<p>পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা পাঁচটি প্রাণীর নামে সুরার নাম দিয়েছেন। ১. বাকারাহ : গরু, ২. ফিল : হাতি ৩. নাহাল : মৌমাছি ৪. আনকাবুত : মাকড়সা ৫. নামল : পিঁপড়া।  আবার ‘আনআম’ পশুসম্পদ নামের স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করেছেন। এসব কিছুই পশুপাখির প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন।</p> <p>প্রসিদ্ধ সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-এর আসল নাম হলো আবদুর রহমান ইবনে সখর। কিন্তু তিনি বিড়ালের বাচ্চা সঙ্গে রাখতেন। তাই তাঁর নাম আবু হুরায়রা (বিড়ালের পিতা) হয়ে গেছে। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এমন করতেন।</p> <p>আল্লাহ তাআলা পশুপাখিকে স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার দিয়েছেন। ইসলামী বিধানে পশুপাখি লালন-পালন করতে হলে তাদের সার্বিক নিরাপত্তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘন ও অমানবিক আচরণে জন্য শাস্তির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বনি ইসরাঈলের প্রসিদ্ধ ঘটনা হাদিসে এসেছে যে এক বেশ্যা নারী শুধু পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে জান্নাত পেয়েছে, আর একজন ইবাদতগোজার মেয়েলোক শুধু বিড়ালকে কষ্ট দেওয়ার কারণে জাহান্নামি হয়েছে!</p> <p>শাদ্দাদ বিন আউস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের সঙ্গে সদাচারের আদেশ করেছেন। সুতরাং যখন তোমরা (কিসাস ইত্যাদির কারণে) হত্যা করবে তখন উত্তমরূপে হত্যা কোরো। আর যখন জবেহ করো তখন উত্তমরূপে জবেহ কোরো। আর তোমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হলো ছুরি ধার দিয়ে নেওয়া এবং জাবিহাকে (জবাইকৃত জন্তু) যথাসম্ভব আরাম দেওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৫৫)</p> <p>একবার সাহাবায়ে কেরাম একটি পাখির দুটি বাচ্চা ধরে ফেললেন, আর পাখিটি ছটফট করতে লাগল। নবী (সা.) পাখিটির ছটফটানি দেখে বললেন, কে একে তার বাচ্চার বিষয়ে কষ্ট দিয়েছে? তার বাচ্চা তাকে ফিরিয়ে দাও। আবার তিনি দেখতে পেলেন, পিঁপড়ের টিবিকে আগুনে জ্বালানো হয়েছে, তখন তিনি বলেন, আগুনের রব ছাড়া আর কারো জন্য বৈধ নয় আগুন দ্বারা আজাব দেওয়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬৭৫)</p> <p>একটি গাধার চেহারা গরম লোহা দিয়ে দাগানো হয়েছে দেখে নবী (সা.) এত কষ্ট পেলেন যে বলে উঠলেন, এটা যে করেছে তার ওপর আল্লাহর লানত (এরূপ কঠিন শব্দ রহমতের নবী খুব কমই উচ্চারণ করেছেন)। (মুসলিম, হাদিস : ২১১৮)</p> <p>পশুপাখিকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। অনেককে দেখা যায়, গবাদি পশু যেমন—গরু কথামতো না চললেই নির্মমভাবে প্রহার করে থাকে। এগুলো কোনোক্রমেই ঠিক নয়। পশুর প্রতি এ ধরনের আচরণ নিঃসন্দেহে গর্হিত অন্যায়। অনেক সময় রাস্তায় শুয়ে থাকা বা চলতে থাকা কুকুরকে লাথি মারা হয়। তখন সে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। কেউ তো গরম পানি মারে। এই অবুঝ প্রাণীগুলো কী বলে তা যদি লোকেরা বুঝত, হয়তো তারা লজ্জায় মরে যেত।</p> <p>এক আনসারি সাহাবির বাগানে একটি উট নবী (সা.)-কে দেখে কাঁদতে লাগল। তিনি কাছে গিয়ে আদর করলেন, আর উটটি চুপ হয়ে গেল। তিনি উটের মালিককে তিরস্কার করে বললেন, তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না এই পশুর বিষয়ে, যাকে আল্লাহ তোমার মালিকানায় দিয়েছেন! সে তো আমার কাছে তোমার নামে নালিশ করেছে যে তুমি তাকে অনাহারে রাখো, আর শুধু কাজে খাটাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪৯)</p> <p><strong>পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা</strong></p> <p>পৃথিবীতে অসংখ্য প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রাখতে এসব পশুপাখির বিকল্প নেই। পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। তাদের যত্ন নেওয়া আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। অনেকেই খাঁচায় বিভিন্ন প্রকারের পাখি কিংবা পশু পালন করেন। এটা জায়েজ আছে। কিন্তু শর্ত হলো তাদের যথাযথ পরিচর‌্যা করতে হবে, কোনো ধরনের কষ্ট দেওয়া যাবে না। এটা ইসলামে নিষিদ্ধ। কাতাদা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ : ২৯)</p> <p>কারণ গর্তে বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড় বসবাস করে। পেশাব করলে তাদের বসতের স্থান নষ্ট হবে, এতে কষ্ট হবে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন।</p> <p>আল্লাহ তাআলা পশুপাখিদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা মানুষকে দান করেছেন। তাই এদের প্রতি সদয় হতে হবে। পশুপাখিসহ সব ধরনের প্রাণীর প্রতি সব ধরনের নির্দয় আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের প্রতি ভালোবাসার হাত প্রসারিত করতে হবে।</p> <p><em>লেখক : প্রধান শিক্ষক, দারুলহুদা মডেল মাদরাসা, কোদালপুর</em></p>