<p>মুসলিম ইতিহাসে শাসকদের নানা ধরনের ধর্মীয় নাম ও উপাধি গ্রহণ করতে দেখা গেছে। এসব উপাধির মাধ্যমে তাঁরা মূলত জনসাধারণের প্রতি ধর্মীয় অনুশাসন রক্ষার অঙ্গীকার করতেন। ইসলাম ইতিবাচক উপাধি গ্রহণের অনুমতি দিয়ে থাকে। তবে অহংকার ও হঠকারিতামূলক উপাধি গ্রহণের ব্যাপারে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।</p> <p><strong>মহানবী (সা.)-এর উপাধি </strong></p> <p>মক্কার কুরাইশরা মহানবী (সা.)-কে আল আমিন বা বিশ্বস্ত উপাধি দিয়েছিল। এটাই মুসলিম ইতিহাসে প্রথম উপাধি। পবিত্র কোরআনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে চব্বিশের অধিক উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। যেমন—শাহিদ (সাক্ষ্যদাতা), মুবাশশির (সুসংবাদদাতা), নাজির (সতর্ককারী), সিরাজুম মুনিরা (প্রজ্জ্বল বাতি) ইত্যাদি। এ ছাড়া হাদিস ও সিরাত গ্রন্থে নবীজি (সা.)-এর যেসব নাম পাওয়া যায় তার কয়েকটি হলো—মুকাফফা (শেষ নবী), সাইয়িদু উলদি আদম (আদম সন্তানদের নেতা), হাবিবুল্লাহ (আল্লাহর প্রিয়), মুখতার (নির্বাচিত), মোস্তফা (নির্বাচিত) ইত্যাদি। (আসমাউন-নাবি, পৃষ্ঠা ৫৩-৭৫)</p> <p><strong>খুলাফায়ে রাশেদাদের উপাধি</strong></p> <p>আবু বকর (রা.) খলিফা মনোনীত হলে খলিফাতু রাসুলিল্লাহ (আল্লাহর রাসুলের প্রতিনিধি) উপাধি দেওয়া হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর ওমর (রা.)-এর উপাধি হয় খলিফাতু খলিফাতি রাসুলিল্লাহ ও আমিরুল মুমিনিন (মুমিনদের প্রধান)। তবে ওমর (রা.) আমিরুল মুমিনিনকে প্রাধান্য দেন। উসমান (রা.) ও আলী (রা.) আমিরুল মুমিনিন উপাধিতেই ভূষিত হন। তবে আলী (রা.)-এর নামের সঙ্গে আল ইমাম (নেতা) উপাধিও যুক্ত হয় (আওদাউ আলা আলকাবিল আরাবি ওয়াল মুসলিমিন)।</p> <p><strong>উমাইয়া শাসকদের উপাধি</strong></p> <p>আলী (রা.)-এর মতো মুয়াবিয়া (রা.)-ও আমিরুল মুমিনিন উপাধি গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে উমাইয়া শাসকরাও একই উপাধি ব্যবহার করেন। তবে কোনো কোনো ঐতিহাসিক তাঁদের নামের সঙ্গে ‘আমির’ (শাসক) শব্দ ব্যবহার করেছেন (আওদাউ আলা আলকাবিল আরাবি ওয়াল মুসলিমিন)।</p> <p><strong>আব্বাসীয় খলিফাদের উপাধি</strong></p> <p>৭৫০ থেকে ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৩৭ জন আব্বাসীয় খলিফা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁদের রাজধানী ছিল বাগদাদ। দ্বিতীয় আব্বাসীয় খলিফা থেকে পরবর্তী সাতজনের ধর্মীয় উপাধি হলো—</p> <p>১. খলিফা আবু জাফর আবদুল্লাহ (৭৫৪-৭৭৫ খ্রি.)-এর উপাধি ‘মানসুর’ (আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত)।</p> <p>২. খলিফা আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ (৭৭৫-৭৮৫ খ্রি.)-এর উপাধি ‘আল মাহদি বিল্লাহ’ (আল্লাহ কর্তৃক সুপথপ্রাপ্ত)।</p> <p>৩. খলিফা আবু মুহাম্মদ মুসা (৭৮৫-৭৮৬ খ্রি.)-এর উপাধি আল হাদি (সুপথের পথিক)।</p> <p>৪. খলিফা হারুন (৭৮৬-৮০৯ খ্রি.)-এর উপাধি আর রশিদ (সুপথের পথিক)।</p> <p>৫. খলিফা আবু মুসা মুহাম্মদ (৮০৯-৮১৩ খ্রি.)-এর উপাধি ‘আল আমিন’ (বিশ্বস্ত)।</p> <p>৬. খলিফা আবুল আব্বাস আবদুল্লাহ (৮১৩-৮৩৩ খ্রি.)-এর উপাধি ‘আল মামুন’ (আল্লাহর নিরাপত্তাপ্রাপ্ত)।