<p>দুনিয়ার সঙ্গে মনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গভীর মনোযোগ দিয়ে ইবাদত করা মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। গাফিল ও অমনোযোগী অন্তরে ইবাদত করলে সেটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হলো ইবাদতে গভীর মনোযোগী হওয়া। যেমন আল্লাহ তাঁর রাসুলকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘অতএব যখন অবসর পাও, ইবাদতের কষ্টে রত হও এবং তোমার রবের দিকে রুজু হও।’ (সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ৭-৮)</p> <p>আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তুমি পার্থিব কাজকর্ম থেকে যখন অবসর হবে, তখন আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে আত্মনিয়োগ করো। আর তখন তোমার অন্তর যেন (শুধু ইবাদতের জন্যই) খালি থাকে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৮/২৫৫)</p> <p>সুতরাং ইবাদত পালনে শুধু শারীরিক সম্পৃক্ততা যথেষ্ট নয়; মনের পরিপূর্ণ উপস্থিতি সমানভাবে জরুরি। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) খাবার সামনে রেখে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন এবং খাবার খেয়ে তারপর সালাত আদায় করতে বলেছেন, যেন ক্ষুধার জন্য সালাতে মনোযোগ বিঘ্ন না হয় এবং ইবাদতের জন্য ফারেগ হওয়াটা যেন পরিপূর্ণ হয়। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৬৫)</p> <p>তা ছাড়া আল্লাহর ইবাদতের জন্য ফারেগ হওয়ার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, ‘ইবাদত সম্পাদনকালে উপস্থিত হৃদয়ে আল্লাহর ভয়ে ভীত হওয়া ও তাঁর প্রতি বিনীত হওয়া।’ (মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ ২/৩৯৮)</p> <p>কোরআন-হাদিসের ভাষ্য মতে, অমনোযোগী হয়ে কোনো ইবাদত করলে তার কোনো মূল্য থাকে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, জেনে রাখো! আল্লাহ গাফিল ও অমনোযোগী মনের দোয়া কবুল করেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)</p> <p>আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘উদাসীন হৃদয় নিয়ে সারা রাত কিয়ামুল লাইল আদায় করার চেয়ে চিন্তা-ভাবনাসহ দুই রাকাত সালাত আদায় করা উত্তম।’ (গাজালি, ইহয়াউ উললুমিদ্দীন ৪/৪২৫)</p> <p>এ জন্য হাদিস শরিফে ফরজ সালাতের পরে রাতের তাহাজ্জুদকে সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এর কারণ হলো, রাতের সালাত যত একনিষ্ঠভাবে করা যায় অন্য সময় সেটা সম্ভব হয় না। আর রাতের বেলা মনোযোগ নষ্টকারী ও আকর্ষণকারী উপলক্ষ কম থাকে।</p>