<p>জীবনের তাগিদে প্রত্যেক মানুষকে জীবিকা অর্জন করতে হয়। জীবিকা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম ব্যবসা-বাণিজ্য। কোনো মুমিনের ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মপন্থা যদি হয় মহান আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে, তাহলে তা ইবাদতে পরিণত হয়। বাহ্যিকভাবে তাকে দুনিয়াবি কাজ মনে হলেও পরকালে এর বিনিময়ে বিশেষ সম্মাননার সুসংবাদ রয়েছে। রিফাআহ বিন রাফি (রা.) বলেন, মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন প্রকারের জীবিকা উত্তম? উত্তরে তিনি বলেন, নিজ হাতের কামাই এবং সৎ ব্যবসা। (বুলুগুল মারাম, হাদিস : ৭৮২)</p> <p>ওলামায়ে কেরামের মতে, সৎ ব্যবসা হলো, যে ব্যবসায় কোনো প্রকার ধোঁকা, মিথ্যা ও ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড নেই। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেন, সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা (আখিরাতে) নবীগণ, সিদ্দিকগণ (সত্যবাদীগণ) ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)</p> <p>তবে শর্ত হলো ব্যবসা-বাণিজ্যের মোহ ও ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর বিধান ভুলে যাওয়া যাবে না। হালাল-হারাম ও ফরজ ইবাদতের ব্যাপারে উদাসীন হওয়া যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ৯)।</p> <p>অর্থাৎ সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ভালোবাসা তোমাদের ওপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার না করে ফেলে যে তোমরা আল্লাহ কর্তৃক আরোপিত যাবতীয় বিধি-বিধান ও ফরজ কার্যাবলি থেকে উদাসীন হয়ে যাও এবং তাঁরই নির্ধারিত হালাল-হারামের সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারেও একেবারে বেপরোয়া হয়ে যাও।</p> <p>ঈমানদারদের চরিত্র হতে হবে এর বিপরীত। তারা সব সময় আল্লাহকে স্মরণে রাখবে। অর্থাৎ তাঁর যাবতীয় বিধি-বিধান ও অত্যাবশ্যকীয় কার্যাবলির প্রতি যত্ন নেবে এবং হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য খেয়াল রাখবে। যদি কেউ এই শরিয়তের বিধানকে গুরুত্ব সহকারে আদায় করার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, তাহলে সেই ব্যবসা তার জন্য ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ বয়ে আনবে। এর জন্য মহান আল্লাহ মানুষের পুরো সময় চাননি, বরং ফরজ বিধান পালনের পর তিনি মানুষের ব্যক্তিগত কাজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বর্জন করো। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। অতঃপর যখন নামাজ শেষ হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯-১০)</p> <p>কেউ যদি মহান আল্লাহর এই আদেশ মেনে, তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে ইবাদত পালনের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য করে, আল্লাহর ভয়ে হারাম থেকে বিরত থাকে, সঠিকভাবে সম্পদের জাকাত আদায় করে, তবে তার সফলতা নিশ্চিত। সে দুনিয়াতেও বরকত অনুভব করবে, আখিরাতেও এর প্রতিদান বহুগুণে পাবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেই সব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাদের কর্মের উত্কৃষ্টতম প্রতিদান দেবেন। অর্থাৎ শুধু কর্মের প্রতিদানই শেষ নয়, বরং আল্লাহ নিজ কৃপায় তাদের বাড়তি নিয়ামতও দান করবেন।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৭-৩৮)</p> <p>মহান আল্লাহ সবাইকে কোরআন-হাদিসের নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>