</p> <p>৭. খলিফা আবু ইসহাক মুহাম্মদ (৮৩৩-৮৪২ খ্রি.)-এর উপাধি ‘আল মুস্তায়িন বিল্লাহ’ (আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনাকারী)।</p> <p>৮. খলিফা আবু জাফর হারুন (৮৪২-৮৪৭ খ্রি.)-এর উপাধি ‘আল ওয়াসিক বিল্লাহ’ (আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনকারী)। (উইকিপিডিয়া)</p> <p><strong>ফাতেমি খলিফাদের উপাধি</strong></p> <p>৯৭৩ থেকে ১১৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ১৪ জন ফাতেমি খলিফা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁদের রাজধানী ছিল কায়রো। প্রথম পাঁচজন ফাতেমি খলিফার ধর্মীয় উপাধি হলো—</p> <p>১. খলিফা আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ (৯০৯-৯৩৪ খ্রি.)-এর উপাধি ‘আল মাহদি’ (আল্লাহ কর্তৃক সুপথপ্রাপ্ত)।</p> <p>২. খলিফা আবুল কাসেম মুহাম্মদ (৯৩৪-৯৪৬ খ্রি.)-এর উপাধি ‘আল কায়িম বি আমরিল্লাহ’ (আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নকারী)।</p> <p>৩. খলিফা আবু তাহির ইসমাইল (৯৪৬-৯৫৩ খ্রি.)-এর উপাধি ‘মানসুর বি নাসরিল্লাহ’ (আল্লাহর সাহায্যে সাহায্যপ্রাপ্ত)।</p> <p>৪. খলিফা আবু তামিম মাআদ (৯৫৩-৯৭৫ খ্রি.)-এর উপাধি ‘আল মুইজ্জ লি দিনিল্লাহ’ (আল্লাহর দ্বিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী)।</p> <p>৫. খলিফা আবু মনসুর নিজার (৯৭৫-৯৯৬ খ্রি.)-এর উপাধি ‘আল আজিজ বিল্লাহ’ (আল্লাহ যাকে পরাক্রমশালী করেছেন)। (উইকিপিডিয়া)</p> <p><strong>মোগল সম্রাটদের ইসলামী নাম</strong></p> <p>১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত মোট ২১ জন মোগল সম্রাট ভারতবর্ষ শাসন করেন। তাঁদের রাজধানী ছিল দিল্লি। মোগলরা সম্রাট হওয়ার পর উপাধি গ্রহণ না করলেও তাঁদের ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকার ছিল। প্রথম ছয়জন মোগল সম্রাটের ধর্মীয় নাম হলো—</p> <p>১. সম্রাট বাবর (১৫২৬-১৫৩০ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম জহির উদ্দিন মুহাম্মদ গাজি। জহির উদ্দিন অর্থ যে দ্বিনকে বিজয়ী করে।</p> <p>২. সম্রাট হুমায়ুন (১৫৩০-১৫৫৬ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম নাসিরুদ্দিন বেগ মুহাম্মদ খান। নাসিরুদ্দিন অর্থ যে দ্বিনকে সাহায্য করে।</p> <p>৩. সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম আবুল ফাতহ জালালুদ্দিন মুহাম্মদ। জালালুদ্দিন অর্থ যিনি দ্বিনের প্রভাব-প্রতিপত্তিস্বরূপ।</p> <p>৪. সম্রাট জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম নুরুদ্দিন বেগ মুহাম্মদ খান সেলিম। নুরুদ্দিন অর্থ দ্বিনের জ্যোতি।</p> <p>৫. সম্রাট শাহজাহান (১৬২৮-১৬৫৮ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম শিহাবুদ্দিন মুহাম্মদ খুররম। শিহাবুদ্দিন অর্থ যিনি দ্বিনের উল্কাস্বরূপ।</p> <p>৬. সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীর (১৬৫৮-১৭০৭ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম মুহিউদ্দিন মুহাম্মদ। মুহিউদ্দিন অর্থ দ্বিনের পুনর্জাগরণকারী। (উইকিপিডিয়া)</p> <p><strong>সেলজুক সুলতানদের উপাধি</strong></p> <p>১০৩৭ থেকে ১১৯৪ খ্রি. পর্যন্ত মোট ১৯ জন সেলজুক সুলতান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে প্রথম পাঁচজন হলেন—</p> <p>১. সুলতান তুগরল বেগ মুহাম্মদ (১০৩৭-১০৬৩ খ্রি.)