতে আছ। তারা আরো বলবে, আমরা যদি শুনতাম এবং বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না। তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে, অভিশাপ জাহান্নামিদের জন্য!’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ৮-১১)</p> <p><strong>পৃথিবীর অনুসরণীয় ব্যক্তি ও অনুসরণকারীদের মধ্যে কথোপকথন</strong></p> <p>দুনিয়াতে ছোট হোক বা বড় হোক সব অনুসৃত ব্যক্তি এবং তার অনুসারীদের জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা এবং আজাবের ভয়াবহতা দেখে জাহান্নামে প্রবেশের জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করবে। অনুসারীরা অনুসৃত ব্যক্তির কাছে জাহান্নামের আগুনের আজাব থেকে পরিত্রাণ চাইবে। কিন্তু তাদের সেদিন কোনো কিছুই করার ক্ষমতা থাকবে না। এমতাবস্থায় তাদের মধ্যে চরম তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তারা একে অন্যের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তারা বলবে, তোমরা তো আমাদের ডান দিক থেকে আসতে। তারা বলবে, বরং তোমরা বিশ্বাসী ছিলে না এবং তোমাদের ওপর আমাদের কোনো কর্তৃত্বও ছিল না। বস্তুত তোমরাই ছিলে সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিপালকের কথা সত্য হয়েছে। আমাদের অবশ্যই শাস্তি আস্বাদন করতে হবে। আমরা তোমাদের বিভ্রান্ত করেছিলাম, কারণ আমরা নিজেরাই বিভ্রান্ত ছিলাম। সুতরাং তারা সবাই সেদিন শাস্তিতে শরিক হবে।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ২৭-৩৩)</p> <p><strong>রাজনৈতিক নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে কথোপকথন</strong></p> <p>রাজনীতি ও সমাজনীতির নামে যারা আল্লাহর আইনের বিরোধিতা করে এবং সমাজে সংঘাত-সহিংসতা বৃদ্ধির জন্য গুপ্ত ক্যাডার বাহিনী পরিচালনা করে, কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ ও কঠিন হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নেতা ও বড়লোকদের অনুসরণ করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রভু! তাদের দ্বিগুণ আজাব প্রদান করুন এবং তাদের ওপর মহা লানত বর্ষণ করুন।’ (সুরা : আহজাব, আজাত : ৬৭-৬৮)</p> <p><strong>জান্নাতি ও জাহান্নামিদের মধ্যে কথোপকথন</strong></p> <p>জাহান্নামিরা দুনিয়ায় যেসব মুমিনের সঙ্গে বসবাস করত জাহান্নামের ভয়ংকর আগুনের লেলিহান শিখা থেকে মুক্তির জন্য তারা তাদের কাছে প্রার্থনা করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী মুমিনদের বলবে, তোমরা আমাদের জন্য একটু থামো। যেন আমরা তোমাদের জ্যোতির কিছু অংশ গ্রহণ করতে পারি। বলা হবে, তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও এবং আলো তালাশ করো। অতঃপর উভয়ের মাঝামাঝি স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর। সেখানে একটি দরজা থাকবে, যার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত ও বহির্ভাগে থাকবে আজাব। মুনাফিকরা মুমিনদের ডেকে বলবে, আমরা কি পৃথিবীতে তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? তারা বলবে, হ্যাঁ, তবে তোমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছ। তোমরা প্রতীক্ষা করেছিলে, সন্দেহ পোষণ করেছিলে এবং অলীক আকাঙ্ক্ষা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিল আল্লাহর হুকুম (মৃত্যু) আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের ধোঁকা দিয়েছিল এক মহা প্রতারক (শয়তান)।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১৩-১৪)</p> <p><strong>জাহান্নামে ইবলিস শয়তানের বক্তব্য</strong></p> <p>দুনিয়ায় যারা শয়তানি প্ররোচনায় জড়িয়েছিল, অর্থাৎ যারা ইবলিসের অনুসরণ ও উপাসনা করত, জাহান্নামে প্রবেশের পর তাদের লক্ষ্য করে ইবলিস একটি বক্তব্য দেবে, যেখানে সে তার অনুসারী পাপিষ্ঠদের ভর্ত্সনা করবে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন সব কিছুই মীমাংসা হয়ে যাবে তখন শয়তান (তার অনুসারীদের) বলবে, আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি। আমিও তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তবে আমি তোমাদের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের ওপর কোনো ক্ষমতা ছিল না। আমি শুধু তোমাদের আহবান করেছিলাম। আর তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলে। কাজেই তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ কোরো না। তোমরা তোমাদের প্রতিই দোষারোপ করো। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমাকে উদ্ধার করতে সক্ষম নও। তোমরা যে আগে আমাকে আল্লাহর শরিক সাব্যস্ত করেছিলে, তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। জালিমদের জন্য তো বেদনাদায়ক শাস্তি আছে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ২২)</p>