<p>প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। এসব মানবিক গুণ আছে বলেই এখনো টিকে আছে এই নশ্বর পৃথিবী। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘আল্লাহর কুদরতের মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও অনুগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি আছে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২১)</p> <p>রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরে একে অপরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ের কথা বলব না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, নিশ্চয়ই, হে আল্লাহর রাসুল! (তিনি বলেন) তোমাদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সালামের প্রচলন করো। (মুসলিম, হাদিস : ২০৩)</p> <p>রাসুল (সা.) আরো বলেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। ১. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে বেশি প্রিয় হওয়া। ২. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালোবাসা। ৩. কুফুরিতে প্রত্যাবর্তন করাকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ন্যায় অপছন্দ করা। (বুখারি, হাদিস : ১৬)</p> <p><strong>ইসলামে ভালোবাসার প্রকারভেদ</strong></p> <p><strong>(১) বৈধ ভালোবাসা : </strong>স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা হলো পবিত্র, বৈধ ও কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা। ইসলাম এই ভালোবাসার প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীদের ভালোবাসতেন। তাঁদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতেন। তাঁদের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। তাঁদের নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতেন। হাদিস শরিফে আছে, রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.) এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। আয়েশা (রা.)-কে নিয়ে মসজিদে তিনি আবিসিনীয়দের খেলা দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন, যার চরিত্র সুন্দর, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। (রিয়াদুস সালিহিন, ১/১৯৭)</p> <p>বিয়ের আসল উদ্দেশ্য হলো শান্তি, ভালোবাসা ও দয়া। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রত্যেক স্ত্রী তার স্বামীর কাছে ভালোবাসা চায়। স্বামীদের উচিত, স্ত্রীদের ভালোবাসা ও তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা। বিয়ের দ্বারা অনেক জৈবিক চাহিদা পূরণ হয়। তবে তা শুধু বৈষয়িক ব্যাপারের মধ্যে সীমিত নয়, বরং বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসাপূর্ণ ও আবেগময় পারিবারিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।</p> <p><strong>(২) অবৈধ ভালোবাসা : </strong>বিবাহপূর্ব অনৈতিক সম্পর্ক ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ ও সম্পূর্ণ হারাম। ইসলাম কখনো এ ধরনের ভালোবাসা সমর্থন করে না। এটি মূলত যৌন তাড়নাপ্রসূত একটি বিষয়। যুবক-যুবতিরা পাশবিকতা চরিতার্থ করার জন্য ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়। যখন যৌন তাড়না নিঃশেষ হয়ে যায় তখন ভালোবাসায় ভাটা পড়ে। তবে একে-অপরের ভালোবাসা যদি শুধু তাদের মনে লুকায়িত থাকে, ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে ইসলামী শরিয়ত লঙ্ঘন না করে, তাহলে সে ভালোবাসায় কোনো ক্ষতি নেই। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, তা লুকিয়ে রাখে, নিজেকে পবিত্র রাখে এবং এই অবস্থায় মারা যায় সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে। (কানজুল উম্মাল : ৩০/৭৪)</p>