-এর উপাধি রোকনুদ-দুনিয়া ওয়াদ-দ্বিন (দুনিয়া ও দ্বিনের স্তম্ভ)।</p> <p>২. সুলতান উলুপ আরসালান মুহাম্মদ (১০৬৩-১০৭২)-এর উপাধি জিয়াউদ্দিন আদ-দুদ্দৌলা (দ্বিনের জ্যোতি ও রাষ্ট্রের সাহায্যকারী)।</p> <p>৩. সুলতান প্রথম মালিক শাহ হাসান (১০৭২-১০৯২ খ্রি.)-এর উপাধি মুয়িজুদ্দিন জালালুদ্দৌলা (দ্বিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী ও রাষ্ট্রের প্রভাব-পরাক্রম)।</p> <p>৪. সুলতান প্রথম মাহমুদ (১০৯২-১০৯৪ খ্রি.)-এর উপাধি নাসিরুদ-দুনিয়া ওয়াদ-দ্বিন (দুনিয়া ও দ্বিনের সাহায্যকারী)।</p> <p>৫. সুলতান বার্কিয়ারুক মুহাম্মদ (১০৯৪-১১০৫ খ্রি.)-এর উপাধি রোকনুদ-দুনিয়া ওয়াদ-দ্বিন (দুনিয়া ও দ্বিনের স্তম্ভ)। (উইকিপিডিয়া)</p> <p><strong>মামলুক সুলতানদের ইসলামী নাম</strong></p> <p>১২৫০ থেকে ১৫১৭ খ্রি. পর্যন্ত মোট ৫৩ জন মামলুক সুলতান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁদের রাজধানী ছিল কায়রো। প্রথম পাঁচজন মামলুক সুলতান হলেন—</p> <p>১. সুলতান মালিক মুয়িজ (১২৫০-১২৫৭ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম ইজ্জুদ্দিন আইবেক। ইজ্জুদ্দিন অর্থ যিনি দ্বিনের মর্যাদাস্বরূপ।</p> <p>২. সুলতান মালিক মানসুর (১২৫৭-১২৫৯ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম নুরুদ্দিন আলী। নুরুদ্দিন অর্থ দ্বিনের জ্যোতি বা আলো।</p> <p>৩. সুলতান মালিক মুজাফফর (১২৫৯-১২৬০ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম সাইফুদ্দিন কুতুজ। সাইফুদ্দিন অর্থ দ্বিনের তরবারি।</p> <p>৪. সুলতান মালিক জাহির (১২৬০-১২৭৭ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম রোকনুদ্দিন বাইবার্স। রোকনুদ্দিন অর্থ দ্বিনের স্তম্ভ।</p> <p>৫. সুলতান মালিক সায়িদ (১২৭৭-১২৭৯ খ্রি.)-এর পূর্ণ নাম নাসিরুদ্দিন বারাকাহ। নাসিরুদ্দিন অর্থ দ্বিনের সাহায্যকারী। (উইকিপিডিয়া)</p> <p><strong>বাংলার সুলতানদের উপাধি</strong></p> <p>বাংলা অঞ্চলে ২০০ বছর বিভিন্ন রাজবংশের একাধিক সুলতান শাসন করেন। তাঁদের কয়েকজনের ধর্মীয় উপাধি হলো—</p> <p>১. সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ (১৩৩৮-১৩৪৯ খ্রি.)-এর উপাধি ফখরুদ্দিন ওয়াদ-দুনিয়া (দ্বিন ও দুনিয়ার গর্ব)।</p> <p>২. সুলতান ইলিয়াস শাহ (১৩৪২-১৩৫৮ খ্রি.)-এর উপাধি শামসুদ্দিন (দ্বিনের সূর্য)।</p> <p>৩. সুলতান আজম শাহ (১৩৯০-১৪১১ খ্রি.)-এর উপাধি গিয়াসুদ্দিন (দ্বিনের সাহায্যকারী)।</p> <p>৪. সুলতান মাহমুদ শাহ (১৪৩৫-১৪৫৯ খ্রি.)-এর উপাধি নাসিরুদ্দিন (দ্বিনের সাহায্যকারী)।</p> <p>৫. সুলতান বারবাক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি.)-এর উপাধি রোকনুদ্দিন (দ্বিনের স্তম্ভ)।</p> <p>৬. সুলতান ফিরোজ শাহ (১৪৮৭-১৪৮৯ খ্রি.)-এর উপাধি সাইফুদ্দিন (দ্বিনের তরবারি)।</p> <p>৭. সুলতান হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.)-এর উপাধি আলাউদ্দিন (দ্বিনের গর্ব বা বিজয়)। (বাংলা পিডিয়া ও উইকিপিডিয়া)</p> <p> <br />  </p>