<p>মহান আল্লাহর অমূল্য উপহার সন্তান। তারা অনেক সময় না বুঝে মা-বাবাকে বিরক্ত করে। অনেক সময় দেখা যায়, মা-বাবা বিরক্ত হয়ে অসতর্কতাবশত তাদের অনেক বদদোয়ামূলক কথা বলে ফেলেন, যা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ মহান আল্লাহ যদি এই কথা কবুল করে ফেলেন, তাহলে তা সন্তানের জন্য কোনো বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। যেমনটি হয়েছিল বনি ইসরাঈলের ইবাদতগুজার ব্যক্তি জুরায়জের সঙ্গে।</p> <p>বনি ইসরাঈলের একজন ইবাদতগুজার লোক ছিলেন জুরায়জ। তিনি এত বেশি ইবাদত করতেন যে তাঁর ইবাদতের কথা গোটা বনি ইসরাঈলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। একবার তিনি ইবাদতে রত থাকা অবস্থায় তাঁর মা এসে তাঁকে ডাকলেন। তিনি ভাবলেন, আমি কি তাঁর ডাকে সাড়া দেব, না সালাত আদায় করতে থাকব? তার মা বললেন, হে আল্লাহ‌! ব্যভিচারিণীর মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিয়ো না। তাঁর মায়ের এই কথা আল্লাহ কবুল করে ফেলেন। জুরায়জ তাঁর ইবাদতখানায় থাকতেন।</p> <p>একবার তাঁর প্রতি এক দুষ্ট নারীর বদনজর পড়ে। সে তার গোত্রকে বলে যে, তোমরা চাইলে আমি জুরায়জকে জব্দ করতে পারি। কিছু দুষ্ট লোক তাকে এই কাজটি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করল। ছলনাময়ী সেই নারী জুরায়জের চরিত্রে কালিমা লেপনের জন্য নিজেকে নিয়ে তার কাছে পেশ করল। কিন্তু জুরায়জ তাকে পাত্তাও দেননি। তার দিকে ফিরেই তাকাননি। সে ঠিক করল, যে করেই হোক গোত্রবাসীকে জুরায়জের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে হবে। তাই সে জুরায়জের ইবাদতখানার পাশে বকরি চরানো এক রাখালের সঙ্গে একান্তে অবৈধ সময় কাটায়। তাতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে।</p> <p>কিছুদিন পর সে একটি পুত্রসন্তানও প্রসব করে। গোত্রের লোকেরা যখন জিজ্ঞেস করল, এটা কার সন্তান? সে দাবি করল, এটা জুরায়জের সন্তান। এতে গোত্রের জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে জুরায়জের ইবাদতখানার ওপর চড়াও হয়। তারা তাঁকে টেনে নামায়। এমনকি কিছু দুষ্ট লোক পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী উসকানি দিয়ে গোত্রের লোকদের দিয়ে জুরায়জকে গালাগাল, মারধর করে। তাঁর ইবাদতখানাটিও ভেঙে দেয়।</p> <p>তখন জুরায়জ বলেন, ব্যাপার কী? কেন তাঁকে এভাবে হামলা করা হচ্ছে? তারা বলল, তুমি এই মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছ। ফলে সে একটি ছেলে প্রসব করেছে। জুরায়জ বলেন, সেই ছেলেটি কোথায়? তারা বলল, এই যে। জুরায়জ সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। তারপর ছেলেটির কাছে গিয়ে আঙুল খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে বালক! আল্লাহর কসম, তোমার জন্মদাতা কে? সে বলল, ‘আমি রাখালের পুত্র।’</p> <p>এই ঘটনাটি গোত্রবাসীর ভুল ভাঙিয়ে দিল। তারা লজ্জিত হলো এবং জুরায়জের কাছে এসে তাঁকে চুমু খেতে লাগল। অনুতপ্ত হয়ে বলতে লাগল, আমরা সোনা দিয়ে আপনার ইবাদতখানাটি পুনর্নির্মাণ করে দিই। জুরায়জ বলেন, না, তা আমার দরকার নেই। আগে যেমন ছিল, তেমন করেই করে দাও। (সূত্র : বুখারি, হাদিস : ৩৪৩৬, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ২/২৬৪)</p> <p>কোনো মুসলিম নামাজে থাকা অবস্থায় মা-বাব বা তাঁদের একজন ডাকলে তাদের ডাকে কি সাড়া দেবে নাকি নামাজ অব্যাহত রাখবে? এই বিষয়ে ইসলামী শরিয়তের বিধান হলো, কোনো মুসলিম ফরজ নামাজে পড়াবস্থায় তার বাবা-মা বা উভয়ে ডাকলে তাঁদের ডাকে সাড়া দেবে না। তবে নফল নামাজে থাকলে তা ভেঙে মা-বাবার ডাকে সাড়া দেবে। এ বিষয়ে ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘মায়ের ডাকে সাড়া দেওয়া জরুরি। কারণ নফল নামাজ পড়া ও তা অব্যাহত রাখা অত্যাবশক নয়। আর মায়ের ডাকে সাড়া দেওয়া ও তাঁর আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং তাঁর অবাধ্য হওয়া হারাম। সে নামাজ ভেঙে মায়ের কাছে যাবে এবং ফিরে এসে পুনরায় নামাজ পড়বে। (আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়্যাহ, ৩৪২/২০; আদ্দুরুল মুখতার, ৫৪/২) </p> <p>মহান আল্লাহ সবাইকে সন্তানের পরিচর্যার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>